আব্দুল আজিজ ক্রান্তিলগ্নের ক্যারিশমেটিক নেতা ছিলেন: তাপস
- Update Time : ০৫:০৭:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১
- / 171
নিজস্ব প্রতিনিধি:
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল আজিজকে দলের ও দেশের ক্রান্তিলগ্নের ক্যারিশমেটিক নেতা, প্রস্ফুটিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
.
আজ (শনিবার) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রয়াত এম আব্দুল আজিজের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
.
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, একজন নেতার বৈশিষ্ট্য বা কারিশমা, আদর্শ-নীতির প্রতি অবিচলতা, আপোষহীন ব্যক্তিত্ব প্রস্ফুটিত হয়, বিকশিত হয় যখন একটি ক্রান্তিলগ্ন আসে দলের, দেশের ক্রান্তিলগ্ন। এ সময় যারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, যারা সাহসিকতায় দেখাতে পারে আপোষহীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, সংগঠনকে দাঁড় করাতে পারে, তারাই হলেন আসল নেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। প্রয়াত আব্দুল আজিজ তেমনি ছিলেন নেতা ছিলেন বলেই আমরা তাকে আজ তাঁকে স্মরণ করছি, স্মরণ সভায় দাঁড়িয়েছি।
.
ষাটের দশকে রাজনীতির হাতেখড়ি থেকে শুরু করে প্রয়াত আব্দুল আজিজ কোনদিন কোন আঁকা-বাঁকা পথে হাঁটেননি উল্লেখ করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, তিনি সোজাসাপ্টা মানুষ ছিলেন, নিরহংকারী ব্যক্তিত্ব ছিলেন, নির্লোভী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কোনদিন কোন কিছুর আশায় – দল থাকে এটা দেবে, দল ক্ষমতায় যাবে আমি এই সম্পদের মালিক হব, এই ব্যবসা করব বা এটা চাইব, নেত্রীর কাছ থেকে এটা নেব – এগুলো তিনি কোনদিন চিন্তা করেননি। তুমি সবসময় চিন্তা করছেন – সংগঠনকে কিভাবে বেগবান, গতিশীল করা যায়? নেতাকর্মীরা কে খারাপ অবস্থায় আছে, তাকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়? এক কথায় তিনি অভিভাবকত্বের ভূমিকায় থেকে নেতা-কর্মী-সংগঠনকে আলিঙ্গন করে রেখেছিলেন।
.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলিষ্ঠভাবে করোনা মোকাবিলা করে চলেছেন উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এরই মাঝে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, অনেক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। টিকা কিন্তু দেশে চলে এসেছে। এটাই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রমাণ। যে যাই বলুক না কেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যেটা বলেন সেটাই আসলে বাস্তব হয়। করোনার মহামারীর টিকা নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, দলীয় নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে সেসব বিভ্রান্তির সঠিক জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ছোটবেলায় আমরা সবাই টিকা নিয়েছি। একটা নয় – চার, পাঁচটা করে নিতে হয়েছে। হামের টিকা বলেন, পোলিও ওষধ খাওয়ানো বলেন, চিকেন পক্স এর টিকা বলেন – সবারই শরীরে টিকার চিহ্ন রয়েছে। ছোটবেলায় আমাদের টিকা নেওয়ার পর ডাক্তাররা যেমন বলতেন – রাতের বেলা একটু জ্বর আসতে পারে, জ্বর তিন দিন পর্যন্ত থাকতে পারে, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। করোনার টিকার তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এই টিকা দেওয়ার পর হয়তো একটু গা গরম হতে পারে, আবার ঠিক হয়ে যাবে। সুতরাং এটা এমন কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া না যেটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে হবে, গুজব ছড়াতে হবে। তাই সরকারের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী যার যখন নাম আসবে তখন আপনারা সবাই নির্ভয়ে টিকা নিন। কেউ কোন বিভ্রান্তিতে পড়বেন না।
.
আব্দুল আজিজের সাথে মধুর সম্পর্ক ছিল, অত্যন্ত ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন জানিয়ে তাপস বলেন, প্রথম যেদিন দেখা হল – তিনি আমাকে মামা বলে সম্বোধন করলেন। আমি কোনদিন জিজ্ঞেস করিনি – কেন তিনি আমাকে মামা বলতেন? সাধারণত বরিশালের লোকেরাই আমাকে মামা বলে ডাকেন কারণ আমার নানাবাড়ি যেহেতু বরিশাল। তিনি আমাকে মামা বলে, আলিঙ্গন করে প্রথম দিন থেকে এতটাই কাছে নিয়ে টেনে নিয়েছিলেন যে, আমি আর কোনদিন ওনাকে জিজ্ঞেস করিনি। উনি আমাকে মামা বলতেন, আমিও ওনাকে মামা বলে সম্বোধন করতাম।
.
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সংগঠনকে বেগবান করতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমি অনুরোধ করব, তৃণমূল থেকেই যেন সংগঠনকে সাজিয়ে তোলা হয়। একটি সংগঠনের বড় উপাদান হলো শৃঙ্খলা। চেইন অব কমান্ড মানতে হবে, সৃষ্টি করতে হবে। কোথাও যেন এটার ব্যত্যয় না হয় এবং তৃণমূল থেকে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন সংগঠনের অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করতে হবে। কারণ দল এখন ক্ষমতায় অনেকে আসতে চাইবে অনেকে মনে করবে এখানে মধু আছে। কিন্তু যারা তৃণমূল থেকে উঠে আসে তারা মধুর জন্য দল করে না। তারা ত্যাগ স্বীকার করে, দলকে ভালোবাসে বলেই দল করে। ইউনিট আওয়ামী লীগ থেকে ঢেলে সাজাতে হবে তারপর ওয়ার্ড তারপর থানা তারপর মহানগর। আমাদের এটা মনে করলে হবে না যে, পঁচাত্তর আর আসবে না, ওয়ান-ইলেভেন আর আসবে না। কারণ, ষড়যন্ত্রকারীরা সারাজীবন ষড়যন্ত্র করে যাবে, অসন্তোষ সৃষ্টির পাঁয়তারা করে যাবে। আমাদেরকে সদা জাগ্রত থাকতে হবে এজন্য সংগঠনের সাথে বড় আর কিছু নাই।
.
এ সময় প্রয়াত আব্দুল আজিজের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, আমার ওপর যে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, সেটাকে ধারণ করে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন একসাথে থেকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা ঢাকাকে সাজিয়ে তুলব। আমাদের লক্ষ্য একটি – জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যে লক্ষ্য দিয়েছেন – আমরা সম্মিলিতভাবে, এক সাথে, এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঢাকাকে আমরা উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলব।
.
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহম্মেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে স্মরণ সভা ও দেয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তার মাসুদ, ডা: দীলিপ কুমার রায় এবং প্রয়াত এম আবদুল আজিজের সন্তান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর বিন আব্দাল আজিজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Tag :