রাবিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ

  • Update Time : ০২:৩৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২
  • / 156

রাবি প্রতিনিধি:

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সনাতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ‘সনাতনী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দ’র ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

ফারসি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী দীপু রায়ের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পদক আশরাফুল ইসলাম খান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি বিশ্বনাথ শিকদারসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী।

মানববন্ধনে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শুভ্রা রাণী ছন্দ বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেখানেই এসব সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো ঘটছে এর পেছনে রয়েছে একদল উগ্রবাদী, মূর্খ মানুষের ইন্ধন। ধর্মের প্রতি আনুগত্য আর ধর্মান্ধতা এক জিনিস নয়। কোনো ধর্মেই এ কথা বলা নেই যে ধর্ম অবমাননা করো। যারা এটা করে আমি বলব তাদের নিজের ধর্মই জানেনা বা পালন করে না। সাম্প্রদায়িক বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, একটু ছোঁয়া দিলেই পুরো বাংলাদেশ জ্বলে যাবে। একদিকে বিজ্ঞান ও অন্যদিকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমি সমস্ত অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের বিনীতভাবে বলতে চাই সাম্প্রদায়িকতাকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে যেমন মুক্ত বুদ্ধির চর্চা ছিল, এখন সেরকম পরিবেশ নেই। সন্তানদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের বুঝাতে হবে মানুষ মানুষের জন্য। সমাজে কিভাবে চলতে হয়। এ সত্যটা তাদের উপলব্ধি করতে দিতে হবে। সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে একজন শিক্ষককে কারাবরণ করতে হয়েছে তা দেশের শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জাজনক। হৃদয় মন্ডল শুধু বিজ্ঞানের ব্যাখা দিয়েছেন। কিন্তু তার শিক্ষাকে ধর্মীয় দিকে পরিচালিনা করে হয়রানি ও হামলা করা হলো। আমি নিজে একজন মুসলিম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে অথচ পরিস্থিতি আজ ভিন্ন। ধর্ম নিয়ে রেষারেষি চলছেই দেশে। নওগায় স্কুল ড্রেস না পড়ে আসার কারণে শিক্ষিকার সামান্য শাসনকে ধর্মীয় দিকে পরিচালনা করে হামলা চালানো হলো। আমার মনে হয় এক সুযোগসন্ধানী মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী গোষ্ঠী এই কাজ সংঘটিত করছে। আমাদের তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সচেতন হতে হবে সকলকেই।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, ধর্ম দিয়ে বিজ্ঞান বিবেচনা করলে আমরা যে জায়গায় যেতে চাচ্ছি, বিজ্ঞান শিক্ষায়, কারিগরি শিক্ষায় যে উচ্চতায় পৌঁছতে চাইছি তা কোনোদিনই পারবো না। আজকে যারা হৃদয় মণ্ডলের ক্লাসের বিরোধিতা করছেন তারা যে বড় ধার্মিক তা কিন্তু নয়, তারা ধার্মিকদের কোমল জায়গা ব্যবহার করছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


রাবিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ

Update Time : ০২:৩৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২

রাবি প্রতিনিধি:

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সনাতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ‘সনাতনী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দ’র ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

ফারসি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী দীপু রায়ের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পদক আশরাফুল ইসলাম খান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি বিশ্বনাথ শিকদারসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী।

মানববন্ধনে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শুভ্রা রাণী ছন্দ বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেখানেই এসব সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো ঘটছে এর পেছনে রয়েছে একদল উগ্রবাদী, মূর্খ মানুষের ইন্ধন। ধর্মের প্রতি আনুগত্য আর ধর্মান্ধতা এক জিনিস নয়। কোনো ধর্মেই এ কথা বলা নেই যে ধর্ম অবমাননা করো। যারা এটা করে আমি বলব তাদের নিজের ধর্মই জানেনা বা পালন করে না। সাম্প্রদায়িক বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, একটু ছোঁয়া দিলেই পুরো বাংলাদেশ জ্বলে যাবে। একদিকে বিজ্ঞান ও অন্যদিকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমি সমস্ত অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের বিনীতভাবে বলতে চাই সাম্প্রদায়িকতাকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে যেমন মুক্ত বুদ্ধির চর্চা ছিল, এখন সেরকম পরিবেশ নেই। সন্তানদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের বুঝাতে হবে মানুষ মানুষের জন্য। সমাজে কিভাবে চলতে হয়। এ সত্যটা তাদের উপলব্ধি করতে দিতে হবে। সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে একজন শিক্ষককে কারাবরণ করতে হয়েছে তা দেশের শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জাজনক। হৃদয় মন্ডল শুধু বিজ্ঞানের ব্যাখা দিয়েছেন। কিন্তু তার শিক্ষাকে ধর্মীয় দিকে পরিচালিনা করে হয়রানি ও হামলা করা হলো। আমি নিজে একজন মুসলিম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে অথচ পরিস্থিতি আজ ভিন্ন। ধর্ম নিয়ে রেষারেষি চলছেই দেশে। নওগায় স্কুল ড্রেস না পড়ে আসার কারণে শিক্ষিকার সামান্য শাসনকে ধর্মীয় দিকে পরিচালনা করে হামলা চালানো হলো। আমার মনে হয় এক সুযোগসন্ধানী মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী গোষ্ঠী এই কাজ সংঘটিত করছে। আমাদের তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সচেতন হতে হবে সকলকেই।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, ধর্ম দিয়ে বিজ্ঞান বিবেচনা করলে আমরা যে জায়গায় যেতে চাচ্ছি, বিজ্ঞান শিক্ষায়, কারিগরি শিক্ষায় যে উচ্চতায় পৌঁছতে চাইছি তা কোনোদিনই পারবো না। আজকে যারা হৃদয় মণ্ডলের ক্লাসের বিরোধিতা করছেন তারা যে বড় ধার্মিক তা কিন্তু নয়, তারা ধার্মিকদের কোমল জায়গা ব্যবহার করছে।