অ্যাডভোকেট সাইফুলের জানাজায় শোকাহত মানুষের ঢল

  • Update Time : ০৬:২৯:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • / 8

অ্যাডভোকেট সাইফুলের জানাজায় শোকাহত মানুষের ঢল

দুপুর ১টা বাজতেই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন জড়ো হতে থাকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া সদরের কর্নেল (অব.) অলি আহমদ স্টেডিয়ামে। অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো মাঠ কানায়-কানায় ভরে যায়। শুরু হয় বিক্ষুব্ধ জনতার নানান শ্লোগান।

দুপুর ২টায় পুলিশ পাহারায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মরদেহ মাঠে পৌঁছুলে নেমে আসে শোকের ছায়া। হু হু করে কাঁদতে দেখা যায় মুসল্লিদের। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত হয় আলিফ।

দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। ইমামতি করেন বটতলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মওলানা ড. মাহমুদুল হক ওসমানী। পরে আলিফের মরদেহ গ্রামের নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিতে।

গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন স্বজনরা। বাকরুদ্ধ পরিবার। সাইফুলের পিতা জামাল উদ্দিন, মা হোসনে আরা বেগম ও স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন বারংবার।

সাইফুলের অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে পেল না বলতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মা হোসনে আরা বেগম। নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহত আলিফের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের কন্যা সন্তান বুঝতে পারছে না তার বাবা আর নেই। তাজকিয়া অপলক চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।

বিকাল পৌনে ৫টায় ওই এলাকার ফারাঙ্গা পশ্চিম কূল হযরত আব্দুল লতিফ শাহের (রা.) মাজার মাঠ প্রাঙ্গণে সর্বশেষ নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চালানো সংঘর্ষের সময় গতকাল চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের পিছনে গলা কেটে করে হত্যা করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে।

সাইফুল ইসলাম আলিফ পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয়। ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন মেধাবী। লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ২০১৮ সাল থেকে আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাক্টিস করতেন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বড় ভাই তারেকুল ইসলাম বলেন, আমার বোন তারিনের বিয়ে হয় সাড়ে তিন বছর আগে। তাদের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। তারিন এখন ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা। তারিন ও তার সন্তানদের কী হবে সব মিলিয়ে আমাদের পরিবার দিশেহারা।

তিনি আরও বলেন, খুনিরা আমার বোনের জামাইকে অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি, নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করেছে। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নিহতের স্বজন রেজাউল বাহার বলেন, আলিফ নামাজি, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে পুরো গ্রামজুড়ে শোকের মাতম চলছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


অ্যাডভোকেট সাইফুলের জানাজায় শোকাহত মানুষের ঢল

Update Time : ০৬:২৯:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

দুপুর ১টা বাজতেই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন জড়ো হতে থাকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া সদরের কর্নেল (অব.) অলি আহমদ স্টেডিয়ামে। অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো মাঠ কানায়-কানায় ভরে যায়। শুরু হয় বিক্ষুব্ধ জনতার নানান শ্লোগান।

দুপুর ২টায় পুলিশ পাহারায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মরদেহ মাঠে পৌঁছুলে নেমে আসে শোকের ছায়া। হু হু করে কাঁদতে দেখা যায় মুসল্লিদের। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত হয় আলিফ।

দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। ইমামতি করেন বটতলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মওলানা ড. মাহমুদুল হক ওসমানী। পরে আলিফের মরদেহ গ্রামের নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিতে।

গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন স্বজনরা। বাকরুদ্ধ পরিবার। সাইফুলের পিতা জামাল উদ্দিন, মা হোসনে আরা বেগম ও স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন বারংবার।

সাইফুলের অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে পেল না বলতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মা হোসনে আরা বেগম। নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহত আলিফের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের কন্যা সন্তান বুঝতে পারছে না তার বাবা আর নেই। তাজকিয়া অপলক চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।

বিকাল পৌনে ৫টায় ওই এলাকার ফারাঙ্গা পশ্চিম কূল হযরত আব্দুল লতিফ শাহের (রা.) মাজার মাঠ প্রাঙ্গণে সর্বশেষ নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চালানো সংঘর্ষের সময় গতকাল চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশমুখে রঙ্গম কনভেনশন হলের পিছনে গলা কেটে করে হত্যা করা হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে।

সাইফুল ইসলাম আলিফ পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয়। ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন মেধাবী। লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ২০১৮ সাল থেকে আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাক্টিস করতেন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বড় ভাই তারেকুল ইসলাম বলেন, আমার বোন তারিনের বিয়ে হয় সাড়ে তিন বছর আগে। তাদের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। তারিন এখন ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা। তারিন ও তার সন্তানদের কী হবে সব মিলিয়ে আমাদের পরিবার দিশেহারা।

তিনি আরও বলেন, খুনিরা আমার বোনের জামাইকে অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি, নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করেছে। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নিহতের স্বজন রেজাউল বাহার বলেন, আলিফ নামাজি, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে পুরো গ্রামজুড়ে শোকের মাতম চলছে।