গণরুমবিহীন’ হল খোলার পরিকল্পনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

  • Update Time : ১১:৪৮:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 193

মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি:

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের পর শর্তসাপেক্ষে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সেইসঙ্গে ক্যাম্পাস খোলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা কীভাবে চলাফেরা করবেন, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে, কক্ষের ফ্লোরে ঘুমানো যাবে না, রুমের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বড় রুমে সর্বোচ্চ চার জন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। কক্ষের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে, কোনো অতিথি আনা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, হাঁচি-কাশির ক্ষেত্রে কনুইয়ের ভাঁজ বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে।

এছাড়া করোনা মোকাবেলায় গণরুমগুলোতে বসানো হচ্ছে খাট। শিক্ষার্থীরা হলে আসার আগেই তাদের জন্য সিট বরাদ্দ করার কথাও রয়েছে।

গণরুমের বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, হলগুলোতে এখন আর গণরুম থাকবে না। ইতোমধ্যে আমরা গণরুমের শিক্ষার্থীদের তালিকা করে ফেলেছি, তাদের জন্য সিটও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সিটের তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা রুমে উঠবে। আর কোনো শিক্ষার্থী ফ্লোরে ঘুমাবে না, অবশ্যই একটা খাট নির্ধারিত থাকবে।

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধুমাত্র বৈধ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলের নীতিমালার আলোকে হলে অবস্থান করতে পারবেন। যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা কোনোভাবেই হলে অবস্থান করতে পারবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রভোস্ট কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, আবাসিক হলে কোনো অছাত্র কিংবা বহিরাগত থাকতে পারবে না। শুধু বৈধ শিক্ষার্থীরা হলে থাকবে। যাদের হলে থাকার বৈধ অধিকার নেই তারা হলে থাকতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোভাবেই তাদের অনুমতি দেবে না। ছাত্রত্ব নেই কিন্তু হলে উঠবে এই রকম চিন্তা যেন কেউ মাথায় না রাখে। যাদের রুমে অবৈধ বা প্রাক্তন শিক্ষার্থী থাকবে তাদের দায়িত্ব হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো। এরকম কোনো তথ্য পেলে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

তারপরেও কোনো শিক্ষার্থী যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদি আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অতিথি কক্ষগুলোকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ব্যবহার করা বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ ও অছাত্রমুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রীয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের প্লাটফর্ম ‘পরিবেশ পরিষদ’ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সময়সীমা এগিয়ে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি গণরুম-গেস্টরুম বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবো বলে জানিয়েছি।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, প্রশাসনের গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ ও অছাত্রমুক্ত করার প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। পাশাপাশি নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছি। ক্যাম্পাস থেকে কোনো শিক্ষার্থী গ্রেফতার করতে যেন প্রক্টরের অনুমতি নেয়, সে দাবি জানিয়েছি।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের সমস্যা হলে আইসোলেশন সেন্টারে সেবা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গণরুম-গেস্টরুম ও অছাত্রমুক্ত করা প্রশাসনের প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানাই। হলের প্রতিটি সিট যেন প্রভোস্টদের মাধ্যমে বণ্টন হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা করেছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে, হল প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে টিকা নিতে বলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে হল খোলার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


গণরুমবিহীন’ হল খোলার পরিকল্পনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের

Update Time : ১১:৪৮:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি:

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের পর শর্তসাপেক্ষে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সেইসঙ্গে ক্যাম্পাস খোলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা কীভাবে চলাফেরা করবেন, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে, কক্ষের ফ্লোরে ঘুমানো যাবে না, রুমের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বড় রুমে সর্বোচ্চ চার জন শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। কক্ষের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে, কোনো অতিথি আনা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, হাঁচি-কাশির ক্ষেত্রে কনুইয়ের ভাঁজ বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে।

এছাড়া করোনা মোকাবেলায় গণরুমগুলোতে বসানো হচ্ছে খাট। শিক্ষার্থীরা হলে আসার আগেই তাদের জন্য সিট বরাদ্দ করার কথাও রয়েছে।

গণরুমের বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, হলগুলোতে এখন আর গণরুম থাকবে না। ইতোমধ্যে আমরা গণরুমের শিক্ষার্থীদের তালিকা করে ফেলেছি, তাদের জন্য সিটও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সিটের তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা রুমে উঠবে। আর কোনো শিক্ষার্থী ফ্লোরে ঘুমাবে না, অবশ্যই একটা খাট নির্ধারিত থাকবে।

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধুমাত্র বৈধ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলের নীতিমালার আলোকে হলে অবস্থান করতে পারবেন। যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা কোনোভাবেই হলে অবস্থান করতে পারবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রভোস্ট কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, আবাসিক হলে কোনো অছাত্র কিংবা বহিরাগত থাকতে পারবে না। শুধু বৈধ শিক্ষার্থীরা হলে থাকবে। যাদের হলে থাকার বৈধ অধিকার নেই তারা হলে থাকতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোভাবেই তাদের অনুমতি দেবে না। ছাত্রত্ব নেই কিন্তু হলে উঠবে এই রকম চিন্তা যেন কেউ মাথায় না রাখে। যাদের রুমে অবৈধ বা প্রাক্তন শিক্ষার্থী থাকবে তাদের দায়িত্ব হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো। এরকম কোনো তথ্য পেলে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

তারপরেও কোনো শিক্ষার্থী যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদি আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অতিথি কক্ষগুলোকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ব্যবহার করা বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ ও অছাত্রমুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রীয়াশীল ১৩টি ছাত্র সংগঠনের প্লাটফর্ম ‘পরিবেশ পরিষদ’ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সময়সীমা এগিয়ে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি গণরুম-গেস্টরুম বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবো বলে জানিয়েছি।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, প্রশাসনের গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ ও অছাত্রমুক্ত করার প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। পাশাপাশি নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছি। ক্যাম্পাস থেকে কোনো শিক্ষার্থী গ্রেফতার করতে যেন প্রক্টরের অনুমতি নেয়, সে দাবি জানিয়েছি।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের সমস্যা হলে আইসোলেশন সেন্টারে সেবা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গণরুম-গেস্টরুম ও অছাত্রমুক্ত করা প্রশাসনের প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানাই। হলের প্রতিটি সিট যেন প্রভোস্টদের মাধ্যমে বণ্টন হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা করেছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে, হল প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে টিকা নিতে বলা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে হল খোলার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে।