হাত বদলে সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ, বঞ্চিত কৃষক
- Update Time : ০১:২৭:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / 152
এনামুল হক, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
চলছে শীতকাল। কৃষিই প্রধান উৎপাদনের উৎস হওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ফলছে নানা ধরণের শাকসবজি। বাজারে সরবরাহও বেশ। পাইকারি বাজারে দাম কম থাকলেও কৃষকের হাত ঘুরে খোলা বাজারে সেই সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ভোক্তাদের নিকট। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক ও ভোক্তাদের পকেট খালি করছে কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চলতি মৌসুমে শাকসবজির চাষ হয়েছে সাড়ে ৬শ হেক্টর। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে দারুণ!
বুধবার সকালে পৌরসভার মীরগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে উঠেছে আলু, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, সিম, টমেটো মিষ্টিকুমড়ো, শসা, করলা, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ধনেপাতাসহ নানানরকমের শাকসবজি।
পাইকারি বাজারে কৃষকরা প্রতি কেজি আলু জাত অনুযায়ী বিক্রি করছে ১৭-২২ টাকা, অথচ মাত্র ৫ মিটার দূরেই কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা তা ভোক্তাদের নিকট বিক্রি করছে ২৫-৩০ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুনের মান অনুযায়ী কৃষকেরা বিক্রি করছে ১৫-১৭ টাকা, ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করছে ২৫-৩০ টাকা। প্রতি কেজি সিম বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছে ২৫-৩০ টাকা, আর ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের নিকট তা বিক্রি করছে ৩৫-৫০ টাকা। কৃষকেরা প্রতি পিচ বাঁধাকপি বিক্রি করছে ৮-১০ টাকায়, বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। প্রতি কেজি টমেটোর দাম কৃষক পাচ্ছে ৮-১০ টাকা, ভোক্তাদের নিকট তা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা। কৃষক প্রতি কেজি গাজরের দাম পাচ্ছে ১২-১৫ টাকা, ভোক্তারা তা কিনছে ২০-২৫ টাকায়। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছে ৭০ টাকা, ভোক্তারা কিনছে তা ৮০ টাকায়। পাইকারি বাজারে আদা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হলেও ভোক্তাদের নিকট বিক্রি হচ্ছে তা ১২০ টাকায়। পাইকারি বাজারে ধনেপাতা প্রতিকেজি ১৫-২০ টাকা আর ভোক্তারা কিনছে তা ৬০-৭০ টাকা, করলা প্রতিকেজি পাইকারি বাজারে ৯০-১০০টাকা খুচরা বাজারে ১৬০ টাকা এবং প্রতি কেজি মুলা কৃষকদের নিকট থেকে ৭-৮ টাকা কেজি কিনে খুচরা বাজারে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১৫-২০ টাকা।
কৃষক এবং ভোক্তাদের চোখ কপালে উঠছে মিষ্টিকুমড়ো ও ফুলকপিতে। দুটো সবজিই পিচ হিসেবে কিনলেও ভোক্তাদের নিকট তা বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। পাইকারি বাজারে কৃষক বড় আকারের (৫ কেজি) প্রতিটি মিষ্টিকুমড়ো বিক্রি করছে ৬০-৭০ টাকা, আর ভোক্তারা কিনছে তা ৩০ টাকা কেজি হিসেবে। অন্যদিকে প্রতিটি দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ফুলকপি কৃষকেরা ১০-১৪ টাকায় বিক্রি করলেও কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের নিকট তা বিক্রি করছে কেজি হিসেবে কুড়ি টাকা। তবে
রসুন ও পেঁয়াজের দাম রয়েছে কাছাকাছি। প্রতি কেজি রসুন ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৬৫-৭০ এবং ২৫-৩০ টাকায়।
কৃষকরা বলছেন, সবজির উৎপাদন বাড়লেও খরচ পড়ছে বেশি আর দামও তো কম! এতে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।
গত সোমবার মীরগঞ্জ বাজারে মিষ্টিকুমড়ো কিনেছিলেন এক প্রভাষক। কেজি হিসেবে মিষ্টিকুমড়ো কখনো কিনেননি তিনি। কেজি হিসেবে কিনতে বাধ্য হয়েছেন বলে বুধবার সকাল সকাল হাটে এসেছেন মিষ্টিকুমড়ো কীভাবে বিক্রি হয় তা দেখতে। সেখানেই কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, এ বয়সে কেজি হিসেবে মিষ্টিকুমড়ো কখনো কিনিনি। হাটে কৃষকরা বিক্রি করছেন পিচ হিসেবে আর বাজারে দোকানদারেরা বিক্রি করছে কেজি হিসেবে, দামও দ্বিগুণ! কীভাবে সম্ভব। বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের নজরদারি জোরদার করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মিষ্টিকুমড়ো ও ফুলকপি পিচ হিসেবে কিনে কেজি হিসেবে ভোক্তাদের নিকট বিক্রির বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, গাইবান্ধার সহকারী পরিচালক আব্দুস সালামের সাথে কথা হলে জানান, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’