কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পরও আইনবহির্ভূত বিষয়ে ছাত্রলীগের ব্যানারে মানববন্ধন
- Update Time : ০৯:০৯:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩
- / 148
কুবি প্রতিনিধি
সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক ইকবাল মনোয়ারকে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের রায়ের পরই ইকবাল মনোয়ারের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে কুবি শাখা ছাত্রলীগের ব্যানারে মানববন্ধন করেছে উপাচার্যপন্থি ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। যদিও কুবিতে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। এদের মধ্যে অধিকাংশই অছাত্র। কেউ কেউ আবার খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।
সোমবার আদালতের রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন তাঁরা।
মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন ২০১৭ সালে বিলুপ্ত শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহি। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের অন্তকোঃন্দলে নিহত কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে পলাতক আসামি আসামি রেজা-ই-এলাহি।
এছাড়াও ২০২০ সালের ৮ মার্চ রেজার এলাকা বরুড়ার তালুকপাড়া গ্রামে এক নারীকে ধর্ষণ চেষ্টা, ভাংচুর, জালিয়াতি ও লুটতরাজের ঘটনায় কুমিল্লার নারী ও শিশু দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল-২ এ তাকে এক নম্বর আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লার বরুড়া থানায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন শাহ আলম নামে একজন স্থানীয়।
মানববন্ধনে ব্যানারের পেছনেই ছিলেন খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামালার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া বিপ্লব চন্দ্র দাস।
আরেক অংশগ্রহণকারী ইকবাল হোসেন খান। তাঁর বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ইকবাল। একই মামলায় বিপ্লব চন্দ্র দাসও অভিযুক্ত। আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার পর জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। উপাচার্যের আস্থাভাজন হয়েই ক্যাম্পাসে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
এসময় সবুজ আহমেদ নামে একজনকে তার বক্তব্যের শেষে বিএনপির স্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলতে শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘ইকবাল মনোয়ার ভিসির পিছনে লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটাকে আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধুবাদ জানাচ্ছি। ছাত্রলীগ সব সময় ভিসি স্যার ও প্রশাসনের সাথে আছি। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’
এদিকে মানববন্ধনে ছাত্রলীগ নেতা সবুজ আহমেদ তাঁর বক্তব্য শেষে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দেয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্বয়ং ছাত্রলীগের মাঝেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের ব্যানারে বিএনপি জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে কিছু অছাত্র, হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামিরা। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগান তারই বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে শোকের মাসে তাঁরা জাতির পিতাকে অবমাননা করেছে।’
এবিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সিয়াম রহমান বলেন, শোকের মাসে ছাত্রলীগের ব্যানারে থেকে এমন স্লোগান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্য লজ্জাজনক। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তারা এমন স্লোগান ব্যবহার করতে পারে না। সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে পারে এমন কোন স্লোগান যদি কেউ ব্যবহার করে সেটির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই কেন্দ্রীয় সংসদের সাথে কথা বলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
এছাড়া মানববন্ধনে দাঁড়ানো মেহেদী হৃদয়, মাহী হাসনাইন, ম. রকিবুল হাসান রকিসহ বিভিন্ন অছাত্রদের যোগ দিতে দেখা যায়।
তবে এসকল বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করা একাধিক মামলায় আসামী রেজা-ই-এলাহী বলেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলতে আমি শুনি নি। যদি বলে থাকে তাহলে ভুল করে বলেছে।
হাইকোর্টের আদেশের পরে মানববন্ধন করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে প্রতিবেদকের কল কেটে দেন।