স্বজনপ্রীতির কবলে বেফাক
- Update Time : ০৭:৪৭:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
- / 250
ক্বওমী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণে দেশের বৃহত্তম বোর্ড হল বেফাকুল মাদারিসিলি আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)। উক্ত বোর্ডের অধীনে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মাদ্রাসা পরিচালিত হয়।
.
২০২০ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে দাওয়াতুলের হকের প্রতিষ্ঠাতা মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান কে বেফাকের সভাপতি বানিয়ে সুনামের তলানী থেকে উত্তরণের দায়িত্ব দেওয়া হলে কওমী মুরব্বী ও আলেমগণ কিছুটা আশার আলো দেখতে পান। নিরপেক্ষতার সাথে কাজের মাধ্যমে বেফাক করে তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে দেশের ক্বওমী আলেমগণ এ আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু মাহমুদুল হাসান সভাপতি হওয়ার ০৭ মাসের মধ্যে বেফাকে আত্মীয়করণ ও পক্ষপাতিত্ব শুরু করেছেন।
.
সভাপতির ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এবং খাস কমিটির আলেমদের মতামতের তোয়াক্কা না করে তিনি তার নিজের জামাতা, বেয়াই ও আপনজনদেরক অবৈধভাবে বেফাকের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদে নিয়োগ দেন।
.
বিশেষ করে কূটচাল খ্যাত মুছলিহুদ্দিন রাজু কে প্রকাশনা বিভাগের প্রধান, আপন বেয়াই মিজানুর রহমান সাইদ কে তালীম বিভাগের প্রধান, আপন মেয়ের জামাই নেয়ামতউল্লাহ ফরিদীকে প্রশাসন বিভাগের প্রধান, নিজের সংগঠন দাওয়াতুল হকের নায়েবে আমীর ও ঘনিষ্ঠ আপনজন জাফর আহমেদ কে হিসাব বিভাগের প্রধান এবং দাওয়াতুল হকের অপর নায়েবে আমীর মনসুরুল হককে পরীক্ষা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যই হল তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যেন কেউ প্রশাসনিকভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। পরবর্তী মজলিসে আমেলার বৈঠকে তিনি তার আত্মীয়দের নিয়োগ বৈধ করাসহ আরো প্রায় ১৫/২০ জন লোক নিয়োগের পাঁয়তারা করার গুঞ্জন উঠেছে বেফাকের মধ্যে। তার এই এজেন্ডা বাস্তবায়িত হলে বেফাক তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে অনেকেই আশংকা প্রকাশ করছেন।
.
আলেমদের ধারণা, সভাপতি মাহমুদুল হাসানের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও অপতৎপরতার বুদ্ধিদাতা হিসেবে কাজ করছে অতি সুবিধাবাদী, কূটচাল ও চক্রান্তকারী হিসেবে খ্যাত মোসলেমউদ্দিন রাজু। কওমী অঙ্গনে উপযুক্ত আলেম না হলেও মোসলেহ উদ্দিন রাজু বেফাকের নীতি নির্ধারণী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন। ক্বওমীর সিনিয়র আলেমদের অন্যতম অভিযোগ হলো বয়সে কনিষ্ঠ এবং যথাযথ ক্বওমী এলেম ছাড়া একজন ব্যক্তি কিভাবে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তা তাদের বোধগম্য নয়। অনেক আলেম সরাসরি বেফাকে রাজুর এই প্রভাবের কথা প্রকাশ্যে না বললেও মাহমুদুল হাসানই তাকে আশকারা দিয়ে বর্তমান এ অবস্থানে তুলে এনেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে রয়েছে।
.
মাহমুদুল হাসান প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নিজেকে ও বেফাককে অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বললেও সম্প্রতি একটি ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদের বেফাকের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। কয়েকজন সিনিয়র আলেমের অভিযোগ মাহমুদুল হাসান বেফাকে এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন যে আত্মীয়দের সুযোগ দিতে গিয়ে বেফাকের মতো অরাজনৈতিক একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পিছপা হননি। আত্মীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব ও রাজনীতিকরণের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বেফাক খুব শীঘ্রই একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিষত হবে এবং মুসলিহুদ্দিন রাজুর মতো ব্যক্তিরাই এ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি হয়ে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করবে।
Tag :
বেফাক