এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন: বিরূপ আবহাওয়া ও পরীক্ষা নিয়ে সংশয়

  • Update Time : ১২:০০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫
  • / 36

২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ হিসেবে আবহাওয়ার বৈরিতা, রমজান, এসএসসি পরীক্ষা এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে আনছেন রাজনীতিক ও বিশ্লেষকেরা।

বিশিষ্ট রাজনীতিকদের মতে, ফেব্রুয়ারি-মার্চে রমজান ও পরীক্ষা থাকায় জনসংযোগ কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। আর এপ্রিল মাসের বৈরী আবহাওয়া নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়। এসব বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচন দুই-তিন মাস আগে-পরে হতেই পারে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কিছুটা ছাড় দিতে হবে রাজনৈতিক দল বা সরকারকে।

মার্চ থেকে বজ্রপাতের মৌসুম শুরু হলেও এপ্রিলে হয় শক্তিশালী। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে গড়ে সাড়ে ছয় লাখ বজ্রপাত হয়। গড়ে মৃত্যু হয় ১৬ জনের। বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর পাশাপাশি এপ্রিলে বৃষ্টিও বাড়ে। এ মাসে সিলেটে গড়ে ১৬ দিন আর ঢাকায় ১২ দিন বৃষ্টি হয়।

এপ্রিলের আরও এক সংকট তাপপ্রবাহ। ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে টানা ৩৫ দিন তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গেছে দেশ। তখন তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘চরমভাবাপন্ন তাপমাত্রা থাকে বাংলাদেশে। এদিকে, সূর্য কিরণের স্থায়িত্ব বেশি থাকায় তাপমাত্রাও বেশি থাকে, পাশাপাশি জলীয়বাষ্পের পরিমাণ গড়ে ৭৫ শতাংশ। সুতরাং আমরা তাপমাত্রা যতই রেকর্ড করি না কেন, অনুভূত তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলিসয়াস বেশি থাকে।’

এপ্রিলের বৈরী আবহাওয়ায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের রেকর্ড নেই। ৫৪ বছরে নির্বাচন হয়েছে ১২টি। ১৯৭৩ সালে ভোট হয় মার্চে, এরপর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন হয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকে মে’র মধ্যে। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় জুনে, এরপর ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে অক্টোবর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে আগামী বছরের এপ্রিলে। ঐ সময়ে থাকবে বৈরী আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জ। এসএসসি পরীক্ষা ও রমজান মাসের চাপও থাকবে। তাই বিরোধীতা করছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হতে হবে, দেশের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ছাড় দিয়ে আসতে হবে। সবাই যদি সবার পয়েন্টে থাকে তাহলে আসলে কোনো সমাধান বের হবে না। জুন মাসে প্রচণ্ড গরম। এপ্রিলের চেয়ে মার্চে গরম একটু কম থাকে।’

তিনি আরও জানান, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হলে বেশ কিছু নতুন ভোটার ভোট দেবার সুযোগ পাবেন। যার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন আবহাওয়াগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চ্যালেঞ্জপূর্ণ হতে পারে। তবে সময়সূচি নির্ধারণে সবার অংশগ্রহণ ও সমঝোতা জরুরি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন: বিরূপ আবহাওয়া ও পরীক্ষা নিয়ে সংশয়

Update Time : ১২:০০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ হিসেবে আবহাওয়ার বৈরিতা, রমজান, এসএসসি পরীক্ষা এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে আনছেন রাজনীতিক ও বিশ্লেষকেরা।

বিশিষ্ট রাজনীতিকদের মতে, ফেব্রুয়ারি-মার্চে রমজান ও পরীক্ষা থাকায় জনসংযোগ কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। আর এপ্রিল মাসের বৈরী আবহাওয়া নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয়। এসব বিবেচনায় জাতীয় নির্বাচন দুই-তিন মাস আগে-পরে হতেই পারে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কিছুটা ছাড় দিতে হবে রাজনৈতিক দল বা সরকারকে।

মার্চ থেকে বজ্রপাতের মৌসুম শুরু হলেও এপ্রিলে হয় শক্তিশালী। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে গড়ে সাড়ে ছয় লাখ বজ্রপাত হয়। গড়ে মৃত্যু হয় ১৬ জনের। বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর পাশাপাশি এপ্রিলে বৃষ্টিও বাড়ে। এ মাসে সিলেটে গড়ে ১৬ দিন আর ঢাকায় ১২ দিন বৃষ্টি হয়।

এপ্রিলের আরও এক সংকট তাপপ্রবাহ। ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে টানা ৩৫ দিন তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গেছে দেশ। তখন তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘চরমভাবাপন্ন তাপমাত্রা থাকে বাংলাদেশে। এদিকে, সূর্য কিরণের স্থায়িত্ব বেশি থাকায় তাপমাত্রাও বেশি থাকে, পাশাপাশি জলীয়বাষ্পের পরিমাণ গড়ে ৭৫ শতাংশ। সুতরাং আমরা তাপমাত্রা যতই রেকর্ড করি না কেন, অনুভূত তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলিসয়াস বেশি থাকে।’

এপ্রিলের বৈরী আবহাওয়ায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের রেকর্ড নেই। ৫৪ বছরে নির্বাচন হয়েছে ১২টি। ১৯৭৩ সালে ভোট হয় মার্চে, এরপর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন হয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকে মে’র মধ্যে। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় জুনে, এরপর ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে অক্টোবর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে আগামী বছরের এপ্রিলে। ঐ সময়ে থাকবে বৈরী আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জ। এসএসসি পরীক্ষা ও রমজান মাসের চাপও থাকবে। তাই বিরোধীতা করছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হতে হবে, দেশের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ছাড় দিয়ে আসতে হবে। সবাই যদি সবার পয়েন্টে থাকে তাহলে আসলে কোনো সমাধান বের হবে না। জুন মাসে প্রচণ্ড গরম। এপ্রিলের চেয়ে মার্চে গরম একটু কম থাকে।’

তিনি আরও জানান, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হলে বেশ কিছু নতুন ভোটার ভোট দেবার সুযোগ পাবেন। যার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন আবহাওয়াগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চ্যালেঞ্জপূর্ণ হতে পারে। তবে সময়সূচি নির্ধারণে সবার অংশগ্রহণ ও সমঝোতা জরুরি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।