ঢাবি প্রশাসন ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ ও প্রতিশোধমূলক’ আচরণ করছে : সামিয়া রহমান
- Update Time : ০১:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ অগাস্ট ২০২২
- / 181
ঢাবি প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে আগাম অবসরের অনুমতি দেওয়ার পর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সামিয়া রহমানের কাছে পাওনা হিসেবে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা দাবি করেছে ৷ আর সামিয়া রহমান বলছেন, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘প্রতিহিংসা’। কিসের ভিত্তিতে টাকা চাওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
গবেষণা নিবন্ধে ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে শাস্তি হিসেবে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সামিয়া রহমান গত বছরের ৩১ আগস্ট উচ্চ আদালতে রিট করেন৷ ৪ আগস্ট উচ্চ আদালত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তকে ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ বলে রায় দেন৷
এর মধ্যে চার মাসের অর্জিত ছুটি (আর্নড লিভ) নিয়ে গত বছরের শেষ দিকে সামিয়া রহমান বিদেশে যান৷ ছুটির মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ মার্চ। ওই ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ফেব্রুয়ারিতে বিনা বেতনে আরও এক বছরের ছুটি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন সামিয়া। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই ছুটি অনুমোদন করেনি। এরপর ৩১ মার্চ সামিয়া রহমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগাম অবসর চেয়ে আবেদন করেন৷ গত ২৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সামিয়াকে আগাম অবসরের অনুমতি দেয়৷
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এক চিঠিতে সামিয়া রহমানকে বলা হয়, ‘৩১ মার্চের চিঠির বরাতে ও ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে জানানো যাচ্ছে যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আপনাকে দেনা-পাওনা সমন্বয় সাপেক্ষে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে বিধি অনুযায়ী আগাম অবসর গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আপনার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ আপনার প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদসহ জমা আছে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ২১৬ টাকা৷ হিসাব পরিচালকের দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আপনার দেনা ১১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা৷ এই দেনা জনতা ব্যাংকের টিএসসি শাখায় জমা দিয়ে তার রসিদ রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা দিতে হবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আচরণকে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ ও প্রতিশোধমূলক’ আখ্যা দিয়ে সামিয়া রহমান বলেছেন, তারা আমার আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসব করেছে। আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। আবারও আমি জয়ী হবো।
তিনি দাবি করেছেন, ৪ আগস্ট তাঁর পক্ষে আদালতের রায় আসার পর গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে এক ই-মেইলে তাঁকে পাওনা চেয়ে ওই চিঠি পাঠানো হয়৷ যদিও চিঠিতে তারিখ লেখা রয়েছে ৩ আগস্ট৷ সামিয়া রহমান বলছেন, ৩ আগস্টের চিঠি ৮ আগস্ট পাঠানোর পেছনে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না৷ কিসের ভিত্তিতে পাওনা দাবি করা হলো, তা–ও চিঠিতে উল্লেখ নেই৷ উচ্চ আদালতে রিটে হেরে গিয়ে প্রতিহিংসাবশত তাঁকে হয়রানি করার জন্যই এ চিঠি দেওয়া হয়েছে৷ এর বিরুদ্ধেও তিনি আদালতে যাবেন৷ সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হারবে বলে তাঁর বিশ্বাস৷
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সামিয়া রহমান মুঠোফোনে সাংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমার অর্জিত ছুটি ছিল৷ এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার আরও অর্জিত ছুটি পাওনা আছে৷ দ্বিতীয় দফায় ফেব্রুয়ারিতে আমি বিনা বেতনে ছুটির আবেদন করি৷ সেটা যখন অনুমোদন করা হয়নি, তখন ৩১ মার্চ আমি স্বেচ্ছায় অবসর চাই৷ যেখানে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমার অর্জিত ছুটি ছিল, সেখানে কীভাবে আমাকে পাঁচ মাস আগে থেকে (গত বছরের ১৫ নভেম্বর) অবসর দেওয়া হলো৷ কিসের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে যে আমার কাছে পাওনা আছে? চিঠিতেও লেখা নেই কিসের ভিত্তিতে টাকা? ব্যাপারটা হাস্যকর৷ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিরা যে মিথ্যাবাদী, তা উচ্চ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে৷ ষড়যন্ত্র করে যারা একজন মানুষকে মানহানি করে এত বড় ক্ষতি সাধন করতে পারে, টাকা তো তাদের কাছে তুচ্ছ ব্যাপার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘নোংরা লোকেরা’ আবারও প্রতিহিংসায় মেতে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন সামিয়া রহমান৷ তিনি বলেন, বেতন-ভাতাসহ অর্জিত ছুটি প্রতিটি মানুষের অধিকার৷ এখনো আমার অর্জিত ছুটি রয়ে গেছে৷ সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবসর দিচ্ছে৷ কিন্তু উচ্চ আদালত তো আমাকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা দিতে বলেছেন৷ আমি অবসর নিলে নেব সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে৷
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নিয়মনীতি অনুসরণ করেই এ ধরনের চিঠি দেওয়া হয়ে থাকে৷ এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দপ্তরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন৷
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত হিসাব পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, এ ধরনের কোনো চিঠি তিনি দেখেননি৷ না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না৷ সাধারণত রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে এসব চিঠি পাঠানো হয়ে থাকে৷