কর্মসংস্থানের জন্য চাই মেগা প্রকল্প

  • Update Time : ০৬:০৪:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / 64

সহিদুল ইসলাম সুমন

মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন:

এই মুহুর্তে দেশের যতগুলো বড় সামাজিক সমস্যা আছে তার অন্যতম বেকারত্ব। এইবেকারত্বের করাল গ্রাস থেকে এ দেশের যুবসমাজকে মুক্তির জন্য কোটা ভিত্তিক পদ কামানো, মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়স সীমা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে প্রথম আন্দোলন শুরু করে এর ফলে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন কোটা পদ্ধতি বাতিল করেন। কিন্তু ২০২৪ সালে আদালতের এক রায়কে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন আবার পুনরায় উজ্জীবিত হয়। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত আদালত আবার পুনঃবহাল করে। যার ফলে এদেশের ছাত্র জনতা বৈষম্য বিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে করতে বাধ্য হয়, ফলশ্রুতিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে অনেক রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করে এবং এই ধরনের কোটা সংস্কা্রের মতো একটি আন্দোলন থেকে সরকারের পতন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে্ সত্যি কিন্তু রেখে গেছে অনেক দায়ভার। এই দায়ভার থেকে এ জাতিকে মুক্তি দিয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সুফল এদেশের ছাত্র-জনতার কাছে পৌছাতে হলে প্রয়োজন মেগা পরিকল্পনা। কাজে লাগাতে হবে আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ জনশক্তিকে, সৃষ্টি করতে হবে কর্মসংস্থান। বাংলাদেশে সর্বশেষ অর্থাৎ ২০২২সালের জনশুমারি অনযায়ী জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর তালিকা বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আর বিশ্বে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে নবম।অথচ আয়তনের দিক থেকে ৯৪ তম। আয়তনের ছোট একটি দেশে এই জনসংখ্যা বিশাল এতে কোন সন্দেহ নেই। যেখানে উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জনসংখ্যার স্বল্পতা লক্ষ্য করা যায়।যথাযত পরিকল্পনার অভাবে এই স্বল্পতনের দেশে এত জনগষ্ঠীকে অনেকেই সম্পদ হিসেবে না ভেবে একে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে।বাস্তবে একটি দেশের জনগণ হচ্ছে সেই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এবং বাংলাদেশের জন্য এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এই বিশাল জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশই কর্মক্ষম অর্থাৎ বয়সের দিকে তারা কাজের উপযোগী। এরমধ্যে আমাদের জনসংখ্যার ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ১১ কোটিরও বেশি। যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬৫ শতাংশ। অন্যদিকে যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উর্দ্ধে তাদেরকে বলা হয় নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী অর্থাৎ তারা জীবিকার জন্য অন্যের উপর নির্ভর করেন। এমন জঙ্গোষ্ঠীর সংখ্যা ৬ কোটির বেশি যা মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ।

সবমিলিয়ে আমাদের দেশটিতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর চেয়ে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এটিকে বলা হয়, ‘ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট’ বা ‘জনমিতিক লভ্যাংশের বোনাসকাল’। বাংলাদেশ জনমিতিক লভ্যাংশের বোনাস কালের যুগে প্রবেশ করেছে ২০০৫ সালের পরে। তখন থেকে এটি ক্রমাগত উর্দ্ধমুখী, যা এখনো বজায় আছে।তবে এটা বেশিদিন পাওয়া যাবে না, সর্বোচ্চ ২০৩৫ বা ২০৩৭ সাল পর্যন্ত এটা উর্দ্ধমুখী থাকবে। অর্থাৎ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বাড়তে থাকেব। কিন্তু এরপর এটা কমতে থাকবে। ২০৪৭ সালের দিকে গিয়ে দেখা যাবে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর চেয়ে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং জনসংখ্যা কাঠামোয় এখন যে পরিবর্তন যেটা ২০৩৭ সাল পর্যন্ত আমাদের অনকূলে থাকবে। তাই বলা হয়ে থাকে কোন দেশে শ্রমশক্তি বাড়লে সেটা ঐ দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দিতে পারে। এজন্য দরকার হয় শ্রমশক্তিকে অর্থনীতিতে কাজে লাগানো। অর্থনীতিতে তা ব্যবহার করতে পারলেই সেটা ‘লভ্যাংশ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। অথনীতির যে বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি সেটা আরও বাড়ানোটাই হচ্ছে জনমিতিক লভ্যাংশ। এটা তখনই বাড়বে যখন কর্মক্ষম লোকগুলোকে কাজে লাগানো যাবে। এজন্য তাদেরকে শ্রম বাজারে আনতে হবে, চাকরি দিতে হবে, মানসম্মত জীবন-যাপনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ২০৪৭ সালের পরে বাংলাদেশের অবস্থা হবে অনেকটা জাপানের মতো। যেখানে বয়োবৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তখনকার সময়ের জন্য বাংলাদেশকে এখনই প্রস্তুত হতে হবে।অতীতে চীন-জাপানের মতো দেশগুলো তাদের বাড়তি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারলেও বাংলাদেশ সেটা কতটা কাজে লাগাতে পারছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাস্তবে বাংলাদেশ কেন তার বিপুল শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে পারছে না? এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাই বা কী? বাংলাদেশ যে বাড়তি শ্রমশক্তিকে ব্যবহার করতে পারছে না তার মূল কারণ দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থান নেই। নাই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরীর প্রশিক্ষ্ন সেন্টার। যেখানে প্রশিক্ষন গ্রহন করে বিদেশে ভাল চাকুরীর ব্যবস্থা হতে পারতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস-এর হিসেবে দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এছাড়া বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএস-এর তথ্যানুযায়ী দেশে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে যুব বেকারত্বই প্রায় ৮০ শতাংশ।বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ। এই মুহুর্তে ব্যাপক কর্মসংস্থান দরকার, কিন্তু কাজের সুযোগ যথেষ্ট তৈরি হচ্ছে না।এর জন্য তিনটি কারণ আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রথমতঃ

কর্মমুখী শিক্ষায় ঘাটতি। গতানুগতিক শিক্ষা শেষে কাজ পাচ্ছে না তরুণরা। কারণ বাজারে যেসব কাজের চাহিদা, দেশের শিক্ষাপদ্ধতিতে তরুণদের মধ্যে সে দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না। তরুণদের যে শিক্ষাগত যোগ্যতা সেটা চাকরিতে কাজে লাগছে না। সবাই গতানুগতিক অনার্স, মাস্টার্সের পড়াশোনা করছে। অথবা বিবিএ-এমবিএ করছে। বাজারে তো এতো চাহিদা নেই। এজন্য খুব দ্রুত দক্ষতা-ভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষাখাতে বাংলাদেশের বাজেটে সরকারি বরাদ্দ নামমাত্র।শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেট এখন জিডিপির দুই শতাংশের কম।যদিও বলা আছে, ২০৪১ সালে গিয়ে শিক্ষায় জিডিপির চার শতাংশ বিনিয়োগ করবে। কিন্তু সেই চার শতাংশ বিনিয়োগটা ২০৪১ সালে নয় বরং এখনই করতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ

গত দেড় দশকে বৈদেশিক ভুলনীতির কারনে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নতুন শ্রমবাজার আশানুরূপ ভাবে উন্মুক্ত হয়নি বরং সংকোচিত হয়েছে। বেকারদের একটা বড় অংশের গন্তব্য অভিবাসন। কিন্তু সেটার সুযোগ সবার নেই। যারা শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের দক্ষতায়ও ঘাটতি থাকছে। ফলে তারা নিম্নমজুরির কাজ করছেন। এর ফলে রেমিটেন্সও কম আসছে।

তৃতীয়ত:

দেশে উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ উন্নত নয়। ফলে এখানে কোন চাকরিতে না গিয়ে যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তারা যথেষ্ট পুঁজি পাচ্ছেন না এবং ব্যবসার পরিবেশেও ঘাটতি আছে, এই ক্ষেত্রে প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের একটি উক্তির কথা বলা যায় “প্রত্যেক মানুষের উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেন। কিন্তু সমাজ তাকে এমনভাবে মগজধোলাই করে যে তিনি চাকরি করতে বাধ্য হন। সেজন্য বেকারত্ব দেখা দেয়”। বাস্তবে বাংলাদেশের অবস্থা এটাই প্রকৃত সত্য। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কথা সত্য কিন্তু তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। কারণ এখানে বিনিয়োগ নেই। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আশানুরূপ হচ্ছে না। যে কারণে কর্মসংস্থান কম।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ । অথচ প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করে ২২ লাখ তরুণ। এর মধ্যে বিসিএসে মোটামুটি দুই হাজার, বাকি অন্যান্য সব মিলিয়ে দেড় লাখের মতো কর্মসংস্থান হয়। তাহলে বাকিরা কোথায় যাচ্ছেন বা যাবেন? কর্মসংস্থানের মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি খাতে আর ৯৫ শতাংশই বেসরকারি উৎসে। উচ্চশিক্ষা শেষ করে বেশির ভাগই এখন সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করে বছরের পর বছর। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার এখন ১২ শতাংশে পৌঁছেছে। সংখ্যার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেকার বসে আছেন প্রায় আট লাখ নারী-পুরুষ। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি চাকরিতে শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। এবং বেসরকারি খাতে চাকরির বাজার সেভাবে সম্প্রসারিত হয়নি। সরকারি চাকরির তুলনায় বেসরকারি খাতের চাকরি সেভাবে আকর্ষণীয় ও নয়।

এখানে তরুণদের যে দক্ষতা অর্জন হচ্ছে না, কাজ ও পাচ্ছে না এটার দায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। এর দায় রাষ্ট্র কোন ভাবে এড়াতে পারে না।করন গত দেড় দশকে বড় বড় অবকাঠামো নির্মানে ব্যাপক বিনিয়োগ হলেও শিক্ষা-স্বাস্থ্যে তেমন মানসম্মত প্রকল্প গ্রহন করা হয়নি। অথচ বাংলাদেশে এখন যেভাবে তরুণ জনগোষ্ঠী বাড়ছে, সেটা বেশিদিন থাকবে না। অন্যদিকে তরুণদের কাজ কিংবা ব্যবসার সুযোগ না দিতে পারলে সেটা বেকারত্ব আরও বাড়িয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি করবে।ভবিষ্যতের এই ঝুঁকির মোকাবেলায় সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রনয়ন এবং বাজেট নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।প্রয়োজনে কুর্মসংস্থানের জন্য পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প গ্রহন করে তাএগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।তাছাড়া দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন “জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এন এস ডি এ)” নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালিন খোদ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই কিন্তু বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোন বিকাশ ও প্রসার ঘটেনি এবং এদেশের জনগন তার সুফল পায়নি। বর্তমানে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা কমিটির চেয়ারপার্সন হলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভাইস-চেয়ারপারসন হলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গুলোকে সক্রিয় ও কার্যকর করতে হবে।এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে তথা সমাজের তিনটি প্রধান সমস্যা নিরসনে তাঁর যে থ্রি জিরো পরিকল্পনার কথা বলেছেন তার অন্যতম হচ্ছে শূন্য বেকারত্ব। এই বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রফেসর ইউনূসের পরিকল্পনা হলো- (১)উদ্যোক্তা উন্নয়ন- ছোট ব্যবসা ও স্টার্টআপসের জন্য সহায়তা প্রদান, যা নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে।(২) স্কিল ডেভেলপমেন্ট- কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান।(৩) সামাজিক উদ্যোক্তা- সামাজিক সমস্যার সমাধানকারী উদ্যোক্তা তৈরি করা, যারা নতুন ব্যবসার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এই থিওরীকে প্রয়োগ করে ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব যখন সফল হচ্ছে তখন আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। মোদ্দাকথা আমাদের সকল পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য সুন্দর ওদারিদ্র্মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।না হয় এই বিশাল কর্মশক্তি আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা জরুরি, তা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অর্জনের পার্থক্য। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ নব্বইয়ের দশক থেকেই এগিয়ে গিয়েছিল। সেই অগ্রগতির অনেকটা এসেছিল স্কুলশিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে, শিল্পে নারীর কর্ম নিয়োজনের পথ ধরে, ক্ষুদ্রঋণ ও এনজিও কার্যক্রমের সহায়তায়। কিন্তু গত এক দশকে উচ্চতর শিক্ষা, পারিবারিক ভূমিকা, উন্নত কর্মনিয়োজন—এসব ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে যেত হবে।
লেখক : অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।

Email : msislam.sumon@gmail.com

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


কর্মসংস্থানের জন্য চাই মেগা প্রকল্প

Update Time : ০৬:০৪:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন:

এই মুহুর্তে দেশের যতগুলো বড় সামাজিক সমস্যা আছে তার অন্যতম বেকারত্ব। এইবেকারত্বের করাল গ্রাস থেকে এ দেশের যুবসমাজকে মুক্তির জন্য কোটা ভিত্তিক পদ কামানো, মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়স সীমা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে প্রথম আন্দোলন শুরু করে এর ফলে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন কোটা পদ্ধতি বাতিল করেন। কিন্তু ২০২৪ সালে আদালতের এক রায়কে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন আবার পুনরায় উজ্জীবিত হয়। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত আদালত আবার পুনঃবহাল করে। যার ফলে এদেশের ছাত্র জনতা বৈষম্য বিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে করতে বাধ্য হয়, ফলশ্রুতিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে অনেক রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করে এবং এই ধরনের কোটা সংস্কা্রের মতো একটি আন্দোলন থেকে সরকারের পতন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে্ সত্যি কিন্তু রেখে গেছে অনেক দায়ভার। এই দায়ভার থেকে এ জাতিকে মুক্তি দিয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সুফল এদেশের ছাত্র-জনতার কাছে পৌছাতে হলে প্রয়োজন মেগা পরিকল্পনা। কাজে লাগাতে হবে আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ জনশক্তিকে, সৃষ্টি করতে হবে কর্মসংস্থান। বাংলাদেশে সর্বশেষ অর্থাৎ ২০২২সালের জনশুমারি অনযায়ী জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর তালিকা বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। আর বিশ্বে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে নবম।অথচ আয়তনের দিক থেকে ৯৪ তম। আয়তনের ছোট একটি দেশে এই জনসংখ্যা বিশাল এতে কোন সন্দেহ নেই। যেখানে উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জনসংখ্যার স্বল্পতা লক্ষ্য করা যায়।যথাযত পরিকল্পনার অভাবে এই স্বল্পতনের দেশে এত জনগষ্ঠীকে অনেকেই সম্পদ হিসেবে না ভেবে একে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে।বাস্তবে একটি দেশের জনগণ হচ্ছে সেই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এবং বাংলাদেশের জন্য এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এই বিশাল জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশই কর্মক্ষম অর্থাৎ বয়সের দিকে তারা কাজের উপযোগী। এরমধ্যে আমাদের জনসংখ্যার ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ১১ কোটিরও বেশি। যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬৫ শতাংশ। অন্যদিকে যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উর্দ্ধে তাদেরকে বলা হয় নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী অর্থাৎ তারা জীবিকার জন্য অন্যের উপর নির্ভর করেন। এমন জঙ্গোষ্ঠীর সংখ্যা ৬ কোটির বেশি যা মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ।

সবমিলিয়ে আমাদের দেশটিতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর চেয়ে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এটিকে বলা হয়, ‘ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট’ বা ‘জনমিতিক লভ্যাংশের বোনাসকাল’। বাংলাদেশ জনমিতিক লভ্যাংশের বোনাস কালের যুগে প্রবেশ করেছে ২০০৫ সালের পরে। তখন থেকে এটি ক্রমাগত উর্দ্ধমুখী, যা এখনো বজায় আছে।তবে এটা বেশিদিন পাওয়া যাবে না, সর্বোচ্চ ২০৩৫ বা ২০৩৭ সাল পর্যন্ত এটা উর্দ্ধমুখী থাকবে। অর্থাৎ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বাড়তে থাকেব। কিন্তু এরপর এটা কমতে থাকবে। ২০৪৭ সালের দিকে গিয়ে দেখা যাবে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর চেয়ে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং জনসংখ্যা কাঠামোয় এখন যে পরিবর্তন যেটা ২০৩৭ সাল পর্যন্ত আমাদের অনকূলে থাকবে। তাই বলা হয়ে থাকে কোন দেশে শ্রমশক্তি বাড়লে সেটা ঐ দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দিতে পারে। এজন্য দরকার হয় শ্রমশক্তিকে অর্থনীতিতে কাজে লাগানো। অর্থনীতিতে তা ব্যবহার করতে পারলেই সেটা ‘লভ্যাংশ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। অথনীতির যে বিদ্যমান প্রবৃদ্ধি সেটা আরও বাড়ানোটাই হচ্ছে জনমিতিক লভ্যাংশ। এটা তখনই বাড়বে যখন কর্মক্ষম লোকগুলোকে কাজে লাগানো যাবে। এজন্য তাদেরকে শ্রম বাজারে আনতে হবে, চাকরি দিতে হবে, মানসম্মত জীবন-যাপনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। ২০৪৭ সালের পরে বাংলাদেশের অবস্থা হবে অনেকটা জাপানের মতো। যেখানে বয়োবৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তখনকার সময়ের জন্য বাংলাদেশকে এখনই প্রস্তুত হতে হবে।অতীতে চীন-জাপানের মতো দেশগুলো তাদের বাড়তি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারলেও বাংলাদেশ সেটা কতটা কাজে লাগাতে পারছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাস্তবে বাংলাদেশ কেন তার বিপুল শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে পারছে না? এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাই বা কী? বাংলাদেশ যে বাড়তি শ্রমশক্তিকে ব্যবহার করতে পারছে না তার মূল কারণ দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থান নেই। নাই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরীর প্রশিক্ষ্ন সেন্টার। যেখানে প্রশিক্ষন গ্রহন করে বিদেশে ভাল চাকুরীর ব্যবস্থা হতে পারতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস-এর হিসেবে দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এছাড়া বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিআইডিএস-এর তথ্যানুযায়ী দেশে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে যুব বেকারত্বই প্রায় ৮০ শতাংশ।বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করেন অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ। এই মুহুর্তে ব্যাপক কর্মসংস্থান দরকার, কিন্তু কাজের সুযোগ যথেষ্ট তৈরি হচ্ছে না।এর জন্য তিনটি কারণ আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রথমতঃ

কর্মমুখী শিক্ষায় ঘাটতি। গতানুগতিক শিক্ষা শেষে কাজ পাচ্ছে না তরুণরা। কারণ বাজারে যেসব কাজের চাহিদা, দেশের শিক্ষাপদ্ধতিতে তরুণদের মধ্যে সে দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না। তরুণদের যে শিক্ষাগত যোগ্যতা সেটা চাকরিতে কাজে লাগছে না। সবাই গতানুগতিক অনার্স, মাস্টার্সের পড়াশোনা করছে। অথবা বিবিএ-এমবিএ করছে। বাজারে তো এতো চাহিদা নেই। এজন্য খুব দ্রুত দক্ষতা-ভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষাখাতে বাংলাদেশের বাজেটে সরকারি বরাদ্দ নামমাত্র।শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেট এখন জিডিপির দুই শতাংশের কম।যদিও বলা আছে, ২০৪১ সালে গিয়ে শিক্ষায় জিডিপির চার শতাংশ বিনিয়োগ করবে। কিন্তু সেই চার শতাংশ বিনিয়োগটা ২০৪১ সালে নয় বরং এখনই করতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ

গত দেড় দশকে বৈদেশিক ভুলনীতির কারনে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নতুন শ্রমবাজার আশানুরূপ ভাবে উন্মুক্ত হয়নি বরং সংকোচিত হয়েছে। বেকারদের একটা বড় অংশের গন্তব্য অভিবাসন। কিন্তু সেটার সুযোগ সবার নেই। যারা শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের দক্ষতায়ও ঘাটতি থাকছে। ফলে তারা নিম্নমজুরির কাজ করছেন। এর ফলে রেমিটেন্সও কম আসছে।

তৃতীয়ত:

