গুচ্ছে ভর্তি প্রক্রিয়া প্রলম্বিত হওয়ায় হতাশায় ভর্তিচ্ছুরা
- Update Time : ০৫:৫৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
- / 225
মিনহাজুল ইসলাম, জবি :
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় গত ৩০ জুলাই বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে। শেষ হয় ২০ আগস্ট বাণিজ্য ইউনিটের পরীক্ষা মধ্য দিয়ে। এরপর বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য ইউনিটের ফলপ্রকাশ হয় যথাক্রমে ৪, ১৬ ও ২৩ আগস্ট। ফল প্রকাশ শেষ হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৩৮ দিন। ততদিনে নেয়া হয়নি ভর্তি আবেদন শুরুর কোনো উদ্যোগ৷ সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গুচ্ছ কমিটির এক সভা শেষে ঘোষণা করা হয় অক্টোবর মাসের ১৩ তারিখে প্রকাশিত হবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি এবং ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হবে আবেদন। সে হিসেবে ২৩ আগস্ট ফল প্রকাশ শেষ হওয়ার ৫৪ দিন পর ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হবে ভর্তির আবেদন!
এরপর আবেদন শেষে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাঠদান শুরু করতে লেগে যাবে আরও কয়েক মাস। এদিকে এই ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই করোনার ধাক্কায় বছরখানেক পিছিয়ে গেছেন। সেখানে এভাবে অকারণে বিলম্ব করে তাদের শিক্ষাজীবনকে প্রলম্বিত করা হচ্ছে বলে মত দেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ইতোমধ্যে অধিকাংশ বিভাগ পাঠদান শুরু করে দিয়েছে। রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের দিকে। কেবল পিছিয়ে আছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অথচ, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গুচ্ছের কাছাকাছি সময়ে। কিন্তু ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে হেঁয়ালিপনা করার জন্যই কেবল পিছিয়ে আছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এদিকে গতবারের ভর্তি পরীক্ষার পর ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মাস দুই-তিনমাসের বেশি সময় লেগে গিয়েছিল। বিশেষত শেষদিকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ করেও পাচ্ছিল না শিক্ষার্থী। কেননা, মাসকে মাস বসে না থেকে অনেক শিক্ষার্থীই তখন বেসরকারি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করে দিয়েছিলেন। অনেকে আবার রোজ রোজ ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘাঁটার আগ্রহ হারিয়ে ভর্তির মেধাতালিকা সময়মতো না দেখায় চান্স পেয়েও বঞ্চিত হন ভর্তির সুযোগ থেকে। এদিকে এবার গতবারের মতো দীর্ঘমেয়াদী ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য হতাশায় ভুগে অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও গুচ্ছ ভর্তির ফলাফলে মেধাক্রম প্রকাশ না করায় ভর্তির সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে সন্দিহান হয়েও অনেকে বেসরকারি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মুনিরা আক্তার আশা বলেন, “মাস দেড়েক হতে চলল আমরা পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল পেয়ে বসে আছি। ফল প্রকাশের পর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে দেড়মাস লেগে যায়? গুচ্ছ কমিটি এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হয় কী করে?”
আরেক শিক্ষার্থী মোঃ শাকিল রানা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বসে থাকলাম। এখন বলা হলো আবেদন শুরু হবে অক্টোবরের ১৭ তারিখ থেকে। গতকাল (২৯ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আরও ১৮ দিন পর থেকে শুরু হবে আবেদন! তাহলে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে কবে? এইবছরেও হয়ত ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হবেনা। সেক্ষেত্রে ২০২১ সালে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৩ সালে পা দিবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনিতেই একবছর পিছিয়ে আছি। আরও অন্তত একবছর পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে আমাদের।”
এবিষয়ে জানতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার দৈনিক মানবকণ্ঠকে বলেন, “এটাতো কারো একক সিদ্ধান্তে হয়না। একটা সেন্ট্রাল কমিটি আছে, সেই কমিটির সম্মিলিত সিদ্ধান্তে কাজ হয়। আমি চাইলে একা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। এখানে একসাথে ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সবকিছু হয়।”
বিলম্বে ভর্তি শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের হাতাশার বিষয়ে তিনি বলেন, “এবার গতবছরের মতো দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে না। একদিনেই প্রকাশ হবে মেধাতালিকা। তারপর ভর্তিচ্ছুরা ঘরে বসেই বিষয় পছন্দ, মাইগ্রেশান ইত্যাদি করতে পারবে। সারাদেশে দৌড়াদৌড়ি করা লাগবেনা। অনেকটা মেডিক্যালের ভর্তি পদ্ধতির মতো হবে। আশাকরি এইবছরের ভেতরই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে।”