কুবি ভিসির পক্ষে মানববন্ধনে হত্যা মামলার আসামিরা
- Update Time : ০৭:৪৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০২৩
- / 195
কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালীন অবস্থান, ভবিষ্যৎ ও শিক্ষার্থীদের নানা দিকনির্দেশনা পরামর্শ ও মতামত দিয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলে দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উলটো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে।’
এরপর তার বক্তব্যটি উদ্ধৃত করে সংবাদ প্রচার করে কয়েকটি গণমাধ্যম। তখন বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে প্রকাশিত সংবাদটিকে বিকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ। এ নিয়ে বুধবার (০২ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐ অংশকেই আবার মানববন্ধনে অংশ নিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে এ নিয়ে গতকাল নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন।
এসময় তাদের সাথে মানববন্ধনে ছিলেন চাকরি প্রত্যাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এছাড়াও উপাচার্যের পক্ষে এদিন মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ মামলার একাধিক আসামিও। তবে, কেন তারা মানববন্ধন করছেন—এমনকি কোন বিষয়ে মানববন্ধন হয়েছে; সে বিষয়ে জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই।
বুধবার (২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে আয়োজিত এ মানববন্ধনে দাঁড়ানোর বিষয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারী জানান, ‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে কি নিউজ এবং কেন মানববন্ধন করছে সেই বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত ছিলাম না। শুধু জানতে পেরেছি উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিউজ হয়েছে এবং অপপ্রচার চালানো হচ্ছে; এটা শুনে আমরা গেলাম। সবাই যাচ্ছে; তাই, আমিও গেলাম। একটা গ্রুপে কয়েকজন যাচ্ছে, আমি না গেলে সেটা তো খারাপ দেখায়। তাই, গেলাম।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী একাধিক কর্মকর্তার কাছে প্রতিবাদের কারণ জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তৃতীয় শ্রেণীর আরেক এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমি ব্যাংক থেকে আসার সময় আমাকে বলছে মানববন্ধনে দাঁড়াতে। আমি দাঁড়িয়েছি, তবে কি বিষয়ে মানববন্ধন বা কেন হয়েছে—সেটা আমি ঐখানে গিয়ে জানতে পেরেছি। তবে, আমি এখনও বিষয়টি নিয়ে পুরাপুরি অবগত নই—জানান ওই কর্মকর্তা।
কুবি মেডিক্যাল সেন্টারের ডা. শাহিদা আক্তার শিমু বলেন, ‘প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কারণে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।’ কি অপপ্রচার চালিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো প্রশাসনের অংশ। সবসময় মিথ্যা নিউজ হয়, এজন্য দাঁড়াইছি।’ আসলে কী নিয়ে সংবাদ প্রচার হয়েছে—এমন প্রশ্নে তার পাশে থাকা একজন তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভিসি স্যার যা বলে, তাঁর উল্টাটা লিখে নেগেটিভ আকারে প্রকাশ করে।’ কীভাবে নেগেটিভ আকারে প্রকাশ করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটু তদন্ত করেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হবে।’
নামপ্রকাশে অনুচ্ছিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রকৌশল কর্মকর্তা বলেন, আমরা ন্যায় অন্যায় এসব কিছু বুঝি না, আমরা সব সময় ভিসি স্যারের লোক। কিন্তু মাঝখান দিয়ে সুযোগগুলো পাই গুটিকে কয়েকজন লোক।
এছাড়াও মানববন্ধনে থাকা আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘উপাচার্য স্যারের বক্তব্য নিয়ে কিছু লেখালেখি হয়েছে। এটার প্রতিবাদ জানাতে আসছি। তবে বক্তব্য নিয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।’ উপাচার্যের বক্তব্যটা কি—এমন প্রশ্নে তিনি কোনো কিছু জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো ধরনের যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।