কক্সবাজারে পর্যটন বিকাশে গণমাধ্যমের প্রভাব শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত

  • আপডেটের সময়: ১২:১৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • / 88

এরফান হোছাইন:

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিরাপত্তা সংকট, হোটেল ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও রাজনৈতিক চাঁদাবাজি বড় বাধা সৃষ্টি করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা।

একইসাথে এই নেতিবাচক চিত্র পাল্টে দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের আরও বেশি ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

অনলাইন গণমাধ্যম ‘নিউজ ভিশন’-এর ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৯ অক্টোবর (বুধবার) কক্সবাজার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘পর্যটন শিল্পের বিকাশে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে আসে।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি বলেন, পর্যটকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণই পর্যটকদের আগ্রহ কমানোর মূল কারণ। তাঁর মতে, অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক ‘গলাকাটা’ হোটেল ভাড়া, ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিম রুম সংকট তৈরি করা এবং সৈকতে ফিশ ফ্রাইয়ের নামে পচা ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন—এসবই পর্যটন শহরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। একইসঙ্গে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, ভোক্তা অধিকার, পৌরসভা, কউক সহ সকল দপ্তরের সমন্বয়ে আন্তরিকতার সাথে কক্সবাজারের জন্যে কাজ করার আহবান জানান।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দপ্তরের উচিত পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত থাকা এবং সৈকতকে পরিচ্ছন্ন রাখা। এই সংকট নিরসনে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকাকে ‘অন্যতম’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এদিকে, কক্সবাজার সদর সার্কেল অফিসার আহমেদ পেয়ার তার বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, “ছিনতাইকারী বা অপরাধী গ্রেফতার হয়, কিন্তু কিছুদিন পরই জামিনে জেল থেকে বের হয়ে যায়।” এই আইনি দুর্বলতা অপরাধ দমনে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।

কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শহীদুজ্জামান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, এই অঞ্চলের প্রকৃতি ‘বিশ্বের চেয়েও আকর্ষণীয় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ’ হলেও, পরিকল্পিত উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং সচেতনতার অভাবের কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সাবেক সাংসদ দুটি গুরুতর নিরাপত্তা সংকটের দিকে আলোকপাত করেন: প্রথমত, কক্সবাজারে দেড় মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গার উপস্থিতি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে; দ্বিতীয়ত, সৈকতে টোকাই, ছিনতাইকারী,ভবঘুরে, হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সীমাহীন উৎপাতের কারণে একজন পর্যটক পাঁচ মিনিটও নির্বিঘ্নে সময় কাটাতে পারেন না—আর এই বিশৃঙ্খলাই মূলত বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ হারানোর মূল কারণ। তিনি আরও কঠোর সমালোচনা করে বলেন, রাজনীতিবিদরা যদি জনসেবা বাদ দিয়ে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন, তবে কখনোই পর্যটন শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়, কারণ অনেকেই নিজ প্রভাব খাটিয়ে পর্যটন এলাকায় চাঁদাবাজি করে এই শিল্পের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে নিউজ ভিশনের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকাকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা ছিল, আছে ও থাকবে। পর্যটন বিকাশে নিউজ ভিশন সবসময় পজিটিভ ভূমিকা নিয়ে এগোচ্ছে ও সামনে এ নিয়ে কাজ করবে।”

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সিআইডির পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আশেক উল্লাহ, কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক এস্তাফিজুর রহমান, জেলা কৃষকদলের সভাপতি এস এম গিয়াস উদ্দিন সহ এনজিও কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

বক্তারা সকলে একমত হন যে, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বিশ্বমানের করে তুলতে সকল অংশীজনকে একযোগে কাজ করতে হবে এবং নেতিবাচক খবর পরিবেশনের পাশাপাশি পর্যটন-বান্ধব ইতিবাচক উদ্যোগগুলো তুলে ধরে গণমাধ্যমকে সেতু বন্ধনের কাজ করতে হবে।

ট্যাগ :

অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন


কক্সবাজারে পর্যটন বিকাশে গণমাধ্যমের প্রভাব শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত

আপডেটের সময়: ১২:১৫:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

এরফান হোছাইন:

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিরাপত্তা সংকট, হোটেল ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও রাজনৈতিক চাঁদাবাজি বড় বাধা সৃষ্টি করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা।

একইসাথে এই নেতিবাচক চিত্র পাল্টে দিতে গণমাধ্যমকর্মীদের আরও বেশি ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

অনলাইন গণমাধ্যম ‘নিউজ ভিশন’-এর ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৯ অক্টোবর (বুধবার) কক্সবাজার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘পর্যটন শিল্পের বিকাশে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে আসে।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি বলেন, পর্যটকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণই পর্যটকদের আগ্রহ কমানোর মূল কারণ। তাঁর মতে, অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক ‘গলাকাটা’ হোটেল ভাড়া, ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিম রুম সংকট তৈরি করা এবং সৈকতে ফিশ ফ্রাইয়ের নামে পচা ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন—এসবই পর্যটন শহরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। একইসঙ্গে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, ভোক্তা অধিকার, পৌরসভা, কউক সহ সকল দপ্তরের সমন্বয়ে আন্তরিকতার সাথে কক্সবাজারের জন্যে কাজ করার আহবান জানান।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দপ্তরের উচিত পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত থাকা এবং সৈকতকে পরিচ্ছন্ন রাখা। এই সংকট নিরসনে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকাকে ‘অন্যতম’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এদিকে, কক্সবাজার সদর সার্কেল অফিসার আহমেদ পেয়ার তার বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, “ছিনতাইকারী বা অপরাধী গ্রেফতার হয়, কিন্তু কিছুদিন পরই জামিনে জেল থেকে বের হয়ে যায়।” এই আইনি দুর্বলতা অপরাধ দমনে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।

কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শহীদুজ্জামান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, এই অঞ্চলের প্রকৃতি ‘বিশ্বের চেয়েও আকর্ষণীয় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ’ হলেও, পরিকল্পিত উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং সচেতনতার অভাবের কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সাবেক সাংসদ দুটি গুরুতর নিরাপত্তা সংকটের দিকে আলোকপাত করেন: প্রথমত, কক্সবাজারে দেড় মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গার উপস্থিতি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে; দ্বিতীয়ত, সৈকতে টোকাই, ছিনতাইকারী,ভবঘুরে, হকার ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সীমাহীন উৎপাতের কারণে একজন পর্যটক পাঁচ মিনিটও নির্বিঘ্নে সময় কাটাতে পারেন না—আর এই বিশৃঙ্খলাই মূলত বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ হারানোর মূল কারণ। তিনি আরও কঠোর সমালোচনা করে বলেন, রাজনীতিবিদরা যদি জনসেবা বাদ দিয়ে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন, তবে কখনোই পর্যটন শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়, কারণ অনেকেই নিজ প্রভাব খাটিয়ে পর্যটন এলাকায় চাঁদাবাজি করে এই শিল্পের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে নিউজ ভিশনের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকাকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা ছিল, আছে ও থাকবে। পর্যটন বিকাশে নিউজ ভিশন সবসময় পজিটিভ ভূমিকা নিয়ে এগোচ্ছে ও সামনে এ নিয়ে কাজ করবে।”

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সিআইডির পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আশেক উল্লাহ, কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক এস্তাফিজুর রহমান, জেলা কৃষকদলের সভাপতি এস এম গিয়াস উদ্দিন সহ এনজিও কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

বক্তারা সকলে একমত হন যে, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বিশ্বমানের করে তুলতে সকল অংশীজনকে একযোগে কাজ করতে হবে এবং নেতিবাচক খবর পরিবেশনের পাশাপাশি পর্যটন-বান্ধব ইতিবাচক উদ্যোগগুলো তুলে ধরে গণমাধ্যমকে সেতু বন্ধনের কাজ করতে হবে।