ঢাবির বিজয় একাত্তর হল থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

  • Update Time : ০৩:৪২:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / 844

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. ফিরোজ কাজী (২২)।

মঙ্গলবার(২০ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ফিরোজ কাজী আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায়। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, তিনি হলের যমুনা ব্লকের ছয় কিংবা সাত তলা থেকে লাফ দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, আনুমানিক ১২টা ৫০-৫৫ মিনিটে  তাঁরা হঠাৎ একটি শব্দ পান। পরে বাইরে গিয়ে একজনকে (ফিরোজ) নিচে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাঁরা দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান তাঁকে।

পরে দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ফিরোজের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি শাহবাগ থানাকে জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফিরোজের এক রুমমেট বলেন, রাত ১০টার পরে সে রুমে আসে। তার জন্য তার টেবিলে খাবার রাখা ছিল। আমি তাকে বলি, খাবার তো নষ্ট হয়ে যাবে। খাবার খেয়ে নে। সে বলে, ‘খামু।’ এরপর সে ওযু করে এসে নামাজ পড়েছে। নামাজ শেষে সে তার টেবিলে বসল। আমরা ভেবেছি, সে হয়ত পড়তে বসেছে। এরপর আমরা রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ি। এরপর সে বের হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এ সময় তার বেডমেট জিজ্ঞেস করল, ‘কই যাস?’ তখন সে বলে, ‘আসতেছি।’ এর অল্প সময় পর আমরা খবর পাই, বিজয় একাত্তর হল থেকে কেউ একজন নিচে লাফ দিয়েছে। এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি শোয়া থেকে উঠে পড়ি। যেহেতু ফিরোজ শেষ কিছুদিন ধরে একটু ডিপ্রেসড ছিল, তাই আমি সবাইকে বলি, ফিরোজ কই? দেখি, রুমে ফিরোজ নেই। এরপর আমরা সবাই দৌড় দিয়ে বিজয় একাত্তরের সামনে আসি। ততক্ষণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমরা হাসপাতালে এসে দেখি, ফিরোজই।

ফিরোজের রুমে গিয়ে তার টেবিলে একটি খাতা অর্ধখোলা অবস্থায় রাখা পাওয়া যায়। সে খাতায় পৃষ্ঠার ওপরের তারিখের জায়গায় লেখা ছিল ‘১/০৯/২৩’। আর এর নিচে লেখা, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।… ফিরোজ রাত: ১১টা ৩।’

একই পৃষ্ঠায় নিচে লেখা আছে, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইল মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ৮০৭৯, আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম। আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক।শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।… ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৫।’

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন,এখন পর্যন্ত যতটুকু এভিডেন্স আমাদের কাছে আছে, এটা একটা সুইসাইড। কারণ, তার সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঢাবির বিজয় একাত্তর হল থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

Update Time : ০৩:৪২:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. ফিরোজ কাজী (২২)।

মঙ্গলবার(২০ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ফিরোজ কাজী আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায়। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, তিনি হলের যমুনা ব্লকের ছয় কিংবা সাত তলা থেকে লাফ দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, আনুমানিক ১২টা ৫০-৫৫ মিনিটে  তাঁরা হঠাৎ একটি শব্দ পান। পরে বাইরে গিয়ে একজনকে (ফিরোজ) নিচে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাঁরা দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান তাঁকে।

পরে দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ফিরোজের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি শাহবাগ থানাকে জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফিরোজের এক রুমমেট বলেন, রাত ১০টার পরে সে রুমে আসে। তার জন্য তার টেবিলে খাবার রাখা ছিল। আমি তাকে বলি, খাবার তো নষ্ট হয়ে যাবে। খাবার খেয়ে নে। সে বলে, ‘খামু।’ এরপর সে ওযু করে এসে নামাজ পড়েছে। নামাজ শেষে সে তার টেবিলে বসল। আমরা ভেবেছি, সে হয়ত পড়তে বসেছে। এরপর আমরা রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ি। এরপর সে বের হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এ সময় তার বেডমেট জিজ্ঞেস করল, ‘কই যাস?’ তখন সে বলে, ‘আসতেছি।’ এর অল্প সময় পর আমরা খবর পাই, বিজয় একাত্তর হল থেকে কেউ একজন নিচে লাফ দিয়েছে। এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি শোয়া থেকে উঠে পড়ি। যেহেতু ফিরোজ শেষ কিছুদিন ধরে একটু ডিপ্রেসড ছিল, তাই আমি সবাইকে বলি, ফিরোজ কই? দেখি, রুমে ফিরোজ নেই। এরপর আমরা সবাই দৌড় দিয়ে বিজয় একাত্তরের সামনে আসি। ততক্ষণে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমরা হাসপাতালে এসে দেখি, ফিরোজই।

ফিরোজের রুমে গিয়ে তার টেবিলে একটি খাতা অর্ধখোলা অবস্থায় রাখা পাওয়া যায়। সে খাতায় পৃষ্ঠার ওপরের তারিখের জায়গায় লেখা ছিল ‘১/০৯/২৩’। আর এর নিচে লেখা, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।… ফিরোজ রাত: ১১টা ৩।’

একই পৃষ্ঠায় নিচে লেখা আছে, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইল মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ৮০৭৯, আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম। আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক।শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।… ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৫।’

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন,এখন পর্যন্ত যতটুকু এভিডেন্স আমাদের কাছে আছে, এটা একটা সুইসাইড। কারণ, তার সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে।