‘জলদস্যুতা আপনাদের জীবনে কখনও শান্তি ফিরিয়ে আনবে না’
- Update Time : ০৫:৪৮:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪
- / 50
জলদস্যুদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, ‘জলদস্যুদের মধ্যে যারা এ পেশা ত্যাগ করবেন না, তারা কি দুঃসংবাদ লিখে নিয়ে যাবেন সেটা মহান আল্লাহ জানেন। কাউকে ক্ষমা করা হবে না।’
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) চট্টগ্রামে পতেঙ্গা র্যাব-৭ এর সদর দপ্তরে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ১২টি বাহিনীর মোট ৫০ জন জলদস্যু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এদের মধ্যে ৪৯ জন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি ঘোষণা করতে চাই যারা ফিরে আসেন নাই বা যারা চিন্তা ভাবনা করছেন দস্যুতা করবেন কিংবা অন্য কিছু করবেন তাহলে আপনাদের পরিণতি কী হবে তা আল্লাহ জানেন। আমরা কাউকে ছাড় দিবো না।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘জলদস্যুতা আপনাদের জীবনে কখনও শান্তি ফিরিয়ে আনবে না। আমরা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে ১৬ বছরে পর্দাপন করছি। আমরা যে কোন মূল্যে সন্ত্রাস, জঙ্গি দমন করবো। যে কোন মূল্যে এই অপরাধীদের কন্ট্রোলে আনবো। তারা যেন অপরাধ করার চিন্তা ভাবনাও না করে, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে।’
আত্মসমর্পণকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জলদস্যুরা যারা ফিরে আসছেন তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি, তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। শিগগিরিই আমরা বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করবো ‘
অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রাম তো আর সেই চট্টগ্রাম নেই। অনেক উন্নয়ন হচ্ছে চট্টগ্রামে। সেই জায়গায় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সামান তালে নিরাপত্তার জন্য যা যা করার তা করছে। র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অঞ্চলে নিষ্ক্রিয় হতে থাকে। ওসব এলাকায় জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে সুন্দরবনে জলদস্যুদের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের ধর্ষণ ও খুনের মামলা ছাড়া অন্য মামলাগুলো আমরা দেখবো। যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের র্যাব কিছু টাকা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে তাদের জন্য আরো কিছু করা যায় কি না সে প্রচেষ্টা নিবো।’
মন্ত্রী বলেন,‘আজ এখানে একজন নারী জলদস্যুও আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা কখনও অত্যাচারিত বা নিপীড়িত হয়ে বাধ্য হয়ে এসব কাজে জড়িয়ে থাকেন। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকেরাও তাদের বাধ্য করেন এসব কাজে জড়াতে।’
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফ, পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম প্রমুখ।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো.শরীফ-উল-আলম জানান, শর্তহীনভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ১২টি বাহিনীর মোট ৫০ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেন।
তিনি আরও জানান, জলদস্যুরা ৩৫টি একনলা বন্দুক, ১৮টি এসবিবিএল, ১৭টি ওয়ান শুটার গান, ১টি দুইনলা বন্দুক, ১টি পিস্তল, ১টি রিভলভার, ৩টি বিদেশি পিস্তল, ১টি এসএমজি ও ২টি এয়ারগান সহ মোট ৯০টি অস্ত্র ও চারটি ওয়াকিটকি জমা দিয়েছে। এছাড়াও গুলি ও কার্তুজ জমা দিয়েছে ২৮৩ রাউন্ড।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ এবং ২০২০ সালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের ৭৭ জন জলদস্যুর সফল আত্মসমর্পণ অন্যান্য জলদস্যুদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের জলদস্যুরা তাদের দস্যু জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আশার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে।