তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা খায়রুল বাসার

  • Update Time : ০৬:২২:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১
  • / 210

বিনোদন ডেস্ক:

তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা এখন খায়রুল বাসার। মূকাভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। খায়রুল বাসার এখন তরুণ প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল এবং সম্ভাবনাময়। যে কোন চরিত্রে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা তাকে করে তুলেছে অনন্য। তিনিও অভিনয়টাকেই আঁকড়ে ধরেছেন সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে…

২০১১ সাল থেকে মূকাভিনয়ে নিজের অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে যে পথচলার শুরুটা তিনি করেছিলেন ২০২১ সালে এসে মাধ্যম বা ধারা বদল হলেও নাটক, সিনেমা বা ওটিটিতে সেই দক্ষতা, প্রতিভা এবং পরিশ্রমের জোরেই এই সময়ে আমাদের দেশের অন্যতম আলোচিত এবং প্রশংসিত অভিনেতা তিনি। বলছি খায়রুল বাসারের কথা। বর্তমান প্রজন্মের এই জনপ্রিয় অভিনেতা আবারো আলোচনায় তার দুটি সাম্প্রতিক কাজ ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’ এবং অন্যটি ‘মহানগর’ ওয়েব সিরিজে দূর্দান্ত অভিনয়শৈলী প্রদর্শনের জন্য।

একটি সংগঠনের কোনো এক আয়োজনে ২০১০ সালের দিকে প্রথমবার খায়রুল বাসার তার ক্যাম্পাসের সিনিয়র মীর লোকমানের মূকাভিনয় দেখার সুযোগ পান। তখন থেকেই প্রচন্ড মুগ্ধতা এবং ভালোলাগা কাজ করে এই মূকাভিনয়ের প্রতি। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের সেই সিনিয়র ভাইয়ের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তো হয়ই এমনকি নিজের অভিনয় গুরু হিসেবেও তাকে নিয়ে ২০১১ সালে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন’ নামে মূকাভিনয় সংগঠন নিয়ে দুজনে যাত্রা শুরু করেন। তখন থেকেই নিয়মিত অভিনয় চর্চা শুরু হয় তার।

May be an image of 1 person, beard, outerwear and sky

তারপর দেশে ও দেশের বাইরেও মূকাভিনয় নিয়ে অবিরাম ছুটেছেন খায়রুল। ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের এই সময়টাতে প্রায় ৪০০ শো করেছিলেন (স্ট্রিট শো এবং স্টেজ শো মিলিয়ে)৷ মূকাভিনয় দল নিয়ে দেশের বাইরেও গিয়েছেন তারা। সেখান থেকেও অভিনয়ের জন্য পুরস্কার এবং প্রশংসা পেয়েছেন। একটি সাক্ষাৎকারে খায়রুল বাসার জানিয়েছেন- ‘মূলত মঞ্চে উঠে প্রতি মুহূর্তে মূকাভিনয়ের ইলুশন তৈরি করে যাওয়ার চেষ্টা এবং দর্শকের মুগ্ধতা দেখেই আমার মনে হয়েছে, আমি এটাই করতে চাই। ধীরে ধীরে আমার বিশ্বাস হতে শুরু করলো যে, আমি অভিনেতা। তখনই অভিনয় করার প্রতি এক ধরনের টান অনুভব করেছি।’

২০১৭ সাল পর্যন্ত খায়রুল সক্রিয় ছিলেন মূকাভিনয়ে৷ পরবর্তীতে ভিজ্যুয়াল কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় মূকাভিনয়ে সময় না দিতে পারাটা এখনো এক ধরনের কষ্টের অনুভূতি তার কাছে। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সাথে পরিচয়ের সুত্রটা প্রজন্ম টকিজের মাধ্যমে। এই প্ল্যাটফর্মে ১০টা শর্টফিল্ম বানানো হয়৷ যার একটাতে অভিনয় করেন খায়রুল বাসার। সালেহ সোবহান অনীমের পরিচালনায় সেই শর্টফিল্মের নাম ‘পুনরাবৃত্তি’।