দেশে উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ উন্নত নয়। ফলে এখানে কোন চাকরিতে না গিয়ে যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তারা যথেষ্ট পুঁজি পাচ্ছেন না এবং ব্যবসার পরিবেশেও ঘাটতি আছে, এই ক্ষেত্রে প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের একটি উক্তির কথা বলা যায় “প্রত্যেক মানুষের উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেন। কিন্তু সমাজ তাকে এমনভাবে মগজধোলাই করে যে তিনি চাকরি করতে বাধ্য হন। সেজন্য বেকারত্ব দেখা দেয়”। বাস্তবে বাংলাদেশের অবস্থা এটাই প্রকৃত সত্য। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কথা সত্য কিন্তু তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। কারণ এখানে বিনিয়োগ নেই। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আশানুরূপ হচ্ছে না। যে কারণে কর্মসংস্থান কম।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ । অথচ প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করে ২২ লাখ তরুণ। এর মধ্যে বিসিএসে মোটামুটি দুই হাজার, বাকি অন্যান্য সব মিলিয়ে দেড় লাখের মতো কর্মসংস্থান হয়। তাহলে বাকিরা কোথায় যাচ্ছেন বা যাবেন? কর্মসংস্থানের মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি খাতে আর ৯৫ শতাংশই বেসরকারি উৎসে। উচ্চশিক্ষা শেষ করে বেশির ভাগই এখন সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করে বছরের পর বছর। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার এখন ১২ শতাংশে পৌঁছেছে। সংখ্যার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেকার বসে আছেন প্রায় আট লাখ নারী-পুরুষ। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি চাকরিতে শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। এবং বেসরকারি খাতে চাকরির বাজার সেভাবে সম্প্রসারিত হয়নি। সরকারি চাকরির তুলনায় বেসরকারি খাতের চাকরি সেভাবে আকর্ষণীয় ও নয়।

এখানে তরুণদের যে দক্ষতা অর্জন হচ্ছে না, কাজ ও পাচ্ছে না এটার দায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। এর দায় রাষ্ট্র কোন ভাবে এড়াতে পারে না।করন গত দেড় দশকে বড় বড় অবকাঠামো নির্মানে ব্যাপক বিনিয়োগ হলেও শিক্ষা-স্বাস্থ্যে তেমন মানসম্মত প্রকল্প গ্রহন করা হয়নি। অথচ বাংলাদেশে এখন যেভাবে তরুণ জনগোষ্ঠী বাড়ছে, সেটা বেশিদিন থাকবে না। অন্যদিকে তরুণদের কাজ কিংবা ব্যবসার সুযোগ না দিতে পারলে সেটা বেকারত্ব আরও বাড়িয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি করবে।ভবিষ্যতের এই ঝুঁকির মোকাবেলায় সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রনয়ন এবং বাজেট নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।প্রয়োজনে কুর্মসংস্থানের জন্য পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প গ্রহন করে তাএগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।তাছাড়া দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন “জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এন এস ডি এ)” নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালিন খোদ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই কিন্তু বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোন বিকাশ ও প্রসার ঘটেনি এবং এদেশের জনগন তার সুফল পায়নি। বর্তমানে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা কমিটির চেয়ারপার্সন হলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভাইস-চেয়ারপারসন হলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গুলোকে সক্রিয় ও কার্যকর করতে হবে।এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে তথা সমাজের তিনটি প্রধান সমস্যা নিরসনে তাঁর যে থ্রি জিরো পরিকল্পনার কথা বলেছেন তার অন্যতম হচ্ছে শূন্য বেকারত্ব। এই বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রফেসর ইউনূসের পরিকল্পনা হলো- (১)উদ্যোক্তা উন্নয়ন- ছোট ব্যবসা ও স্টার্টআপসের জন্য সহায়তা প্রদান, যা নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে।(২) স্কিল ডেভেলপমেন্ট- কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান।(৩) সামাজিক উদ্যোক্তা- সামাজিক সমস্যার সমাধানকারী উদ্যোক্তা তৈরি করা, যারা নতুন ব্যবসার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এই থিওরীকে প্রয়োগ করে ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব যখন সফল হচ্ছে তখন আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। মোদ্দাকথা আমাদের সকল পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য সুন্দর ওদারিদ্র্মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।না হয় এই বিশাল কর্মশক্তি আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা জরুরি, তা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অর্জনের পার্থক্য। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ নব্বইয়ের দশক থেকেই এগিয়ে গিয়েছিল। সেই অগ্রগতির অনেকটা এসেছিল স্কুলশিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে, শিল্পে নারীর কর্ম নিয়োজনের পথ ধরে, ক্ষুদ্রঋণ ও এনজিও কার্যক্রমের সহায়তায়। কিন্তু গত এক দশকে উচ্চতর শিক্ষা, পারিবারিক ভূমিকা, উন্নত কর্মনিয়োজন—এসব ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে যেত হবে।
লেখক : অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।

Email : msislam.sumon@gmail.com