জাবির ভর্তি পরীক্ষায় শিফটভিত্তিক ফলাফলে চরম বৈষম্য
- Update Time : ০১:৫৬:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩
- / 169
জাবি প্রতিনিধি:
বিগত বারের মত এবারেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিফটভিত্তিক ফলাফলে চরম বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ভিন্ন শিফটে ও ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হলেও একই মেধাতালিকায় এ বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিষয়ক ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের এবং বুধবার গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
‘বি’ ইউনিটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯৩টি করে মোট ৩৮৬টি আসনের বিপরীতে আসনসংখ্যার দশগুণ শিক্ষার্থীর পৃথক ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা দুই শিফট করে মোট চার শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছেলেদের ১৯৩টি আসনের মধ্যে ১৩৬টি আসনই দ্বিতীয় শিফট থেকে এসেছে। প্রথম শিফট থেকে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে মাত্র ৫৭ জন শিক্ষার্থী। এই হিসেবে প্রথম শিফট থেকে চান্স পেয়েছে মাত্র ২৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং বাকি সকল শিক্ষার্থী অপর শিফট থেকে।
ছাত্রীদের মেধাতালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও প্রকট। ১৯৩টি আসনের মধ্যে ১৭১টি অর্থাৎ ৮৮ দশমিক ৬১ শতাংশ আসনই এসেছে দ্বিতীয় শিফট থেকে। প্রথম শিফট থেকে চান্স পেয়েছে মাত্র ২২ জন অর্থাৎ ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাছাড়া মেধা তালিকায় প্রথম ২০ জনের ১৭ জনই ২য় শিফটের।
একইভাবে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ এবং ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিভুক্ত (আইআইটি) ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়ও শিফটভিত্তিক বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। মোট ছয় শিফটে অনুষ্ঠিত এ ইউনিটের পরীক্ষায় ৪টি শিফটে ছাত্ররা অংশ নেয়৷ ছাত্রদের ২২৩ সিটের মধ্যে প্রথম শিফট থেকে ৩৪ জন, দ্বিতীয় শিফট থেকে ৩৮ জন, ৩য় শিফট থেকেই ১৪১ জন ছাত্র মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে। যা মোট মেধাতালিকায় স্থানপ্রাপ্তির ৬৩.২৩ শতাংশ। ৪র্থ শিফট থেকে মাত্র ১০ জন মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।
অন্যদিকে ছাত্রীদের দুই শিফটের ‘এ’ ইউনিট পরীক্ষার প্রথম শিফট থেকে ৭৩ জন (৩২.৭৪%) এবং দ্বিতীয় শিফট থেকে ১৫০ জন (৬৭.২৬%) মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন।
মামুন হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে চান্স পাওয়ার জন্য ভাগ্য লাগে। শিফটের কারণে পরীক্ষা ভাল হবে কিনা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আলাদা প্রশ্নপত্রে একই মেধাতালিকা প্রকাশ করায় মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। এই বৈষম্যমূলক পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে জাবিকে বের হয়ে আসা উচিৎ।’
শিফট বৈষম্যের ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন ভাল বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘শিফট পদ্ধতিতে বৈষম্য তৈরি হয়। তবে সব শিফটে প্রশ্ন একই ক্যাটাগরিতে অনেকগুলো সেটে হয়। আমরা এবার শিফট পদ্ধতি থেকে বের হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিলে অনেক শিক্ষক এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’
গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ আহমদ বলেন, ‘মেয়েদের ২ হাজার ২৩০ জনের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে সেখানে দুই শিফট থেকে প্রায় ৫০% করেই স্থান পেয়েছে। তবে ছেলেদের একটি শিফট থেকে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী এসেছেন। শিফটভিত্তিক ভর্তি পদ্ধতি একাডেমিক কাউন্সিল থেকে সিদ্ধান্ত হয়ে আসে। ডিন অফিস থেকে সে অনুযায়ী আমরা পরীক্ষা নেই। একাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই আমরা করেছি।’
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির পরিচালক অধ্যাপক শামীম কায়সার বলেন, ‘পুরো ফলাফলের বিষয়ে আমি অবগত নই। ভর্তি পরিক্ষার সকল ইউনিটের প্রশ্ন একই ধরনের করা হয়। প্রশ্ন মডারেশন কমিটি একই মানের প্রশ্নে বিভিন্ন সেট তৈরি করেন।’
শিফট ভিত্তিক মেধাতালিকায় ফলাফল বৈষম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোন একটি নির্দিষ্ট শিফট থেকে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো শিফট ভিত্তিক মোট পাসের হারের বৈষম্য কতটুকু? আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করব।’