তবে তাকে লাইমলাইটে আসার সুযোগটা করে দিয়েছিলেন শাওকী সায়েদ। একটি বিজ্ঞাপনে কাজের সুত্রে পরিচয়। তবে খায়রুল বাসারের ভেতরের পটেনশিয়ালটি বুঝতে হয়তো সময় লাগেনি তার। তাই ভরসা করে এই কাজটিতে সুযোগ করে দেন। এবং খায়রুল বাসার নিরাশ করেননি তাকে। প্রথম কাজ হলেও অভিনয় প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন তিনি সুনিপুণ ভাবেই। এরপর শাওকী সায়েদের ‘কথা হবে তো?’ নাটকে আবারো অসাধারণ অভিনয় করে মোটামুটি আলোচনায় আসেন তিনি। অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় গতবছর ‘তোমার পাশে হাঁটতে দিও’ এবং এই বছর ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’ নাটক দুটিও তাকে চলার পথে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যায়।

May be a close-up of 1 person, hair, beard, outerwear, tree and outdoors

ক্লোজআপের আয়োজনে ‘তোমার পাশে হাঁটতে দিও’ বা ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’ নাটকগুলো যারা দেখেছেন, মূল চরিত্রে তার অভিনয়ের প্রশংসা করেননি এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। গল্প, নির্মান, অভিনয় নাটক দুটিকে ভীষণ জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলো। ব্যাপক প্রচারণার কারনে অল্প সময়েই পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন খায়রুল বাসার।

এখন পর্যন্ত তিনটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন খায়রুল বাসার। প্রথম চলচ্চিত্র  ‘ক্যাম্পাস ক্লাইমেক্স’। পরিচালক ছিলেন জিত দে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শ্যুটিং করা হয় এই সিনেমার। ক্যাম্পাস লাইফের নানা বৈচিত্র্য আমেজ উৎসব নানা সংকট এই গল্পে তুলে আনা হয়েছে। ছাত্র জীবনে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও এই চলচ্চিত্র তৈরির সময় অভিনেতা হিসেবে কোন আপোষ করেননি তিনি।

তবে ২০১৯ সালে অ্যান্থোলজি সিনেমা  ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’ দিয়েই আক্ষরিক অর্থে অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। এই সিনেমায় তানভীর আহসানের পরিচালনায় ‘আকাশের পোষা পাখিরা’ দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শারলিন ফারজানা এবং ইমতিয়াজ বর্ষণের পাশাপাশি পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে খায়রুল বাসার নজরে পড়েন সবার। ভিন্নধর্মী কনটেন্ট নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা প্রশংসা কুড়ায় সিনেমাবোদ্ধাদের। ‘পুনরাবৃত্তি’, ‘পোস্টার’ আর ‘মাকড়শা’ নামে তিনটি শর্টফিল্মেও অভিনয় করেন তিনি।

May be a black-and-white image of 1 person and beard

তবে ২০২১ সালে এসে বদলে যাওয়া বিনোদনের মাধ্যম ওটিটি আমাদের দেশে জনপ্রিয় এবং আলোচিত হয়ে উঠলে নির্মাতারা এই মাধ্যমে দেশের জনপ্রিয় এবং আলোচিত তারকাদের পাশাপাশি নতুন এবং প্রতিভাবান শিল্পী কলাকুশলীদের নিয়ে ব্যতিক্রমী গল্পে কাজ শুরু করেন। এই সমীকরনে যে কয়জন নতুন প্রতিভাবান অভিনেতা আমরা পেয়েছি তাদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত নাম খায়রুল বাসার। ‘একাত্তর’, ‘চরের মাষ্টার’, ‘বিলাপ’, ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’ একের পর এক ভিন্নধর্মী গল্পে ব্যতিক্রমী চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন তিনি।

