পাঁচ মাসেও মেলেনি জবি শিক্ষার্থীর আকবর হত্যার রহস্য

  • Update Time : ০৫:৩০:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 158

জবি প্রতিনিধি:

দীর্ঘ পাঁচমাস পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ১২তম ব্যাচের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আকবর হোসাইন খান রাব্বি হত্যাকাণ্ডের কোনো রহস্য মেলেনি।

বর্তমানে মামলাটি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় থাকলেও দীর্ঘসময় পরেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি না পেয়ে তাদের পরিবার চান মামলাটি পিবিআই বা সিআইডির অধীনে দেয়া হোক। এজন্য তাদের পরিবার থেকে একটি লিখিত আবেদন করলেও মামলাটি এখনো আগের অবস্থাতেই রয়েছে।

এছাড়া তার পরিবার থেকে মামলায় উল্লেখিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের এখন অব্দি জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নেয়নি পুলিশ। এ বিষয়ে তার পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে আকবর হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ও আকবরের বড় বোন পাবণী খানম আঁখি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশব্যাপী আলোচিত গত ২৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী “মো: আকবর হুসাইন খান রাব্বি” পুরান ঢাকার মেস থেকে বেরিয়ে যান এবং তার সহপাঠীরা বিভিন্ন সময়ে ফোনে যোগাযোগ করলে আশেপাশে রয়েছেন বলে জানান। সর্বশেষ রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে যখন আকবরের সাথে যোগাযোগ করা হয়, তখন একটু পর বাসায় ফিরবেন বলে তার বড় বোনকে জানান। এরপর রাত ৮টা ৫৩ মিনিটে জানা যায়, আকবরকে চট্টগ্রামের একটি ফ্লাইওভার থেকে কে বা কারা নিচে ফেলে দিয়েছে এবং প্রতক্ষ্যদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন। এসময় তার কোমরের বাম পাশে ভোতা অস্ত্রদিয়ে গভীর এক ক্ষত ছিল। ফ্লাইওভার থেকে ফেলে দেয়ায় তার ব্রেইন অনেকাংশে থেঁতলে যায় এবং ব্রেইনে রক্তক্ষরণ হয়ে। টানা ৫ দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার পর ১ সেপ্টেম্বর ভোরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

এদিকে দীর্ঘ পাঁচমাস পার হয়ে গেলেও অপরাধীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ এখনো সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। কে বা কারা, গত ২৭ আগস্ট রাতে পরিকল্পনা মাফিক ঢাকা হতে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে, তা এখনও এক রহস্য রয়ে গেছে। আকবরের মোবাইল ফোনটি ঘটনার এক দুইদিনের মধ্যেই থানা থেকে লক খুলতে গিয়ে হার্ড রিসেট দেয়া হয়, ফলে তার ফোন থেকে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। পুলিশ এখনো সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি বলে জানায়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম খুলসী থানা পুলিশের তদন্ত এবং প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে স্পষ্ট যে, প্রাথমিক তদন্তে চট্টগ্রাম খুলসী থানা পুলিশ এটিকে পরিকল্পনা মাফিক হত্যা বলে নিশ্চিত করে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সহপাঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের একজন সহপাঠীর এমন রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। দ্রুত সঠিক তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হলে অনতিবিলম্বে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো। তারা সকলেই শঙ্কা প্রকাশ করে, তদন্তে এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণে এর অগ্রগতি ব্যহত হচ্ছে। এজন্য তারা বাংলাদেশ পুলিশের দায়সারা ভাবকে প্রধান কারণ মনে করছেন।

তারা আরও বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনেক মেধা, শ্রম দিয়ে এ পর্যায়ে আসে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে এতগুলো বছর পড়াশোনা, কত স্বপ্ন কত আশা, আকবর এর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হওয়ার, সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। ঠিক ফাইনাল পরীক্ষার আগে তার এ রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব সকলের জন্য কষ্টকর।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মফিজ বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, তার ল্যাপটপ সিআইডির ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যাবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


