শাবিতে হামলার প্রতিবাদে রাবিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ককের অবস্থান কর্মসূচি
- Update Time : ০৩:২৪:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২
- / 168
আসিফ আজাদ সিয়াম, রাবি প্রতিনিধি:
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারী) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে শিক্ষক নেটওয়ার্কের ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
এসময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভিসির পদত্যাগের দাবি যে একটি ন্যায্য দাবি। ছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যে যদি সুসম্পর্ক বজায় না থাকে, ছাত্রদের যদি মত প্রকাশের পরিসর না থাকে, যদি তাদের দাবি না মানা হয়, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভালোভাবে চলতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, শাবিপ্রবিতে ভয়ঙ্কর দুইটা ঘটনা ঘটেছে। একটা হচ্ছে, উনি পুলিশবাহিনী দ্বারা পিটিয়ে ছাত্রদের সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
অন্যটা হচ্ছে, উনি জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে অত্যন্ত অশোভন মন্তব্য করেছেন। মূলত এ দুটি কারণেই আমি মনে করি, একজন ভাইস চ্যান্সেলরের আর কোন মোরাল রাইট থাকে না, কোন নৈতিক অধিকার থাকে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকার। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা একটি যোক্তিক দাবিতে ১২০ ঘণ্টার বেশি অনশনে আছে, তাদের দিকে না তাকিয়ে, তাদের সাথে সুরাহার চেষ্টা না করে। সরকার যদি এটার পক্ষে সমর্থন না দেয়, এটা না মানে, তাহলে সরকার একটা বড় ভুল করবে। সরকারের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনাস্থা আরো বেড়ে যাবে।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা বলেন , বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্র চর্চার জায়গা, অধ্যাদেশে ভিসি নির্বাচনের কথা বলা আছে। কিন্তু গত ত্রিশ বছর ধরে এই অধ্যাদেশ মতো ভিসি নিয়োগ চলে না। অনির্বাচিত ভিসি ও প্রশাসকের কাজ থাকে তাদের দল তৈরি করা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভিসি নির্বাচন চাই। শাবির ঘটনা এক দিনের বিস্ফোরণ নয়। ফুঁসে থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ভিসি প্রয়োজন।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘শাবিতে খুব বড় কোনো ঘটনা ছিল না। প্রশাসন চাইলেই এটার খুব সুন্দর একটা সমাধান করতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ফলশ্রুতিতে যেটা আজ ভিসি বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। যারা তৃতীয় পক্ষের খোঁজ করছেন, সেই তৃতীয় পক্ষ কারা? সেই ছাত্রলীগ, সেই পুলিশ। তারা তো সরকারের সহায়ক শক্তি। এই সমস্যার সমাধানের ওপর নির্ভর করবে আগামীতে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে কী ধরনের পরিস্থিতি ঘটবে। তাই এই সমস্যার একটা সুষ্ঠু ফয়সালা জরুরি। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত উপাচার্য চাই।’
সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর শেষ করে এখনো একই প্রক্রিয়ায় ছাত্র নির্যাতন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দেললনরত শিক্ষার্থীদের উপর সরাসরি দলের হামলা, পুলিশি হামলা নতুন কোন ঘটনা নয়।
যে কোন আন্দোলন হলে তার মধ্যে আমরা ষড়যন্ত্র খোঁজার চেষ্টা করছি। কিন্তু একটা ভাবছি না গত ১৪০ ঘন্টা ধরে শিক্ষার্থীরা যে অনশন করছে না খেয়ে আছে যেকোন সময় একটা বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা ষড়যন্ত্রের গন্ধ শুকছি, আমরা তৃতীয় পক্ষ খুজছি, আমরা সরকার পতন সহ নানা কথা ভাবছি।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকলে শিক্ষকের কোন মূল্য থাকে না, শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার্থীদের কোন মূল্য থাকে না। এটা একটা ভাইস-ভার্সা পজিশন। এরকর একটা অবস্থায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী যখন একজন ভিসির বিরুদ্ধে মুভমেন্ট করে এটা নিয়ে তো কথা বলার কিছু নাই। সরকার যদি মনে প্রাণে চায় এই সমস্যা সমাধান করা কোন ব্যাপার নয়। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনা উচিত। তাদের হলে ফিরিয়ে আনা উচিত। মুভমেন্ট করা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এই সমস্যার সমাধান অতি দ্রুত হওয়া উচিত।
কর্মসূচিতে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তরের সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রনজু হাসানসহ প্রমুখ।