যেকোনো চরিত্রে মানিয়ে যাবার গুন তাকে আগামীর অন্যতম সেরা দক্ষ অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। সম্প্রতি ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া আমাদের দেশীয় ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’- এ মোশাররফ করিম, জাকিয়া বারী মম, শ্যামল মাওলা, মোস্তাফিজুর ইমরানের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। আশফাক নিপুনের পরিচালনায় এই সিরিজটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা পেয়েছে। প্রতিটি চরিত্রে সকলেই দিয়েছেন তাদের সবটুকু। ফলও মিলেছে হাতেনাতে, প্রত্যেকেই ভক্তদের প্রশংসা পাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এক সাক্ষাৎকারে খায়রুল বাসার জানিয়েছেন আমাদের দেশে তার প্রিয় অভিনেতা হলেন, আসাদুজ্জামান নূর, হুমায়ুন ফরীদি, আহমেদ রুবেল, শহীদুজ্জামান সেলিম, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, শ্যামল মাওলা, মনোজ প্রামাণিক, সোহেল মণ্ডল। তাঁদের দেখে অভিনয় শেখেন তিনি। তবে আমাদের চারপাশের মানুষদের নিবিড়ভাবে দেখতে পারলে সবচেয়ে ভালো অভিনয় শেখা যায় বলেই ধারনা তার।

সম্ভাবনাময় অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর এখন একের পর এক প্রজেক্টে অভিনয় করছেন তিনি। যদিও এক্ষেত্রে তিনি বেশ বেছে বেছে কাজ করেন। তারপরও ঈদের বেশকটি নাটকে দেখা যাবে তাকে।

May be an image of 1 person

মেহজাবিনের সাথে ‘চুমকি চলেছে…’ নাটকটি নিয়ে ইতিমধ্য আলোচনায় তিনি কারন প্রথমবারের মতো মেহজাবিনের সাথে জুটি বাধলেন এই নাটকের মাধ্যমে। এছাড়া চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় দুটি একক নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন খায়রুল। ‘বড় ভাবী’ নাটকে তানভীন সুইটির দেবর হিসেবে তাকে দেখা যাবে আবার ‘অন্ধ জলছবি’ নাটকে দেশসেরা মডেল মৌ এর সাথেও অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়া পুরোপুরি এক ভিন্ন গল্পের ‘সহজ সুন্দর’ নাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন। আপকামিং দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’র জন্য মিজানুর রহমান আরিয়ান নির্মান করেছেন ওয়েবফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’। এই ফিল্মে বেশকিছু তারকার সাথে দেখা যাবে খায়রুল বাসারকেও।

অভিনয় নিয়ে পরিকল্পনা কি? জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে আমার জীবনে কিছু দায়বদ্ধতার পর একমাত্র ভালোবাসা অভিনয়ের প্রতি। এই ভালোবাসায় আমি দিনরাত ডুবে থাকি এবং থাকতে চাই। অভিনয়ে প্রতিটা কাজেই প্রচন্ড ভালোবাসা নিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছি। তবে সব কাজেই কিছু আফসোস থেকে যায়। তারপর আবার নতুন নতুন কাজের প্রেমে পড়ি। এভাবেই অভিনয় নিয়েই আমি আমার সামনের পথ চলতে চাই। এছাড়া আমার কোনো পরিকল্পনা নেই।

পরিকল্পনা থাকুক বা নাই থাকুক, নিজের অভিনয় প্রতিভা, পরিশ্রম এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে খায়রুল বাসার সামনের দিনগুলোতে ব্যতিক্রমী চরিত্রে আমাদের মুগ্ধ করে যাবেন বারবার, এটাই কামনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগে পড়াশোনা করেছেন খায়রুল। সংগীতে পড়ালেখা শেষ করলেও গানের মানুষ না হয়ে খায়রুল হয়েছেন অভিনয়ের মানুষ। অভিনয়ের শুরুটা ২০১১ সালে মূকাভিনয় দিয়ে। এখন তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা খায়রুল বাসার।

Please Share This Post in Your Social Media


তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা খায়রুল বাসার

Update Time : ০৬:২২:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

বিনোদন ডেস্ক:

তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা এখন খায়রুল বাসার। মূকাভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। খায়রুল বাসার এখন তরুণ প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল এবং সম্ভাবনাময়। যে কোন চরিত্রে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা তাকে করে তুলেছে অনন্য। তিনিও অভিনয়টাকেই আঁকড়ে ধরেছেন সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে…

২০১১ সাল থেকে মূকাভিনয়ে নিজের অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে যে পথচলার শুরুটা তিনি করেছিলেন ২০২১ সালে এসে মাধ্যম বা ধারা বদল হলেও নাটক, সিনেমা বা ওটিটিতে সেই দক্ষতা, প্রতিভা এবং পরিশ্রমের জোরেই এই সময়ে আমাদের দেশের অন্যতম আলোচিত এবং প্রশংসিত অভিনেতা তিনি। বলছি খায়রুল বাসারের কথা। বর্তমান প্রজন্মের এই জনপ্রিয় অভিনেতা আবারো আলোচনায় তার দুটি সাম্প্রতিক কাজ ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’ এবং অন্যটি ‘মহানগর’ ওয়েব সিরিজে দূর্দান্ত অভিনয়শৈলী প্রদর্শনের জন্য।

একটি সংগঠনের কোনো এক আয়োজনে ২০১০ সালের দিকে প্রথমবার খায়রুল বাসার তার ক্যাম্পাসের সিনিয়র মীর লোকমানের মূকাভিনয় দেখার সুযোগ পান। তখন থেকেই প্রচন্ড মুগ্ধতা এবং ভালোলাগা কাজ করে এই মূকাভিনয়ের প্রতি। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের সেই সিনিয়র ভাইয়ের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তো হয়ই এমনকি নিজের অভিনয় গুরু হিসেবেও তাকে নিয়ে ২০১১ সালে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন’ নামে মূকাভিনয় সংগঠন নিয়ে দুজনে যাত্রা শুরু করেন। তখন থেকেই নিয়মিত অভিনয় চর্চা শুরু হয় তার।

May be an image of 1 person, beard, outerwear and sky

তারপর দেশে ও দেশের বাইরেও মূকাভিনয় নিয়ে অবিরাম ছুটেছেন খায়রুল। ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের এই সময়টাতে প্রায় ৪০০ শো করেছিলেন (স্ট্রিট শো এবং স্টেজ শো মিলিয়ে)৷ মূকাভিনয় দল নিয়ে দেশের বাইরেও গিয়েছেন তারা। সেখান থেকেও অভিনয়ের জন্য পুরস্কার এবং প্রশংসা পেয়েছেন। একটি সাক্ষাৎকারে খায়রুল বাসার জানিয়েছেন- ‘মূলত মঞ্চে উঠে প্রতি মুহূর্তে মূকাভিনয়ের ইলুশন তৈরি করে যাওয়ার চেষ্টা এবং দর্শকের মুগ্ধতা দেখেই আমার মনে হয়েছে, আমি এটাই করতে চাই। ধীরে ধীরে আমার বিশ্বাস হতে শুরু করলো যে, আমি অভিনেতা। তখনই অভিনয় করার প্রতি এক ধরনের টান অনুভব করেছি।’

২০১৭ সাল পর্যন্ত খায়রুল সক্রিয় ছিলেন মূকাভিনয়ে৷ পরবর্তীতে ভিজ্যুয়াল কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় মূকাভিনয়ে সময় না দিতে পারাটা এখনো এক ধরনের কষ্টের অনুভূতি তার কাছে। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সাথে পরিচয়ের সুত্রটা প্রজন্ম টকিজের মাধ্যমে। এই প্ল্যাটফর্মে ১০টা শর্টফিল্ম বানানো হয়৷ যার একটাতে অভিনয় করেন খায়রুল বাসার। সালেহ সোবহান অনীমের পরিচালনায় সেই শর্টফিল্মের নাম ‘পুনরাবৃত্তি’।

তবে তাকে লাইমলাইটে আসার সুযোগটা করে দিয়েছিলেন শাওকী সায়েদ। একটি বিজ্ঞাপনে কাজের সুত্রে পরিচয়। তবে খায়রুল বাসারের ভেতরের পটেনশিয়ালটি বুঝতে হয়তো সময় লাগেনি তার। তাই ভরসা করে এই কাজটিতে সুযোগ করে দেন। এবং খায়রুল বাসার নিরাশ করেননি তাকে। প্রথম কাজ হলেও অভিনয় প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন তিনি সুনিপুণ ভাবেই। এরপর শাওকী সায়েদের ‘কথা হবে তো?’ নাটকে আবারো অসাধারণ অভিনয় করে মোটামুটি আলোচনায় আসেন তিনি। অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় গতবছর ‘তোমার পাশে হাঁটতে দিও’ এবং এই বছর ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’ নাটক দুটিও তাকে চলার পথে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যায়।

May be a close-up of 1 person, hair, beard, outerwear, tree and outdoors

ক্লোজআপের আয়োজনে ‘তোমার পাশে হাঁটতে দিও’ বা ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’ নাটকগুলো যারা দেখেছেন, মূল চরিত্রে তার অভিনয়ের প্রশংসা করেননি এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। গল্প, নির্মান, অভিনয় নাটক দুটিকে ভীষণ জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলো। ব্যাপক প্রচারণার কারনে অল্প সময়েই পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন খায়রুল বাসার।

এখন পর্যন্ত তিনটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন খায়রুল বাসার। প্রথম চলচ্চিত্র  ‘ক্যাম্পাস ক্লাইমেক্স’। পরিচালক ছিলেন জিত দে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শ্যুটিং করা হয় এই সিনেমার। ক্যাম্পাস লাইফের নানা বৈচিত্র্য আমেজ উৎসব নানা সংকট এই গল্পে তুলে আনা হয়েছে। ছাত্র জীবনে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও এই চলচ্চিত্র তৈরির সময় অভিনেতা হিসেবে কোন আপোষ করেননি তিনি।

তবে ২০১৯ সালে অ্যান্থোলজি সিনেমা  ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’ দিয়েই আক্ষরিক অর্থে অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। এই সিনেমায় তানভীর আহসানের পরিচালনায় ‘আকাশের পোষা পাখিরা’ দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শারলিন ফারজানা এবং ইমতিয়াজ বর্ষণের পাশাপাশি পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে খায়রুল বাসার নজরে পড়েন সবার। ভিন্নধর্মী কনটেন্ট নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা প্রশংসা কুড়ায় সিনেমাবোদ্ধাদের। ‘পুনরাবৃত্তি’, ‘পোস্টার’ আর ‘মাকড়শা’ নামে তিনটি শর্টফিল্মেও অভিনয় করেন তিনি।

May be a black-and-white image of 1 person and beard

তবে ২০২১ সালে এসে বদলে যাওয়া বিনোদনের মাধ্যম ওটিটি আমাদের দেশে জনপ্রিয় এবং আলোচিত হয়ে উঠলে নির্মাতারা এই মাধ্যমে দেশের জনপ্রিয় এবং আলোচিত তারকাদের পাশাপাশি নতুন এবং প্রতিভাবান শিল্পী কলাকুশলীদের নিয়ে ব্যতিক্রমী গল্পে কাজ শুরু করেন। এই সমীকরনে যে কয়জন নতুন প্রতিভাবান অভিনেতা আমরা পেয়েছি তাদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত নাম খায়রুল বাসার। ‘একাত্তর’, ‘চরের মাষ্টার’, ‘বিলাপ’, ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’ একের পর এক ভিন্নধর্মী গল্পে ব্যতিক্রমী চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন তিনি।

