পিআইবিতে ‘ফ্যাক্টচেক’ প্রশিক্ষণ

  • Update Time : ১১:৪০:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 220

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের জন্য ফ্যাক্টচেকবিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি)। দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন। সোম ও মঙ্গলবার পিআইবির সম্মেলন কক্ষে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শফিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পিআইবির মহাপরিচালক কবি জাফর ওয়াজেদ।

প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে ফ্যাক্টচেকবিষয়ক ধারণা, ফ্যাক্টচেকিং টুলস, ভুয়া তথ্য যাচাই, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য কীভাবে ছড়ায় ও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন লেখার কৌশল, ভুয়া ছবি ও ভিডিও চিত্রের ফ্যাক্টচেক করার পদ্ধতি, ফ্যাক্টচেকিং সাইট পর্যবেক্ষণ ও সত্যতা যাচাই সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

দুদিনের এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন ইন্টারনেটে তথ্য যাচাইবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাক্টখুঁজি’র প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাহস মোস্তাফিজ, বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্ট বাংলাদেশের (ইউল্যাব) গণমাধ্যম শিক্ষা ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাবিল খান জামিল। কর্মশালার সমন্বয়ক ছিলেন পিআইবির সহকারী প্রশিক্ষক বারেক কায়সার।

সমাপনী পর্বে পিআইবির মহাপরিচালক কবি জাফর ওয়াজেদ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের ভুয়া সংবাদ, ফ্যাক্টচেক ও সাংবাদিকতার নৈতিকতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘সাংবাদিকতায় ফ্যাক্টের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি যারা এখন অনলাইনে নিউজ পোর্টালে কাজ করছেন তাদের জন্য। কারণ এখন অনেক ভুয়া সংবাদ ছড়াচ্ছে। সারাদেশে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।’

পিআইবির মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন মিথ্যাচার অনেক বেশি। ফেসবুকের পোস্টের তথ্য দিয়ে অনেক দৈনিক পত্রিকা প্রতিবেদন করছে। এগুলো ক্ষতিকর। ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু ছেপে দিচ্ছে। এগুলো অনৈতিক। এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা ছিল, এটি হয়েছে।’ একই সঙ্গে এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কপি করে অনেক অনলাইন গণমাধ্যমে হুবহু ছেপে দিচ্ছেন। অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টালে আমি দেখেছি, ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে অনলাইন পোর্টাল চালানো হচ্ছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে এগুলো আমি মেনে নিতে পারছি না। এগুলো করতে গেলে সাংবাদিকতার গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। পাঠক কমে যাবে।’

ভুল তথ্যের সংবাদ সমাজের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে জানিয়ে পিআইবি মহাপরিচালক বলেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতে অল্প সময়ের মধ্যে সংবাদ প্রচার হয়। ফলে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হতে হবে। ফ্যাক্টের বিষয়ে আমাদের আরও জানা দরকার। এ কোর্সগুলো আরও বেশি সম্প্রসারিত হওয়া দরকার। যারা অনলাইনে কাজ করেন তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। এখন কয়েকটি পত্রিকায় ফ্যাক্টচেক আছে। আমি মনে করি, সব পত্রিকায় এটা থাকা উচিত।’

তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুযোগ থাকলেও সাংবাদিকরা এই আইনের মাধ্যমে তথ্য চেয়ে কম আবেদন করেন বলে জানান জাফর ওয়াজেদ। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকদের তথ্য অধিকার আইন খুবই কার্যকরী। এর মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক কবি জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘গণমাধ্যম আইন, সম্প্রচার আইন এখনও ঝুলে আছে। এগুলো সংসদীয় কমিটি উত্থাপনও করেছিল। কিন্তু সেটার এখনও সুরাহা হয়নি।’

প্রধান অতিথি শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাক্টচেক সাংবাদিকতার জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। অনেকে ফেসবুকের তথ্য নিয়ে সরাসরি ছেপে দেন। এটা চলছে। আমাদের সময় এটা ছিল না। বাংলাদেশে এখন দুষ্টু মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, আইপি টিভি। ইউটিউবে এমন অনেক স্টোরি আছে, যা দেখা ও শোনাও পাপ। অনেক মিথ্যা তথ্য আছে। এমন অনেক ওয়েবলিংক সরকার ডিজেবল করে দিয়েছে। বাকিগুলোও করা হবে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকার মেট্রোরেলসহ ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এখন এগুলো নিয়ে নিউজ করলে বলা হয়, আপনি সরকারের দালাল। কিন্তু এগুলো কি নিউজ না? এটাই নিউজ। একই সঙ্গে পদ্মা ভাঙছে, সেটাও নিউজ।’

সমাপনী পর্বে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেন পিআইবির মহাপরিচালক।

Please Share This Post in Your Social Media


পিআইবিতে ‘ফ্যাক্টচেক’ প্রশিক্ষণ

Update Time : ১১:৪০:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের জন্য ফ্যাক্টচেকবিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি)। দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন। সোম ও মঙ্গলবার পিআইবির সম্মেলন কক্ষে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শফিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পিআইবির মহাপরিচালক কবি জাফর ওয়াজেদ।

প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে ফ্যাক্টচেকবিষয়ক ধারণা, ফ্যাক্টচেকিং টুলস, ভুয়া তথ্য যাচাই, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য কীভাবে ছড়ায় ও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন লেখার কৌশল, ভুয়া ছবি ও ভিডিও চিত্রের ফ্যাক্টচেক করার পদ্ধতি, ফ্যাক্টচেকিং সাইট পর্যবেক্ষণ ও সত্যতা যাচাই সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

দুদিনের এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন ইন্টারনেটে তথ্য যাচাইবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাক্টখুঁজি’র প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাহস মোস্তাফিজ, বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্ট বাংলাদেশের (ইউল্যাব) গণমাধ্যম শিক্ষা ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাবিল খান জামিল। কর্মশালার সমন্বয়ক ছিলেন পিআইবির সহকারী প্রশিক্ষক বারেক কায়সার।

সমাপনী পর্বে পিআইবির মহাপরিচালক কবি জাফর ওয়াজেদ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের ভুয়া সংবাদ, ফ্যাক্টচেক ও সাংবাদিকতার নৈতিকতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘সাংবাদিকতায় ফ্যাক্টের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি যারা এখন অনলাইনে নিউজ পোর্টালে কাজ করছেন তাদের জন্য। কারণ এখন অনেক ভুয়া সংবাদ ছড়াচ্ছে। সারাদেশে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।’

পিআইবির মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন মিথ্যাচার অনেক বেশি। ফেসবুকের পোস্টের তথ্য দিয়ে অনেক দৈনিক পত্রিকা প্রতিবেদন করছে। এগুলো ক্ষতিকর। ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু ছেপে দিচ্ছে। এগুলো অনৈতিক। এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা ছিল, এটি হয়েছে।’ একই সঙ্গে এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কপি করে অনেক অনলাইন গণমাধ্যমে হুবহু ছেপে দিচ্ছেন। অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টালে আমি দেখেছি, ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে অনলাইন পোর্টাল চালানো হচ্ছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে এগুলো আমি মেনে নিতে পারছি না। এগুলো করতে গেলে সাংবাদিকতার গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। পাঠক কমে যাবে।’

ভুল তথ্যের সংবাদ সমাজের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে জানিয়ে পিআইবি মহাপরিচালক বলেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতে অল্প সময়ের মধ্যে সংবাদ প্রচার হয়। ফলে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হতে হবে। ফ্যাক্টের বিষয়ে আমাদের আরও জানা দরকার। এ কোর্সগুলো আরও বেশি সম্প্রসারিত হওয়া দরকার। যারা অনলাইনে কাজ করেন তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। এখন কয়েকটি পত্রিকায় ফ্যাক্টচেক আছে। আমি মনে করি, সব পত্রিকায় এটা থাকা উচিত।’

তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুযোগ থাকলেও সাংবাদিকরা এই আইনের মাধ্যমে তথ্য চেয়ে কম আবেদন করেন বলে জানান জাফর ওয়াজেদ। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকদের তথ্য অধিকার আইন খুবই কার্যকরী। এর মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক কবি জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘গণমাধ্যম আইন, সম্প্রচার আইন এখনও ঝুলে আছে। এগুলো সংসদীয় কমিটি উত্থাপনও করেছিল। কিন্তু সেটার এখনও সুরাহা হয়নি।’

প্রধান অতিথি শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাক্টচেক সাংবাদিকতার জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। অনেকে ফেসবুকের তথ্য নিয়ে সরাসরি ছেপে দেন। এটা চলছে। আমাদের সময় এটা ছিল না। বাংলাদেশে এখন দুষ্টু মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, আইপি টিভি। ইউটিউবে এমন অনেক স্টোরি আছে, যা দেখা ও শোনাও পাপ। অনেক মিথ্যা তথ্য আছে। এমন অনেক ওয়েবলিংক সরকার ডিজেবল করে দিয়েছে। বাকিগুলোও করা হবে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকার মেট্রোরেলসহ ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এখন এগুলো নিয়ে নিউজ করলে বলা হয়, আপনি সরকারের দালাল। কিন্তু এগুলো কি নিউজ না? এটাই নিউজ। একই সঙ্গে পদ্মা ভাঙছে, সেটাও নিউজ।’

সমাপনী পর্বে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেন পিআইবির মহাপরিচালক।