ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিধিমালা হালনাগাদ ; প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে নিয়োগ

- Update Time : ০৮:১৬:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
- / 59
জাননাহ, বিশেষ প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এতে নির্বাচনের লক্ষ্য, অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন-কে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ডাকসু সংবিধানের ৮(এফ) ধারার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এ নিয়োগ প্রদান করেন।
সোমবার (১৬ জুন ২০২৫) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়োগ অনুমোদন করা হয়।
নির্বাচনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
নতুন বিধিমালায় ছাত্র সংসদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে-
(ক) স্বাধীনতা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করা।
(খ) বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের ইতিহাসে সংঘটিত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করা।
(গ) শিক্ষার্থীদের পাঠ্য ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ উৎকর্ষ অর্জনে সহায়তা করা।
সদস্যপদ, ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হতে হবে। যিনি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক, মাস্টার্স বা এম.ফিল. প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত এবং কোনো আবাসিক হলে অবস্থানরত বা সংযুক্ত।
সান্ধ্যকালীন কোর্স, পেশাদার বা এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট ও ভাষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। একইভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও সংযুক্ত কলেজ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
নির্বাচন পরিচালনার কাঠামো
ডাকসু নির্বাচনের জন্য সভাপতি একজন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং সর্বোচ্চ দশজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন। প্রতিটি আবাসিক হলে অথবা ক্যাম্পাসের ভেতরে উপযুক্ত কোনো স্থানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট হলে সংযুক্ত শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত বুথে ভোট প্রদান করবেন।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তিন কর্মদিবসের মধ্যে কেউ আপত্তি জানালে তা উপাচার্যের নিকট দাখিল করা যাবে এবং এ বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
নতুন চারটি পদ যুক্ত
হালনাগাদ করা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্র সংসদে নতুন করে তিনটি সম্পাদকীয় পদ সংযোজন করা হয়েছে। সেগুলো হলোঃ
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক। গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মশালা, সেমিনার, সিম্ফোজিয়াম, সম্মেলন আয়োজন করবেন এবং গবেষণা জার্নাল প্রকাশ করবেন। ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে কর্মশালা, সেমিনার ও চাকরি মেলা আয়োজন করবেন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক মানবাধিকার ও আইনসংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে উদ্যোগ নেবেন।
এছাড়া প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তা করার লক্ষ্যে আরও নয়জন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন-
১. অধ্যাপক ড. এ এস এম মহিউদ্দিন (মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ)
২. অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী (সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট)
৩. অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তাক গাউসুল হক (তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ)
৪. অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম (উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ)
৫. অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা (স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট)
৬. অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম (শহীদুল জাহীদ) (ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ)
৭. অধ্যাপক ড. তারিক মনজুর (বাংলা বিভাগ)
৮. অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ)
৯. সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট)
রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ উপাচার্যের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নির্বাচন পরিচালনার পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করবেন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করছে, একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে সক্ষম হবেন।
উল্লেখ্য, পূর্বে ডাকসু নির্বাচনে ৬ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন থাকলেও এবার কমিশনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ১০ জন করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা ও সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।