যেকোনো চরিত্রে মানিয়ে যাবার গুন তাকে আগামীর অন্যতম সেরা দক্ষ অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। সম্প্রতি ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া আমাদের দেশীয় ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’- এ মোশাররফ করিম, জাকিয়া বারী মম, শ্যামল মাওলা, মোস্তাফিজুর ইমরানের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। আশফাক নিপুনের পরিচালনায় এই সিরিজটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা পেয়েছে। প্রতিটি চরিত্রে সকলেই দিয়েছেন তাদের সবটুকু। ফলও মিলেছে হাতেনাতে, প্রত্যেকেই ভক্তদের প্রশংসা পাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এক সাক্ষাৎকারে খায়রুল বাসার জানিয়েছেন আমাদের দেশে তার প্রিয় অভিনেতা হলেন, আসাদুজ্জামান নূর, হুমায়ুন ফরীদি, আহমেদ রুবেল, শহীদুজ্জামান সেলিম, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, শ্যামল মাওলা, মনোজ প্রামাণিক, সোহেল মণ্ডল। তাঁদের দেখে অভিনয় শেখেন তিনি। তবে আমাদের চারপাশের মানুষদের নিবিড়ভাবে দেখতে পারলে সবচেয়ে ভালো অভিনয় শেখা যায় বলেই ধারনা তার।

সম্ভাবনাময় অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর এখন একের পর এক প্রজেক্টে অভিনয় করছেন তিনি। যদিও এক্ষেত্রে তিনি বেশ বেছে বেছে কাজ করেন। তারপরও ঈদের বেশকটি নাটকে দেখা যাবে তাকে।

May be an image of 1 person

মেহজাবিনের সাথে ‘চুমকি চলেছে…’ নাটকটি নিয়ে ইতিমধ্য আলোচনায় তিনি কারন প্রথমবারের মতো মেহজাবিনের সাথে জুটি বাধলেন এই নাটকের মাধ্যমে। এছাড়া চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় দুটি একক নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন খায়রুল। ‘বড় ভাবী’ নাটকে তানভীন সুইটির দেবর হিসেবে তাকে দেখা যাবে আবার ‘অন্ধ জলছবি’ নাটকে দেশসেরা মডেল মৌ এর সাথেও অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়া পুরোপুরি এক ভিন্ন গল্পের ‘সহজ সুন্দর’ নাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন। আপকামিং দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’র জন্য মিজানুর রহমান আরিয়ান নির্মান করেছেন ওয়েবফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’। এই ফিল্মে বেশকিছু তারকার সাথে দেখা যাবে খায়রুল বাসারকেও।

অভিনয় নিয়ে পরিকল্পনা কি? জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে আমার জীবনে কিছু দায়বদ্ধতার পর একমাত্র ভালোবাসা অভিনয়ের প্রতি। এই ভালোবাসায় আমি দিনরাত ডুবে থাকি এবং থাকতে চাই। অভিনয়ে প্রতিটা কাজেই প্রচন্ড ভালোবাসা নিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছি। তবে সব কাজেই কিছু আফসোস থেকে যায়। তারপর আবার নতুন নতুন কাজের প্রেমে পড়ি। এভাবেই অভিনয় নিয়েই আমি আমার সামনের পথ চলতে চাই। এছাড়া আমার কোনো পরিকল্পনা নেই।

পরিকল্পনা থাকুক বা নাই থাকুক, নিজের অভিনয় প্রতিভা, পরিশ্রম এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে খায়রুল বাসার সামনের দিনগুলোতে ব্যতিক্রমী চরিত্রে আমাদের মুগ্ধ করে যাবেন বারবার, এটাই কামনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগে পড়াশোনা করেছেন খায়রুল। সংগীতে পড়ালেখা শেষ করলেও গানের মানুষ না হয়ে খায়রুল হয়েছেন অভিনয়ের মানুষ। অভিনয়ের শুরুটা ২০১১ সালে মূকাভিনয় দিয়ে। এখন তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা খায়রুল বাসার।