সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

  • Update Time : ০৯:২১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
  • / 45

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা। 

রোববার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখা এবং পেশাগত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়। 

আগামী ২৮ মে’র মধ্যে দাবি না মানা হলে ওইদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানান শিক্ষক নেতারা। আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যেও দাবি না মানা হলে পরদিন (৪ জুলাই) অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন। এরপরও দাবি না মানা হলে ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা চলবে না বলেও জানান তারা।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, প্রত্যয় স্কিম যেটা আছে সেখানে বলা আছে- আপনি আপনার বেতনের ১০ শতাংশ দেবেন অথবা পাঁচ হাজার টাকা জমা রাখবেন। সেখানে অনেকগুলো সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই এই প্রত্যয় স্কিম মেনে নেননি।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধু চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। তিনি শিক্ষাখাতে বিনিয়োগকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি বাজেটে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার বাজেটকে কাটছাঁট করা হচ্ছে। এতে শিক্ষকরা পাঠদান ছেড়ে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ২৮ মে সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষকরা একযোগে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে আগামী ৪ জুন সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। আমরা আমাদের ওপর আরোপিত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের প্রত্যাহার চাই।

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সামাদ বলেন, সর্বজনীন পেনশন মানে সবার জন্য পেনশন। ২০২৩ সালে সর্বজনীন পেনশন যেটা চালু করা হয়েছিল, আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই। সেখানে চারটি স্কিম ছিল। হঠাৎ করেই গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিম নামে একটি নতুন স্কিম চালু করা হয়। দেখা যাচ্ছে, এই স্কিম চালু করা হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আর পেনশন পাবেন না। এর সঙ্গে কোনো চক্র জড়িত কি না এটা খতিয়ে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাসরুম থেকে রাস্তায় নিয়ে এলো এটি অবশ্যই তদন্ত করতে হবে। এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থীতিশীল করার পেছনে যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আজকে প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজপথে নেমে এসেছেন। তাদের রাজপথে নামিয়ে আনাই কি প্রত্যয় স্কিমের উদ্দেশ্য? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে অর্থনীতিবিদরা একটি সমীক্ষা করেছেন, সেখানে দেখানো হয়েছে এই প্রত্যয় স্কিম কীভাবে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বলা হচ্ছে, পহেলা জুলাইয়ের পরে যাদের নিয়োগ হবে তাদের জন্য এটি কার্যকর হবে। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা প্রমোশন হচ্ছে নতুন নিয়োগ। স্কিমটি এখন পর্যন্ত যে অবস্থায় আছে সেক্ষেত্রে প্রতি নিয়োগেই এই স্কিম বাস্তবায়িত হবে। আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে ঢাবিসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আর্থিকভাবে বঞ্চিত হবেন।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, শফিউল আলম ভুঁইয়া, নোবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য ড. এম ওয়াহেদ, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ মোস্তফা কাওসার আবুলউলায়ী, জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী, ফার্মেসি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সামাদ, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির প্রমুখ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

Update Time : ০৯:২১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০২৪

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা। 

রোববার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখা এবং পেশাগত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়। 

আগামী ২৮ মে’র মধ্যে দাবি না মানা হলে ওইদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানান শিক্ষক নেতারা। আগামী ৩ জুলাইয়ের মধ্যেও দাবি না মানা হলে পরদিন (৪ জুলাই) অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন। এরপরও দাবি না মানা হলে ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা চলবে না বলেও জানান তারা।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, প্রত্যয় স্কিম যেটা আছে সেখানে বলা আছে- আপনি আপনার বেতনের ১০ শতাংশ দেবেন অথবা পাঁচ হাজার টাকা জমা রাখবেন। সেখানে অনেকগুলো সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই এই প্রত্যয় স্কিম মেনে নেননি।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধু চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। তিনি শিক্ষাখাতে বিনিয়োগকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি বাজেটে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার বাজেটকে কাটছাঁট করা হচ্ছে। এতে শিক্ষকরা পাঠদান ছেড়ে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ২৮ মে সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষকরা একযোগে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে আগামী ৪ জুন সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। আমরা আমাদের ওপর আরোপিত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের প্রত্যাহার চাই।

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সামাদ বলেন, সর্বজনীন পেনশন মানে সবার জন্য পেনশন। ২০২৩ সালে সর্বজনীন পেনশন যেটা চালু করা হয়েছিল, আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই। সেখানে চারটি স্কিম ছিল। হঠাৎ করেই গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিম নামে একটি নতুন স্কিম চালু করা হয়। দেখা যাচ্ছে, এই স্কিম চালু করা হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আর পেনশন পাবেন না। এর সঙ্গে কোনো চক্র জড়িত কি না এটা খতিয়ে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাসরুম থেকে রাস্তায় নিয়ে এলো এটি অবশ্যই তদন্ত করতে হবে। এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থীতিশীল করার পেছনে যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আজকে প্রত্যয় স্কিমের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজপথে নেমে এসেছেন। তাদের রাজপথে নামিয়ে আনাই কি প্রত্যয় স্কিমের উদ্দেশ্য? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে অর্থনীতিবিদরা একটি সমীক্ষা করেছেন, সেখানে দেখানো হয়েছে এই প্রত্যয় স্কিম কীভাবে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বলা হচ্ছে, পহেলা জুলাইয়ের পরে যাদের নিয়োগ হবে তাদের জন্য এটি কার্যকর হবে। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা প্রমোশন হচ্ছে নতুন নিয়োগ। স্কিমটি এখন পর্যন্ত যে অবস্থায় আছে সেক্ষেত্রে প্রতি নিয়োগেই এই স্কিম বাস্তবায়িত হবে। আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে ঢাবিসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আর্থিকভাবে বঞ্চিত হবেন।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, শফিউল আলম ভুঁইয়া, নোবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য ড. এম ওয়াহেদ, দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ মোস্তফা কাওসার আবুলউলায়ী, জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী, ফার্মেসি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সামাদ, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির প্রমুখ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।