মার্কিন নির্বাচন: যে কারণে চূড়ান্ত ফলাফল আসতে দেরি হতে পারে

  • Update Time : ১১:১৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / 7

আজ মার্কিন নির্বাচনের মহারণ। শেষ দিন পর্যন্ত দুই প্রধান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসই দিয়ে এসেছেন বিশ্লেষকরা। ঐতিহাসিকভাবে, যেসব মার্কিন নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান কম ছিল, সেগুলোর চূড়ান্ত ফলাফল আসতে কয়েকদিন সময় লেগেছে।

কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি গণতন্ত্র বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে হয় না। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ৫০টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য থেকে ৫৩৮ জন ইলেক্টর নির্বাচিত হন। তারাই নির্ধারণ করেন প্রেসিডেন্ট কে হবেন।

ইলেকটোরাল কলেজ অনুযায়ী, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি বা ‘ইলেক্টর’ থাকেন। প্রতিটি রাজ্যকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে দেওয়া হয় এই ইলেক্টর। ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তাই সেখানে সর্বোচ্চ ৫৪ জন ইলেক্টর। ভারমন্টে সবচেয়ে কম, মাত্র তিন জন।

মেইন আর নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোতে ‘উইনার টেকস অল’ নিয়মে ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, একটি রাজ্যে যেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তার ভাগেই যাবে সেই রাজ্যের সবকটি ইলেকটোরাল ভোট।

নির্বাচনে জিততে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অন্তত ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়।

দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান বেশি থাকলে নির্বাচনের দিন রাতেই হয়তো একজন প্রার্থী ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করে ফেলেন। যে কারণে সব রাজ্যের গণনা শেষ হওয়ার আগেই বিজয়ীর নাম জেনে যায় সবাই।

তবে এবারের নির্বাচনে এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম বলে দাবি করছেন বিশ্লেষকরা। গণনায় দেরি, এমনকি গণনা নিয়ে আইনি জটিলতাও তৈরি হতে পারে।

মঙ্গলবারের আগেই প্রায় আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন নাগরিক আগাম ভোট দিয়েছেন, যা ২০২০ নির্বাচনের মোট ভোটের অর্ধেকেরও বেশি।

গণনা শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে?

আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় (মার্কিন সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা) ভোটগ্রহণ শেষ হবে।

২০২০ নির্বাচনেও মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হয়েছিল। কিন্তু বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল শনিবার। তবে এর আগের দুই নির্বাচন, ২০১৬ ও ২০১২ সালে বিজয়ীর নাম জানতে এত সময় লাগেনি। এর পিছনে একটি কারণ, কোভিডকালীন সময়ে হওয়া ২০২০ নির্বাচনে অনেক ভোটার ডাকযোগে ভোট দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একেক অঙ্গরাজ্যের গণনা পদ্ধতি একেকরকম। অনেক অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগে আসা ভোট এবং দেশের বাইরের নাগরিকদের ভোট নির্বাচনের আগেই গুণে ফেলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনে নির্বাচনের পর গুণা হয় এসব ব্যালট। এই গুরুত্বপূর্ণ দুই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের জন্যই ফলাফলে দেরি হতে পারে।

এছাড়া, কোনো অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান বেশি কম থাকলে ভোট পুনর্গণনাও হতে পারে।

ভোটের রায় কে দেবে?

স্থানীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ফলাফল ঘোষণার আগেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের হিসেব-নিকেশ অনুযায়ী একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেয়।

তবে এটা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া না। প্রতিটি ব্যালটের হিসেব নিয়েই কেবল রাজ্য পর্যায়ে ফলাফল দেওয়া হয়।

ফলাফল জানানোর জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে নিযুক্ত ইলেক্টররা সেই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া প্রার্থীকে ভোট দেন।

২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট গ্রহণ করেন সিনেট প্রধান। সাংবিধানিকভাবে ভাইস প্রেসিডেন্টই সিনেটের নেতৃত্ব দেন। অর্থাৎ, এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যয়িত করবেন কমলা নিজে।

৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ইলেকটোরাল ভোট গণনা করে এবং ফলাফল নিশ্চিত করে। ২০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন প্রেসিডেন্ট।

কেন ফলাফল ঘোষণায় দেরি হতে পারে?

পার্লামেন্টের শংসাপত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এবার সেই আনুষ্ঠানিকতাও বাধার মুখে পড়তে পারে।

২০২২ সালে অন্তত ২২ জন কাউন্টি নির্বাচন কর্মকর্তা দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে শংসাপত্র দেওয়ায় দেরি করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটন (সিআরইডব্লিউ)-এর মতে, ২০২০ সালে অন্তত ৩৫ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যয়ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এবারও তারা একই অবস্থান নিতে পারেন।

স্থানীয় পর্যায়ে এমন বাঁধা আসলে রাজ্য ও রাষ্ট্রীয় শংসাপত্র আসতে বেশ দেরি হয়ে যেতে পারে।

ট্রাম্প ২০২০ নির্বাচন ফলাফল মেনে নেননি। এরপর এই শংসাপত্র প্রক্রিয়া তদন্তের আওতায় এসেছে এবং রাজনীতিকরণের শিকার হয়েছে।

সেই নির্বাচনের পর ট্রাম্প শিবির থেকে অনেকগুলো মামলা করা হয়। যদিও সেগুলো আদালতে টেকেনি। এবার নির্বাচনের আগেই দুই প্রধান পার্টি থেকে অনেকগুলো মামলা করা হয়েছে, যেগুলো নির্বাচনের ফলাফলেও প্রভাব ফেলতে পারে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


মার্কিন নির্বাচন: যে কারণে চূড়ান্ত ফলাফল আসতে দেরি হতে পারে

Update Time : ১১:১৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

আজ মার্কিন নির্বাচনের মহারণ। শেষ দিন পর্যন্ত দুই প্রধান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসই দিয়ে এসেছেন বিশ্লেষকরা। ঐতিহাসিকভাবে, যেসব মার্কিন নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান কম ছিল, সেগুলোর চূড়ান্ত ফলাফল আসতে কয়েকদিন সময় লেগেছে।

কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি গণতন্ত্র বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে হয় না। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ৫০টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য থেকে ৫৩৮ জন ইলেক্টর নির্বাচিত হন। তারাই নির্ধারণ করেন প্রেসিডেন্ট কে হবেন।

ইলেকটোরাল কলেজ অনুযায়ী, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি বা ‘ইলেক্টর’ থাকেন। প্রতিটি রাজ্যকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে দেওয়া হয় এই ইলেক্টর। ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তাই সেখানে সর্বোচ্চ ৫৪ জন ইলেক্টর। ভারমন্টে সবচেয়ে কম, মাত্র তিন জন।

মেইন আর নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোতে ‘উইনার টেকস অল’ নিয়মে ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, একটি রাজ্যে যেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তার ভাগেই যাবে সেই রাজ্যের সবকটি ইলেকটোরাল ভোট।

নির্বাচনে জিততে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অন্তত ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়।

দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান বেশি থাকলে নির্বাচনের দিন রাতেই হয়তো একজন প্রার্থী ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করে ফেলেন। যে কারণে সব রাজ্যের গণনা শেষ হওয়ার আগেই বিজয়ীর নাম জেনে যায় সবাই।

তবে এবারের নির্বাচনে এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম বলে দাবি করছেন বিশ্লেষকরা। গণনায় দেরি, এমনকি গণনা নিয়ে আইনি জটিলতাও তৈরি হতে পারে।

মঙ্গলবারের আগেই প্রায় আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন নাগরিক আগাম ভোট দিয়েছেন, যা ২০২০ নির্বাচনের মোট ভোটের অর্ধেকেরও বেশি।

গণনা শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে?

আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় (মার্কিন সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা) ভোটগ্রহণ শেষ হবে।

২০২০ নির্বাচনেও মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হয়েছিল। কিন্তু বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল শনিবার। তবে এর আগের দুই নির্বাচন, ২০১৬ ও ২০১২ সালে বিজয়ীর নাম জানতে এত সময় লাগেনি। এর পিছনে একটি কারণ, কোভিডকালীন সময়ে হওয়া ২০২০ নির্বাচনে অনেক ভোটার ডাকযোগে ভোট দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একেক অঙ্গরাজ্যের গণনা পদ্ধতি একেকরকম। অনেক অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগে আসা ভোট এবং দেশের বাইরের নাগরিকদের ভোট নির্বাচনের আগেই গুণে ফেলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনে নির্বাচনের পর গুণা হয় এসব ব্যালট। এই গুরুত্বপূর্ণ দুই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের জন্যই ফলাফলে দেরি হতে পারে।

এছাড়া, কোনো অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান বেশি কম থাকলে ভোট পুনর্গণনাও হতে পারে।

ভোটের রায় কে দেবে?

স্থানীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ফলাফল ঘোষণার আগেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের হিসেব-নিকেশ অনুযায়ী একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেয়।

তবে এটা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া না। প্রতিটি ব্যালটের হিসেব নিয়েই কেবল রাজ্য পর্যায়ে ফলাফল দেওয়া হয়।

ফলাফল জানানোর জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে নিযুক্ত ইলেক্টররা সেই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া প্রার্থীকে ভোট দেন।

২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট গ্রহণ করেন সিনেট প্রধান। সাংবিধানিকভাবে ভাইস প্রেসিডেন্টই সিনেটের নেতৃত্ব দেন। অর্থাৎ, এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যয়িত করবেন কমলা নিজে।

৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ইলেকটোরাল ভোট গণনা করে এবং ফলাফল নিশ্চিত করে। ২০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন প্রেসিডেন্ট।

কেন ফলাফল ঘোষণায় দেরি হতে পারে?

পার্লামেন্টের শংসাপত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এবার সেই আনুষ্ঠানিকতাও বাধার মুখে পড়তে পারে।

২০২২ সালে অন্তত ২২ জন কাউন্টি নির্বাচন কর্মকর্তা দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে শংসাপত্র দেওয়ায় দেরি করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটন (সিআরইডব্লিউ)-এর মতে, ২০২০ সালে অন্তত ৩৫ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যয়ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এবারও তারা একই অবস্থান নিতে পারেন।

স্থানীয় পর্যায়ে এমন বাঁধা আসলে রাজ্য ও রাষ্ট্রীয় শংসাপত্র আসতে বেশ দেরি হয়ে যেতে পারে।

ট্রাম্প ২০২০ নির্বাচন ফলাফল মেনে নেননি। এরপর এই শংসাপত্র প্রক্রিয়া তদন্তের আওতায় এসেছে এবং রাজনীতিকরণের শিকার হয়েছে।

সেই নির্বাচনের পর ট্রাম্প শিবির থেকে অনেকগুলো মামলা করা হয়। যদিও সেগুলো আদালতে টেকেনি। এবার নির্বাচনের আগেই দুই প্রধান পার্টি থেকে অনেকগুলো মামলা করা হয়েছে, যেগুলো নির্বাচনের ফলাফলেও প্রভাব ফেলতে পারে।