মহেশখালীর শাপলাপুর যুবদল নেতা ইউনুছের বিরুদ্ধে ভিটে-মাটি ও দোকান দখলের অভিযোগ
- Update Time : ১০:২৩:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / 30
//মহেশখালীতে কথিত যুবদল নেতা ইউনুসের বিরুদ্ধে ঘর দখল সহ চাঁদাবাজির অভিযোগ
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
মহেশখালী শাপলাপুরে চাঁদা না পেয়ে বসতি স্থাপনায় ও দোকানে ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা ইউনুস সহ তার পরিবারের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ।
গত রবিবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাতটার দিকে শাপলাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে আমান উল্লাহ’র বসিত গৃহে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনি ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মহেশখালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, মৃত ইমাম শরীফের পুত্র জহির আহমেদ এবং জহির আহমেদের পাচঁ পুত্র যুবদল নেতা মো: ইউনুছ, শাহাদাত, মো: রুবেল, সিরাজুল ইসলাম ও রাছিব। অভিযুক্ত সকলের শাপলাপুর ইউনিয়নের সাতঘর পাড়া বাসিন্দা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে আমান উল্লাহর কাছ থেকে দুই লাখ দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো টাকা দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেন। এ অবস্থায় গত রবিবার ( ৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সাতটার দিকে বসত ঘর ও দোকানের ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে দোকান ও বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। তিনি এতে বাঁধা দিলে তাঁকে মারধর করেন।
অভিযুক্ত যুবদল নেতা মো: ইউনুস দাবি করেন যে, বিবাদিত জমিটি তারই এবং আমান উল্লাহ অবৈধভাবে দখল করে আছেন। তিনি দাবি করেন যে, তার কাছে এই জমির আইনি দলিল রয়েছে। তবে, সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি এই দলিলগুলো দেখাতে পারেননি। এছাড়াও, নিজেকে এডভোকেট ও শাপলাপুর যুবদলের সভাপতি বলে দাবি করলেও তার সত্যতা মিলেনি তবে বিএনপি পরিবারের তা জানা যায়।
এছাড়াও লিগাল ডকুমেন্টস থাকলে কেন আইনের আশ্রয় না নিয়ে নিজেই আইন হাতে তুলে নিয়ে অন্যের ঘরে তালা লাগিয়ে আমান উল্লাহ ও তার সন্তান-সন্ততিকে কেন হুট করে বের দেওয়া হলো? এ নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেদকে তিনি সদুত্তর দিতে পারেনি।
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমেদ উজ্জ্বল জানিয়েছেন, দলের কোনো সদস্য যদি দলের নাম ব্যবহার করে কোনো অবৈধ কাজ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা খোজঁ খবর নিচ্ছি যাতে কেও দলের পদবীতে থেকে দেশের আইন অমান্য করে শৃঙ্খলা বহির্ভূত কিছু করতে না পারে।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দীকী বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ আমার কাছে আসলে আমি থানায় অভিযোগ করার জন্যে পরামর্শ দেই। এবং উভয়পক্ষের কাগজাদি নিয়ে বসে সমাধান করার জন্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করি যাতে কোন নিরহ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয়।
মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সেক্রেটার মো: আনোয়ার বলেন, ইউনুছ নামে কোন সভাপতি নেই শাপলাপুরে হয়তো তিনি অন্য কোন অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বে থাকতে পারে। এছাড়া শাপলাপুর যুবদলের আহবায়ক রমিজ।
ভুক্তভোগী আমান উল্লাহ জানান, বিবাদীরা এলাকায় দাঙ্গাবাজ হিসেবে পরিচিত এবং আগেও অনেকের সাথে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি নৌবাহিনী ও থানা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিবাদীরা এখনও তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে, ফলে তিনি নিজের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না এবং পরিবারসহ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। যার ফলে আমার মেয়ে ও সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। তিনি এ ঘটনায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইসার হামিদ জানিয়েছেন, এই ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপপরিদর্শক মোশাররফ হোসেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দুই পক্ষই নিজেদের দাবির সমর্থনে যুক্তি উপস্থাপন করছে। যুবদল নেতা মো: ইউনুস দাবি করেন যে, তিনি এই জমিটি আইনত তার। অন্যদিকে, আমান উল্লাহ দাবি করেন যে তিনিই এই জমির বৈধ মালিক।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতার পরিবর্তনের পর থেকে জহির আহমেদ পরিবারের লোকেরা তাদের প্রভাব খাটিয়ে ৩০ বছর ধরে বসবাসরত আমান উল্লাহর ঘর দোকান দখল করায় সে ও তার পরিবারের মেয়ে ও বাচ্চারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।