ইবিতে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবার

  • Update Time : ০৫:০০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 127

ইবি প্রতিনিধি:

২০১৪ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অভ্যন্তরে বাস দুর্ঘটনায় ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের তৌহিদুর রহমান টিটু নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যদের কোনো একজনকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দেয়ার এবং টিটু নামে যেকোন একটি ভবনের নামকরণের আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন। পরে এ ব্যাপারে একটি অঙ্গীকারনামা করা হয়। টিটুর পরিবারের দাবি মৃত্যুর দশক পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) অবস্থিত প্রেস কর্ণারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান টিটুর ছোট ভাই তারেক আজিজ ও তার পরিবার। এসময় সেখানে ইবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজমুল হক জাইমসহ অন্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

টিটুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, টিটুর ছোট পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে চার বোনের বিবাহ হয়েছে এবং ছোট ভাই সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। টিটুর বয়স্ক বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর এখন তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে ফেলেছেন। বর্তমানে পরিবারটির হাল ধরার মতো কেউ নেই। বিগত দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন লাভ পায়নি।

তারা বিরোধী দলের সাথে জড়িত থাকায় তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। তবে ২০১৬ সালে তার বোন আফরোজা আক্তার লাকি কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে থোক বরাদ্দে (চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী চাকুরী) নিযুক্ত করেন। তবে চাকরিতে যোগদানের আট বছর পার হলেও এ চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি। এদিকে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনটি দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলো হলো, অনতিবিলম্বে টিটুর বোনের চাকরির স্থায়িকরন করা, তার স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবনের নামকরণ করা এবং তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, আমার অনেক আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু আমার ছেলের মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমার পরিবারের একজনকে চাকুরি দেওয়ার কথা হলেও এখন পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিগত সময়ের প্রশাসন কি ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন সেটাতো আমার জানা নেই। তবে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার যদি প্রশাসনের নিকট সহযোগিতা কামনা করে তাহলে আমরা তাদের সাথে বসবো এবং বিবেচনাপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উল্লেখ্য, পরীক্ষা শেষে ঝিনাইদহের মহেশপুরে বাড়িতে ফেরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী টিটু। তখন ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়া একটি বাস ও উল্টো দিক থেকে আসা অন্য একটি বাসের মাঝখানে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন, প্রশাসনিক ভবন ও ক্যাম্পাসে থাকা গাড়িতে ভাংচুর চালায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা অন্তত ৩০টি বাসে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এতে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর চার মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়।

গাড়ি পোড়ানোর ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়। তবে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ইবিতে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবার

Update Time : ০৫:০০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ইবি প্রতিনিধি:

২০১৪ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অভ্যন্তরে বাস দুর্ঘটনায় ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের তৌহিদুর রহমান টিটু নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যদের কোনো একজনকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দেয়ার এবং টিটু নামে যেকোন একটি ভবনের নামকরণের আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন। পরে এ ব্যাপারে একটি অঙ্গীকারনামা করা হয়। টিটুর পরিবারের দাবি মৃত্যুর দশক পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) অবস্থিত প্রেস কর্ণারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান টিটুর ছোট ভাই তারেক আজিজ ও তার পরিবার। এসময় সেখানে ইবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজমুল হক জাইমসহ অন্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

টিটুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, টিটুর ছোট পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে চার বোনের বিবাহ হয়েছে এবং ছোট ভাই সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। টিটুর বয়স্ক বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর এখন তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে ফেলেছেন। বর্তমানে পরিবারটির হাল ধরার মতো কেউ নেই। বিগত দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন লাভ পায়নি।

তারা বিরোধী দলের সাথে জড়িত থাকায় তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। তবে ২০১৬ সালে তার বোন আফরোজা আক্তার লাকি কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে থোক বরাদ্দে (চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী চাকুরী) নিযুক্ত করেন। তবে চাকরিতে যোগদানের আট বছর পার হলেও এ চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি। এদিকে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনটি দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলো হলো, অনতিবিলম্বে টিটুর বোনের চাকরির স্থায়িকরন করা, তার স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবনের নামকরণ করা এবং তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, আমার অনেক আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু আমার ছেলের মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমার পরিবারের একজনকে চাকুরি দেওয়ার কথা হলেও এখন পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিগত সময়ের প্রশাসন কি ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন সেটাতো আমার জানা নেই। তবে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার যদি প্রশাসনের নিকট সহযোগিতা কামনা করে তাহলে আমরা তাদের সাথে বসবো এবং বিবেচনাপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উল্লেখ্য, পরীক্ষা শেষে ঝিনাইদহের মহেশপুরে বাড়িতে ফেরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী টিটু। তখন ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়া একটি বাস ও উল্টো দিক থেকে আসা অন্য একটি বাসের মাঝখানে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন, প্রশাসনিক ভবন ও ক্যাম্পাসে থাকা গাড়িতে ভাংচুর চালায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা অন্তত ৩০টি বাসে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এতে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর চার মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়।

গাড়ি পোড়ানোর ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়। তবে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।