শিক্ষক নিয়োগে নিজভূমে পরবাসী জবিয়ানরা
- Update Time : ০৮:৩৭:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০২২
- / 402
মিনহাজুল ইসলাম, জবি :
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নিজ প্রতিষ্ঠানের কৃতি শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় ঠিক এর উল্টো চিত্র৷ শিক্ষক নিয়োগের সময় এখানে জবিয়ানদের অগ্রাধিকারের পরিবর্তে করা হয় বঞ্চিত। বলা যায় শিক্ষক নিয়োগের বেলায় যেন নিজভূমে পরবাসী জবিয়ানরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বহু শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা বিভাগের সর্বোচ্চ ফল, এমনকি প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পাওয়ার পরও নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে থেকেছেন উপেক্ষিত। অথচ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঠিকই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এমন উদাহরণ রয়েছে অনেক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ টি বিভাগ ও দুইটি ইন্সটিটিউটে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে মাত্র ৫৫ জন শিক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৬৭৮ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৮.১১ শতাংশ। এরমধ্যে ১১ টি বিভাগে একজন শিক্ষকও এমন নেই, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। অবশ্য এই ১১ টি বিভাগের মধ্যে কয়েকটি বিভাগ অনেকটা নবীন হলেও বাকি বিভাগগুলো থেকে অনেকগুলো ব্যাচ পাশ করে বের হয়েছে। তবুও সেসব ব্যাচ থেকে এখনও জবির কেউ শিক্ষক হতে পারেননি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৭ বছর পার করে ১৮ তে পা দিলেও প্রায় এই দেড়যুগে নিজ ক্যাম্পাসের মাত্র ৫৫ জন শিক্ষক নিয়োগ পাওয়াটা নিশ্চয়ই অতি নগণ্য। অথচ, খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এরচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বেশিরভাগ বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থীরাই হতে পারেননি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অথচ, সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী সফলতার স্বাক্ষর রেখে নিয়োগ পেয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সিজিপিএ শর্তপূরণসহ বিভাগের সর্বোচ্চ ফল নিয়েও অনেক জবি শিক্ষার্থী হতে পারেননি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অথচ তার চেয়ে কম সিজিপিএ নিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী চাকরি পেয়েছেন তারই বিভাগে। এভাবেই দিন দিন বঞ্চিত হয়ে আসছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী। ফলে, স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে তাদের।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, “শিক্ষক নিয়োগের বেলায় নিজ ক্যাম্পাসেই আমাদের প্রতি অবিচার করা হয়। একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেশি সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে।”
দর্শন বিভাগের অপর শিক্ষার্থী জানান, “সাধারণত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ শিক্ষকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাসপ্রীতি তো রয়েছেই; পাশাপাশি আরেকটি বিষয় এখানে কাজ করে। সেটা হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নিয়মে অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাসে উপস্থিতি ও মিডটার্ম পরীক্ষা মিলে ৪০ নম্বর নির্ধারিত। এখানে সহজেই একজন মনোযোগী শিক্ষার্থী ৩০/৩২ থেকে ৩৪/৩৫ পর্যন্ত নম্বর তুলতে পারেন। আর, ফাইনাল পরীক্ষায় ৬০ এর মধ্যে সহজেই ৪০-৪৫ তুলতে পারেন। এতে করে তার সিজিপিএ ৩.৭৫ করা সহজ হয়। আর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগেই শিক্ষক হওয়ার জন্য ন্যূনতম ৩.৭৫ সিজিপিএ প্রয়োজন হয়। ঢাবির এ নিয়মের বিপরীতে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগে ক্লাসে উপস্থিতি ও মিডটার্মের ওপর ৩০ নম্বর নির্ধারিত। তাই অনেক ভালো ফল করতে গেলে ৭০ নম্বরের লিখিত ফাইনাল পরীক্ষায় অনেক বেশি সংগ্রাম করতে হয়। এতে করে জবির শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তবুও এত প্রতিকূলতা জয় করে যারা বিভাগে অনেক ভালো ফল করেন, তাদের অধিকাংশই আবার শিক্ষক নিয়োগের বেলায় হন বঞ্চিত।”
এসব বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সুমাইয়া সোমা বলেন, “জবিতে শিক্ষক নিয়োগে এক ধরণের সিন্ডিকেট রয়েছে। এর ফলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বঞ্চিত হতে হয় জবিয়ানদের। এসব অনিয়ম বন্ধ করে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে হবে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল হোসেন বলেন, “শিক্ষক নিয়োগে জবি শিক্ষার্থীদের ভালো করার বিষয়ে আমরা খেয়াল রাখছি।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষধ্যক্ষ (ট্রেজারার) অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে তো জবির শিক্ষার্থীরা ভালো করছে। একজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে গেলে অনেক বিষয় দেখতে হয়। সেগুলো দেখেই নিয়োগ দেয়া হয়।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, “সর্বশেষ নিয়োগগুলোয় জবি থেকে অনেকগুলো নিয়েছি। আমার শিক্ষার্থীদের যদি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে না নেই, তাহলে অন্যরা তো তাদের যথাযথ মূল্যায়ন নাও করতে পারে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবজায়গাতেই ভালো করছে। তাই আমি উপাচার্য হওয়ার পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করছি।”