ছাত্রীমেসে বাজে ইঙ্গিতের অভিযোগ, স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মারামারি

  • Update Time : ১০:০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
  • / 59

শাহিন রাজা, ইবি প্রতিনিধি:

বিদ্যুৎ বিল চাওয়াকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংলগ্ন ছাত্রী মেসে স্থানীয়দের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৪ মে) সন্ধার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়ায় নূর জাহান ছাত্রীনিবাসে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হয় বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নূর জাহান ছাত্রীনিবাসের মেস ম্যানেজারের সাথে বাকবিতন্ডা হয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ফারিয়া খাতুনের। একপর্যায়ে সে(ফারিয়া) তার ছেলেবন্ধুদের ডাকলে একইবর্ষের ফাহিম তার হলের ১০-১২ জন বন্ধুদের নিয়ে উপস্থিত হয় সেখানে। এসময় পিয়াসের সাথে ম্যানেজারের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এতে পিয়াসসহ সমাজ কল্যাণ বিভাগের সাকিব আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের হৃদয় আবির এবং আইসিটি বিভাগের নাঈম রেজা আহত হন বলে জানা গেছে। এরা সবাই ২০২২-২৩ শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে ফারিয়া খাতুন বলেন, আমি আজ সন্ধ্যায় ম্যানেজারকে বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে তিনি আমাকে বাজে ইঙ্গিত দেন। টাকা নেওয়ার সময় ম্যানেজার আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। পরে আমি টাকাটা ছুড়ে দিলে তিনি আমার বাসার নাম্বার চান এবং বলেন, ‘বেয়াদব মেয়ে। তুমি আজকেই মেস ছেড়ে দিবা।’ পরে আমি আমার বিভাগের বন্ধুকে (আবু হানিফ পিয়াস) বিষয়টি জানালে সে আমার বিষয়ে মেস ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে আসলে ম্যানেজার ও নিরাপত্তাকর্মী তার বাজে আচরণ করে। পরে সে তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে আবারও ম্যানেজারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ম্যানেজার তাকে (আবু হানিফ পিয়াস) জামার কলার ধরে বের করে দেয়। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করবো।

মেস মেনেজার বিবেক বিশ্বাস জানান, গত জানুয়ারি মাসে ওই মেয়ে মেসে উঠে। এরপর সে এতদিন থেকেছে কিন্তু কোন বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। তার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় এক হাজার টাকা। আমি কয়েকবার বিল চাইতে গেলে সে বিভিন্নরকম বাহানা দিতে থাকে। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, আমি তার সঙ্গে কোন বাজে আচরণ করিনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর রেজাউল করিম খান বলেন, মেসের মধ্যে কোন ঝামেলা হলে মেস ম্যানেজারকে জানাতে হতো। আর মেস মেনেজারের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে সেটা মেসের মালিককে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু ওই মেয়েটা সেটা না করে তার বন্ধুদের ডেকে নিয়ে এসে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়েছে, যেটা ঠিক হয়নি। স্থানীয়দের উপর মারধর করা হলে তারা তো বসে থাকবে না। স্থানীয়দের সঙ্গে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ঝামেলা হোক আমরা চাইনা। যেসব শিক্ষার্থীরা আজকে ঝামেলা করেছে তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফারিয়ার বন্ধু আহত আবু হানিফ পিয়াস বলেন, আমাদের বান্ধবীর সাথে কিছুদিন ধরে মেস ম্যানেজার বাজে ব্যবহার করে আসছিলো। বিভিন্ন সময় মেস ম্যানেজার তাকে বাজে ইঙ্গিত প্রদান করে বলে আমাদের জানায়। এছাড়াও মেসের অন্যান্য মেয়েদের সাথেও প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করে। আজকেও আমার বান্ধবীর সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করতে যাই। তখন তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিবেক আমার এক বন্ধুকে চড় মারে। পরে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয়। এতে আমরা চার বন্ধু আহত হই। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
এ বিষয়ে নাঈম রেজা বলেন, আমি রাতে খেতে বের হইছিলাম, তখন দেখি ওখানে বন্ধু-বান্ধবরা আছে। সেখানে গিয়ে দেখি বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে মেস ম্যানেজার বাজে আচরণ করেছে। পরে ওখানে হাতাহাতি মতো হয়েছিলো। এতে কয়েকজন ইনজুরি হয়।

এই বিষয়ে রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এস আই) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই আমরা এখানে এসেছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। তবে কেউ আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ছাত্রীমেসে বাজে ইঙ্গিতের অভিযোগ, স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মারামারি

Update Time : ১০:০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

শাহিন রাজা, ইবি প্রতিনিধি:

বিদ্যুৎ বিল চাওয়াকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংলগ্ন ছাত্রী মেসে স্থানীয়দের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৪ মে) সন্ধার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়ায় নূর জাহান ছাত্রীনিবাসে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হয় বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নূর জাহান ছাত্রীনিবাসের মেস ম্যানেজারের সাথে বাকবিতন্ডা হয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ফারিয়া খাতুনের। একপর্যায়ে সে(ফারিয়া) তার ছেলেবন্ধুদের ডাকলে একইবর্ষের ফাহিম তার হলের ১০-১২ জন বন্ধুদের নিয়ে উপস্থিত হয় সেখানে। এসময় পিয়াসের সাথে ম্যানেজারের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এতে পিয়াসসহ সমাজ কল্যাণ বিভাগের সাকিব আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের হৃদয় আবির এবং আইসিটি বিভাগের নাঈম রেজা আহত হন বলে জানা গেছে। এরা সবাই ২০২২-২৩ শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে ফারিয়া খাতুন বলেন, আমি আজ সন্ধ্যায় ম্যানেজারকে বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে তিনি আমাকে বাজে ইঙ্গিত দেন। টাকা নেওয়ার সময় ম্যানেজার আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। পরে আমি টাকাটা ছুড়ে দিলে তিনি আমার বাসার নাম্বার চান এবং বলেন, ‘বেয়াদব মেয়ে। তুমি আজকেই মেস ছেড়ে দিবা।’ পরে আমি আমার বিভাগের বন্ধুকে (আবু হানিফ পিয়াস) বিষয়টি জানালে সে আমার বিষয়ে মেস ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে আসলে ম্যানেজার ও নিরাপত্তাকর্মী তার বাজে আচরণ করে। পরে সে তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে আবারও ম্যানেজারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ম্যানেজার তাকে (আবু হানিফ পিয়াস) জামার কলার ধরে বের করে দেয়। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করবো।

মেস মেনেজার বিবেক বিশ্বাস জানান, গত জানুয়ারি মাসে ওই মেয়ে মেসে উঠে। এরপর সে এতদিন থেকেছে কিন্তু কোন বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। তার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় এক হাজার টাকা। আমি কয়েকবার বিল চাইতে গেলে সে বিভিন্নরকম বাহানা দিতে থাকে। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, আমি তার সঙ্গে কোন বাজে আচরণ করিনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর রেজাউল করিম খান বলেন, মেসের মধ্যে কোন ঝামেলা হলে মেস ম্যানেজারকে জানাতে হতো। আর মেস মেনেজারের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে সেটা মেসের মালিককে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু ওই মেয়েটা সেটা না করে তার বন্ধুদের ডেকে নিয়ে এসে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়েছে, যেটা ঠিক হয়নি। স্থানীয়দের উপর মারধর করা হলে তারা তো বসে থাকবে না। স্থানীয়দের সঙ্গে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ঝামেলা হোক আমরা চাইনা। যেসব শিক্ষার্থীরা আজকে ঝামেলা করেছে তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফারিয়ার বন্ধু আহত আবু হানিফ পিয়াস বলেন, আমাদের বান্ধবীর সাথে কিছুদিন ধরে মেস ম্যানেজার বাজে ব্যবহার করে আসছিলো। বিভিন্ন সময় মেস ম্যানেজার তাকে বাজে ইঙ্গিত প্রদান করে বলে আমাদের জানায়। এছাড়াও মেসের অন্যান্য মেয়েদের সাথেও প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করে। আজকেও আমার বান্ধবীর সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করতে যাই। তখন তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিবেক আমার এক বন্ধুকে চড় মারে। পরে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয়। এতে আমরা চার বন্ধু আহত হই। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
এ বিষয়ে নাঈম রেজা বলেন, আমি রাতে খেতে বের হইছিলাম, তখন দেখি ওখানে বন্ধু-বান্ধবরা আছে। সেখানে গিয়ে দেখি বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে মেস ম্যানেজার বাজে আচরণ করেছে। পরে ওখানে হাতাহাতি মতো হয়েছিলো। এতে কয়েকজন ইনজুরি হয়।

এই বিষয়ে রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এস আই) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই আমরা এখানে এসেছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। তবে কেউ আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।