ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডব : অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছেন ঢাবির এসএম হলের শিক্ষার্থীরা

  • Update Time : ১১:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০২২
  • / 218

ঢাবি প্রতিনিধি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) প্রতিষ্ঠাকালীন একটি হল হচ্ছে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল(এসএম হল)। কালের পরিক্রমায় এই হল এখন নড়বড়ে অবস্থায়। খসে পড়ছে ছাদের সুন,সুরকী,দেয়াল আর ছাদে ধরেছে ফাটল।

অধিকন্তু ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি শিক্ষার্থীকে এটাচ দেয়া,ছাত্র জীবন শেষেও দীর্ঘদিন হলে অবস্থানের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় বারান্দায়।

তবে হলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর নতুন করে শিক্ষার্থীদের এটাচ দেয় বন্ধ হয় (২০২০-২১) শিক্ষাবর্ষ থেকে। এখন বারান্দায় যারা অবস্থান করছেন তারা সবাই (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষ, অর্থাৎ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

গতকাল সোমবার(২৪অক্টোবর) দিবাগত রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাংয়ের’ তান্ডবে বারান্দায় অবস্থায় করতে পারছেন না তারা। বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ার ঝাপটায় বইখাতা,বিছানা পত্র সব ভিজে একাকার।

এতো রাতে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই৷ কেউ অবস্থান নিয়েছেন মসজিদের হলে। আবার কেউ অন্য কোনো হলে, অন্য কোনো বন্ধুর রুমে জায়গা খুঁজতে বেরিয়েছেন। একান্ত নিরুপায় হয়ে স্রষ্টা কে স্মরণ করছেন অনেকেই।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ বলেন আমরা ৩য় বর্ষের সবাই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দায় থাকি, আজকে ঝড়ে এতো বাজে পরিস্থিতি হইছে, ঘুমানোর মতো পরিস্থিতি নাই। উপর থেকে ছাদ ভেঙে পরলো দেখলাম একজনের বেডে, বইগুলো ভিজে যাচ্ছে, জামাকাপড় উড়ে যাচ্ছে।

এস এম হলের আরেক শিক্ষার্থী মামুন খান। তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে (২০১৯-২০২০) শিক্ষাবর্ষের পর আর নতুন করে কোন শিক্ষার্থী এ্যালোটমেন্ট দেয়া হয়নি, তার মানে এই হলের সবচেয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা সবাই (২০১৯-২০২০) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

বিগত ৩ শিক্ষাবর্ষ হতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দায় অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকেন যারা প্রায় সবাই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিগত তিনবছর ধরে আমরা বারান্দায় থাকছি, আমাদের জিনিসপত্রের কোন নিরাপত্তা তো নেই ঝড় বৃষ্টি এবং শীতের সময় বারান্দায় অবস্থান করাও অসম্ভব হয়ে যায়। তিনবছর ধরে আমরা শতাধিক শিক্ষার্থী বারান্দায় মানবেতর ভাবে থেকে যাচ্ছি অথচ আমাদের ব্যাপারে সর্বমহল যেন দেখেও না দেখার ভান করে আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মজিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,হলের বারান্দায় কোনো শিক্ষার্থী থাকার কথা না। আমরা সেখানে তাদেরকে অবস্থান করতে নিষেধ করেছি,কেননা সেটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। আর আমার কাছে রিপোর্ট এসেছে সেখানে যারা অবস্থান করছে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র।

সেখানে সবাই তৃতীয় বর্ষের বৈধ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে বলে জানালে তিনি বলেন,তাহলে তাদের আগামীকাল আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন। আর আজকের(সোমবার) জন্য তাদেরকে টিভি রুমে অবস্থান করতে বলবো। আমাদের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কোনো মেয়াদোত্তীর্ন শিক্ষার্থী হলে থাকবে না। আর যে রুম আছে সেখানে আমাদের সকল বৈধ শিক্ষার্থী সিট হয়ে যাবে। ঝূঁকিপূর্ণ বিল্ডিংটা ভেঙে নতুন প্ল্যান পাশ হয়ে গেছে,খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডব : অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছেন ঢাবির এসএম হলের শিক্ষার্থীরা

