ইবিতে বাইক চালানো নিয়ে গ্যাঞ্জাম, শিক্ষার্থী-কর্মকর্তার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
- Update Time : ০৮:৪৮:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩
- / 412
ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এলোপাতাড়ি বাইকচালানো ও এক নিরাপত্তা কর্মীর সাথে অসদাচরণের অভিযোগ উঠার পর এবার পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন তারা। সোমবার (১৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রেদওয়ান মাহমুদ।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত বুধবার (১১ জুলাই) বিকালে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনের সড়কে রেদওয়ান মাহমুদ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহরা এস্টেট অফিসের নিরাপত্তা সেলের সিকিউরিটি সুপারভাইজার ফরিদ উদ্দীন ও উপ-উপাচার্য পিএস সোহেল রানা কর্তৃক হয়রানি এবং হুমকির স্বীকার হন।
লিখিত অভিযোগে রেদওয়ান বলেন, আমি গত বুধবারে বিকাল সাড়ে ৬ টায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যাওয়ার পথে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন দ্বারা হেনস্তার স্বীকার হই। এ সময় তিনি হঠাৎ আমাকে হাতের ইশারায় থামতে বলেন। স্বাভাবিকভাবেই আমি তার কাছে গিয়ে থেমে তাকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সালাম দিই। তখন তিনি আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি পরিচয় দিই।
এ সময় তিনি আমাকে ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করেন, এই ছেলে! তুমি কি পুলিশ। আমি উত্তরে বলি, জ্বী না। তখন তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাহলে তুমি পুলিশের স্টিকার লাগানো বাইক কেন চালাচ্ছো? আমি আবারো উত্তর দিই বাইকটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার। তিনি আমাকে বলেন, পুলিশের স্টিকার লাগানো বাইক তো তুমি চালাতে পারবা না, এখনি বাইক থেকে নামো। তখনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপ-উপাচার্য মহোদয়ের পিএস সোহেল রানা। শুরুতেই তিনি উগ্রভাবে তেড়ে আসেন এবং আমাকে প্রশ্ন করেন, তুমি রাস্তার মাঝে বাইক কেন রাখছো? তখন আমি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করি আমাকে ফরিদ উদ্দীন কর্তৃক হঠাৎ দাড় করানো হয়েছে। কিন্তু তিনি আমার কথা কর্ণপাত না করেই আমার উপর চড়াও হন এবং আমি তার মুখের উপর কেন কথা বললাম এজন্য বারংবার হুমকি দিতে থাকেন। ঐ সময় আমার সাথে থাকা শিক্ষার্থী উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করলে তিনি তার উপরও চড়াও হন এবং বাজে ভাবে হেনস্তা করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে ঐ দুইজন ব্যক্তির ক্ষমতা প্রদর্শন পূর্বক আমাদেরকে হুমকি প্রদান করা হয়।
এদিকে এ ঘটনার পর ঐ শিক্ষার্থী এবং আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং আমার সাথে থাকা শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন তাকে ইবি মেডিকেলে ভর্তি করা হয় এবং পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত তিনি অসুস্থ আছেন।
এর আগে গত শনিবার (১৫ জুলাই) নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠে রেদওয়ান ও ফাতেমাতুজ-জোহরার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও খালেদা জিয়া হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নিরাপত্তা কর্মী ফরিদ উদ্দিন।
নিরাপত্তা কর্মী ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘তারা যে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছে সেটা আমি শুনিনি। কি অভিযোগ করেছে সেটাও জানিনা। ওই শিক্ষার্থীদেরকে তো আমরা চিনিই না। তাহলে হুমকি দিবো কিভাবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়াই হচ্ছে আমাদের কাজ। সেই হিসেবে তাদেরকে সতর্ক করা। এর থেকে বেশি কিছু করার অধিকার তো আমাদের নেই।’
উপ-উপাচার্যের পিএস সোহেল রানা বলেন, ‘ঐদিন বিকালে বাজারে যেতে দেখি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনের রাস্তায় একটি বাইক আড়াআড়ি করে রাখা আছে। এসময় দুই শিক্ষার্থীর সাথে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন ও ওইদিন তদন্ত করতে আসা দুই র্যাব কর্মকর্তার সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। এসময় দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় জিজ্ঞাস করলে পরিচয় না দিয়ে উল্টো আমার উপর চড়াও হয়। এরপর আমি তাদেরকে বোঝনোর চেষ্টা করলে। তারা বলে আপনারা যা ইচ্ছা করার করেন।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। আমাদের মিটিং হয়েছে। যেহেতু পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, তার জন্য যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। এজন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। হয়তো দুই একদিনের মধ্যেই একটি কমিটি গঠন করা হবে।’