ঢাবিতে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ : ‘দ্রোহযাত্রা কর্মসূচি’ ঘোষণা

  • Update Time : ০৮:১১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪
  • / 57

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

সারাদেশে শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে হত্যা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এর আগে সকাল ১০টায় লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষকরা এবং ১১টায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকরা সমাবেশ করেন। সমাবেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

এ সমাবেশে শিক্ষকেরা কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আটক শিক্ষার্থীসহ অন্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিতে হবে। ব্লক রেইডের নামে গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের ছাত্রদের ওপর গুলি করা হয়েছে। ছাত্ররা সমাবেশে গুলি খেয়েছে, পালিয়ে যাচ্ছিল সেখানে গুলি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় পড়েছিল, সেই লাশের ওপর গুলি করা হয়েছে। আমরা শুধুমাত্র আমাদের ছাত্রদের হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। এরপর আমরা দেখলাম এই হত্যার জন্য সরকার প্রধানের কোনো কান্না নাই। উনি স্থাপনার জন্যে কিছুদিন কাঁদলেন, এখন হত্যার জন্য মায়াকান্না কাঁদছেন।

তিনি বলেন, আমরা চোখের সামনে দেখলাম, পুলিশের ইউনিফরম পরে গুলি করা হচ্ছে। চোখের সামনে ভিডিও দেখলাম আবু সাঈদকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের হাতে গুলি, যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র। একজন ছাত্রের হাতেও আমরা অস্ত্র বা পিস্তল দেখিনি। কোনো পত্রিকার ছবি কিংবা টিভির ফুটেজে দেখি নাই। তখন আমাদের মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করবে না। কারণ এই সরকারই খুনি।

ঢাবির ইন্টারন্যশনাল বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ১৯৭১ সালে ঘরে ঘরে গিয়ে দরজায় ঠক ঠক করে জিজ্ঞেস করা হতো মুক্তি আছে কি না! আর এখন ঘরে ঘরে ঠক ঠক করে জিজ্ঞেস করা হয়, ছাত্র আছে কি না, শিক্ষক আছে কি না। আপনি একজনকে মারবেন দশ জন দাঁড়াবো। দশজনকে মারবেন হাজারজন দাঁড়িয়ে যাবো। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান, আপনাদের কোনো অধিকার নেই তাদের গুলি করার।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সঙ্গে যুক্ত হন ঢাকায় অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট-জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরলো কেন-শেখ হাসিনা জবাব চাই ’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক’- ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এ সমাবেশ থেকে শিক্ষকেরা আগামীকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ‘দ্রোহযাত্রা কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছেন। তাঁরা দ্রোহযাত্রা নিয়ে প্রেসক্লাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন। এতে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে আহ্বান জানান তাঁরা।

নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও পপুলেশনস সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াসিমা ও বায়েজিদ ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেফা অদিতি হক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিউপি) শিক্ষক ইমরুল আজাদ, নর্থ সাউথের শিক্ষক রিয়াসাত খান প্রমুখ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঢাবিতে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ : ‘দ্রোহযাত্রা কর্মসূচি’ ঘোষণা

Update Time : ০৮:১১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

সারাদেশে শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে হত্যা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ’ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এর আগে সকাল ১০টায় লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষকরা এবং ১১টায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকরা সমাবেশ করেন। সমাবেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

এ সমাবেশে শিক্ষকেরা কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আটক শিক্ষার্থীসহ অন্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিতে হবে। ব্লক রেইডের নামে গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের ছাত্রদের ওপর গুলি করা হয়েছে। ছাত্ররা সমাবেশে গুলি খেয়েছে, পালিয়ে যাচ্ছিল সেখানে গুলি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় পড়েছিল, সেই লাশের ওপর গুলি করা হয়েছে। আমরা শুধুমাত্র আমাদের ছাত্রদের হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। এরপর আমরা দেখলাম এই হত্যার জন্য সরকার প্রধানের কোনো কান্না নাই। উনি স্থাপনার জন্যে কিছুদিন কাঁদলেন, এখন হত্যার জন্য মায়াকান্না কাঁদছেন।

তিনি বলেন, আমরা চোখের সামনে দেখলাম, পুলিশের ইউনিফরম পরে গুলি করা হচ্ছে। চোখের সামনে ভিডিও দেখলাম আবু সাঈদকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের হাতে গুলি, যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র। একজন ছাত্রের হাতেও আমরা অস্ত্র বা পিস্তল দেখিনি। কোনো পত্রিকার ছবি কিংবা টিভির ফুটেজে দেখি নাই। তখন আমাদের মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করবে না। কারণ এই সরকারই খুনি।

ঢাবির ইন্টারন্যশনাল বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ১৯৭১ সালে ঘরে ঘরে গিয়ে দরজায় ঠক ঠক করে জিজ্ঞেস করা হতো মুক্তি আছে কি না! আর এখন ঘরে ঘরে ঠক ঠক করে জিজ্ঞেস করা হয়, ছাত্র আছে কি না, শিক্ষক আছে কি না। আপনি একজনকে মারবেন দশ জন দাঁড়াবো। দশজনকে মারবেন হাজারজন দাঁড়িয়ে যাবো। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান, আপনাদের কোনো অধিকার নেই তাদের গুলি করার।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সঙ্গে যুক্ত হন ঢাকায় অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট-জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরলো কেন-শেখ হাসিনা জবাব চাই ’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক’- ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এ সমাবেশ থেকে শিক্ষকেরা আগামীকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ‘দ্রোহযাত্রা কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছেন। তাঁরা দ্রোহযাত্রা নিয়ে প্রেসক্লাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন। এতে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে আহ্বান জানান তাঁরা।

নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও পপুলেশনস সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াসিমা ও বায়েজিদ ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেফা অদিতি হক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিউপি) শিক্ষক ইমরুল আজাদ, নর্থ সাউথের শিক্ষক রিয়াসাত খান প্রমুখ।