Update Time : ১১:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০২২

ঢাবি প্রতিনিধি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) প্রতিষ্ঠাকালীন একটি হল হচ্ছে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল(এসএম হল)। কালের পরিক্রমায় এই হল এখন নড়বড়ে অবস্থায়। খসে পড়ছে ছাদের সুন,সুরকী,দেয়াল আর ছাদে ধরেছে ফাটল।

অধিকন্তু ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি শিক্ষার্থীকে এটাচ দেয়া,ছাত্র জীবন শেষেও দীর্ঘদিন হলে অবস্থানের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় বারান্দায়।

তবে হলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর নতুন করে শিক্ষার্থীদের এটাচ দেয় বন্ধ হয় (২০২০-২১) শিক্ষাবর্ষ থেকে। এখন বারান্দায় যারা অবস্থান করছেন তারা সবাই (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষ, অর্থাৎ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

গতকাল সোমবার(২৪অক্টোবর) দিবাগত রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাংয়ের’ তান্ডবে বারান্দায় অবস্থায় করতে পারছেন না তারা। বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ার ঝাপটায় বইখাতা,বিছানা পত্র সব ভিজে একাকার।

এতো রাতে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই৷ কেউ অবস্থান নিয়েছেন মসজিদের হলে। আবার কেউ অন্য কোনো হলে, অন্য কোনো বন্ধুর রুমে জায়গা খুঁজতে বেরিয়েছেন। একান্ত নিরুপায় হয়ে স্রষ্টা কে স্মরণ করছেন অনেকেই।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ বলেন আমরা ৩য় বর্ষের সবাই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দায় থাকি, আজকে ঝড়ে এতো বাজে পরিস্থিতি হইছে, ঘুমানোর মতো পরিস্থিতি নাই। উপর থেকে ছাদ ভেঙে পরলো দেখলাম একজনের বেডে, বইগুলো ভিজে যাচ্ছে, জামাকাপড় উড়ে যাচ্ছে।

এস এম হলের আরেক শিক্ষার্থী মামুন খান। তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে (২০১৯-২০২০) শিক্ষাবর্ষের পর আর নতুন করে কোন শিক্ষার্থী এ্যালোটমেন্ট দেয়া হয়নি, তার মানে এই হলের সবচেয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা সবাই (২০১৯-২০২০) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

বিগত ৩ শিক্ষাবর্ষ হতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দায় অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকেন যারা প্রায় সবাই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিগত তিনবছর ধরে আমরা বারান্দায় থাকছি, আমাদের জিনিসপত্রের কোন নিরাপত্তা তো নেই ঝড় বৃষ্টি এবং শীতের সময় বারান্দায় অবস্থান করাও অসম্ভব হয়ে যায়। তিনবছর ধরে আমরা শতাধিক শিক্ষার্থী বারান্দায় মানবেতর ভাবে থেকে যাচ্ছি অথচ আমাদের ব্যাপারে সর্বমহল যেন দেখেও না দেখার ভান করে আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মজিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,হলের বারান্দায় কোনো শিক্ষার্থী থাকার কথা না। আমরা সেখানে তাদেরকে অবস্থান করতে নিষেধ করেছি,কেননা সেটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। আর আমার কাছে রিপোর্ট এসেছে সেখানে যারা অবস্থান করছে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র।

সেখানে সবাই তৃতীয় বর্ষের বৈধ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে বলে জানালে তিনি বলেন,তাহলে তাদের আগামীকাল আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন। আর আজকের(সোমবার) জন্য তাদেরকে টিভি রুমে অবস্থান করতে বলবো। আমাদের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কোনো মেয়াদোত্তীর্ন শিক্ষার্থী হলে থাকবে না। আর যে রুম আছে সেখানে আমাদের সকল বৈধ শিক্ষার্থী সিট হয়ে যাবে। ঝূঁকিপূর্ণ বিল্ডিংটা ভেঙে নতুন প্ল্যান পাশ হয়ে গেছে,খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে।