পাহাড়ি ঢলের ভাঙ্গন ঠেকাতে বালির বাঁধ!
- Update Time : ০৭:১৬:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১
- / 250
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নির্দেশনা ছিল টেকসই করে বাঁধটি মেরামতের। কিন্তু বাঁধের কিনারে নদীর মাঝখান থেকে বালি তুলেই বাঁধটি কোনমতে মেরামত করে দায় সারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রস্থ বড় হবার কথা থাকলেও মাত্র তিন ফুট পুরত্ব দিয়ে বাঁধ মেরামত হওয়ায় ছয়মাসের মাথায় অল্প বৃষ্টিতে ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছে বাঁধের বালি।
বাঁধের পূর্বপাশে একযুগ আগে নির্মিত জালালাবাদ-পোকখালী সংযোগ গার্ডার ব্রিজটি গত ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকালে প্রবল ঢলে দুটি গার্ডারসহ মাঝের পিলারটি ভেসে যায়। আর বালিনির্মিত বেড়িবাঁধের উভয়পাশের বালি অধিকাংশ ক্ষয়ে গিয়ে বাঁধটি সরো হয়ে গেছে। অবশিষ্টাংশ বালির বাঁধ বৃষ্টি থেকে রক্ষায় স্হানীয়রা চাঁদা তুলে পলিথিন কিনে বাঁধ ঢেকে দিয়েছে। টানা আরো কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বেড়িবাঁধটি যেকোন সময় বিধ্বস্ত হয়ে ফের বন্যা আক্রান্ত হতে পারে কয়েকটি গ্রাম। এনিয়ে চরম আতংকিত এলাকাবাসী।
২০২০ সালের ১৭ জুন পাহাড়ি ঢলে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর জালালাবাদ মনজুর মৌলভীর দোকান এলাকার বেড়িবাঁধটি। এসময় বাঁধ ভেঙ্গে এলাকার ২০-২৫টি বাড়ি, ১০টি পাকা-সেমিপাকা দোকান, প্রায় এক কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্লাবিত হয় তিন গ্রামের কয়েকশ ঘর-বাড়ি। ১৫-২০টি পুকুর তলিয়ে গিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়। ঢলের কবল থেকে এলাকা রক্ষায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাঁধটি মেরামতে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। সম্রাট কনস্ট্রাকশন নামে এক ঠিকাদির প্রতিষ্টান এটি মেরামতের দায়িত্ব পায়।
দেখা যায়, ঈদগাঁও বাজার-পোকখালী সড়কের পূর্ব ফরাজী পাড়া মনজুর মৌলভীর দোকান পয়েন্টে সড়কের কিনার ঘেষেই প্রবাহিত হচ্ছে খরস্রোতা ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদী। নদীর পাড়ে যেনতেন ভাবে নির্মিত হয়েছে কোয়ার্টার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেড়িবাঁধ। বালি দিয়ে নির্মিত বাঁধের অধিকাংশই বৃষ্টিতে ধুয়ে রাস্তায় মিশে গেছে, আর নেমে আসা বালিতে একাকার হয়ে গেছে রাস্তা।
প্রকল্প এলাকায় পাউবোর সাইনবোর্ডে দেখা যায়, জালালাবাদ ইউনিয়নের পোল্ডার নং ৬৬/৩ (গোমাতলী) সংস্কারে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বাঁধ মেরামত ব্যয় ধরা হয়েছে। কথা রয়েছে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের।
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ও বাঁধ এলাকার মেম্বার ওসমান সরোয়ার বলেন, জালালাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মনজুর মৌলভীর দোকানের সামনের বেড়িবাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে ভঙ্গুর ছিল। তা সংস্কারে এলজিএসপির ফান্ড থেকে ২০২০ সালের শুরুতে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিষদ চেয়ারম্যান অজ্ঞাত কারণে তা মেরামত না করে টাকা ফেরত দেন। এর মাঝে গত বছরের ১৭ জুন ভঙ্গুর বাঁধটি তলিয়ে গিয়ে এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর বাঁধটি দ্রুত সংস্কারে বরাদ্দ দেয় পাউবো। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্টান থেকে বাঁধটি মেরামতের দায়িত্ব নিয়ে বাঁধটিকে ‘আঁইল’ হিসেবে মেরামত করে এলাকাবাসীকে আবোরো ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদ।
তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এতদঞ্চলে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বালির বাঁধটিতে বৃষ্টি পড়ায় তা ক্ষয়ে নেমে গেছে। যা অবশিষ্ট রয়েছে তা নেমে গেলে ঢলে প্লাবিত হবে পুরো এলাকা। সেই ভয়ে বাঁধে পলিথিন দিয়েছেন স্থানীয় আতংকগ্রস্ত লোকজন। কিন্তু শুনেছি কাজের বিল ঠিকই তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্রাট কনস্ট্রাকশনের স্বত্তাধিকারি সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা লুৎফুর রহমান আজাদের মুঠোফোনে বেশ কয়েক বার কল করা হয়। রিং হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
একই ভাবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদের মুঠোফোনেও কল করা হয়। তিনিও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
পাউবোর কক্সবাজার’র নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাঁধ মেরামতে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে ঢাকা থেকে একটি তদন্ত দল এসছিল। তারা মেপে দেখে যতটুকু কাজ করেছে ততটুকু বিল দেয়ার অনেমোদন দিয়ে যান। সে পরিমাণ টাকাই পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কিছু মানুষের লোভের ফলে দূর্বল বাধের কারণে পুরো এলাকা ঝুঁকির মুখে রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে জবাবে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বাঁধ এলাকাটি ঘেষেই এলজিইডির গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জায়গা সংকুচিত।