পাঁচ মাসেও মেলেনি জবি শিক্ষার্থীর আকবর হত্যার রহস্য

Update Time : ০৫:৩০:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

জবি প্রতিনিধি:

দীর্ঘ পাঁচমাস পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ১২তম ব্যাচের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আকবর হোসাইন খান রাব্বি হত্যাকাণ্ডের কোনো রহস্য মেলেনি।

বর্তমানে মামলাটি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় থাকলেও দীর্ঘসময় পরেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি না পেয়ে তাদের পরিবার চান মামলাটি পিবিআই বা সিআইডির অধীনে দেয়া হোক। এজন্য তাদের পরিবার থেকে একটি লিখিত আবেদন করলেও মামলাটি এখনো আগের অবস্থাতেই রয়েছে।

এছাড়া তার পরিবার থেকে মামলায় উল্লেখিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের এখন অব্দি জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নেয়নি পুলিশ। এ বিষয়ে তার পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে আকবর হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ও আকবরের বড় বোন পাবণী খানম আঁখি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশব্যাপী আলোচিত গত ২৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী “মো: আকবর হুসাইন খান রাব্বি” পুরান ঢাকার মেস থেকে বেরিয়ে যান এবং তার সহপাঠীরা বিভিন্ন সময়ে ফোনে যোগাযোগ করলে আশেপাশে রয়েছেন বলে জানান। সর্বশেষ রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে যখন আকবরের সাথে যোগাযোগ করা হয়, তখন একটু পর বাসায় ফিরবেন বলে তার বড় বোনকে জানান। এরপর রাত ৮টা ৫৩ মিনিটে জানা যায়, আকবরকে চট্টগ্রামের একটি ফ্লাইওভার থেকে কে বা কারা নিচে ফেলে দিয়েছে এবং প্রতক্ষ্যদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন। এসময় তার কোমরের বাম পাশে ভোতা অস্ত্রদিয়ে গভীর এক ক্ষত ছিল। ফ্লাইওভার থেকে ফেলে দেয়ায় তার ব্রেইন অনেকাংশে থেঁতলে যায় এবং ব্রেইনে রক্তক্ষরণ হয়ে। টানা ৫ দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার পর ১ সেপ্টেম্বর ভোরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

এদিকে দীর্ঘ পাঁচমাস পার হয়ে গেলেও অপরাধীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ এখনো সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। কে বা কারা, গত ২৭ আগস্ট রাতে পরিকল্পনা মাফিক ঢাকা হতে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে, তা এখনও এক রহস্য রয়ে গেছে। আকবরের মোবাইল ফোনটি ঘটনার এক দুইদিনের মধ্যেই থানা থেকে লক খুলতে গিয়ে হার্ড রিসেট দেয়া হয়, ফলে তার ফোন থেকে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। পুলিশ এখনো সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি বলে জানায়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম খুলসী থানা পুলিশের তদন্ত এবং প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে স্পষ্ট যে, প্রাথমিক তদন্তে চট্টগ্রাম খুলসী থানা পুলিশ এটিকে পরিকল্পনা মাফিক হত্যা বলে নিশ্চিত করে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সহপাঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের একজন সহপাঠীর এমন রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। দ্রুত সঠিক তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হলে অনতিবিলম্বে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো। তারা সকলেই শঙ্কা প্রকাশ করে, তদন্তে এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণে এর অগ্রগতি ব্যহত হচ্ছে। এজন্য তারা বাংলাদেশ পুলিশের দায়সারা ভাবকে প্রধান কারণ মনে করছেন।

তারা আরও বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনেক মেধা, শ্রম দিয়ে এ পর্যায়ে আসে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে এতগুলো বছর পড়াশোনা, কত স্বপ্ন কত আশা, আকবর এর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হওয়ার, সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। ঠিক ফাইনাল পরীক্ষার আগে তার এ রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব সকলের জন্য কষ্টকর।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মফিজ বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, তার ল্যাপটপ সিআইডির ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যাবে।