রক্তদান নিয়ে যত ভুল ধারণা

  • Update Time : ০৪:০৭:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অগাস্ট ২০২১
  • / 397

আমাদের দেশে একটা সময় ছিল রক্ত না পাওয়ার কারনে মানুষের মৃত্যু হতো। কিন্তু বর্তমানে এ ধারণা থেকে মানুষ অনেকটা বের হতে পেরেছে। তারপরও রক্তদান নিয়ে মানুষের মাঝে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়ে গেছ।

এসব বিষয় নিয়ে বিডি সমাচারের সাথে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালের রক্তরোগ ও রক্ত ক্যান্সার বিভাগের কনসাল্ট ডা.জামাল উদ্দিন তানিন।  বিস্তারিত জানাচ্ছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম:

বিডি সমাচারঃ মূলত কারা রক্ত দিতে পারবেন?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ ১৮- ৫০ বছরের মধ্যে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ যেকোন মানুষ রক্তদান করতে পারবেন। তাছাড়া রক্তদাতার এমন কোন রোগ যেন না থাকে যাতে রক্তদান করলে ক্ষতি হয় এবং রক্তগ্রহীতারও রক্ত গ্রহণের ফলে ক্ষতি না হয়। রক্তদানের ক্ষেত্রে পুরুষের ওজন নূন্যতম ৫৫’র অধিক এবং মহিলাদের ৫০’র অধিক ধরা হয়।

বিডি সমাচারঃ রক্তদানের আগে ও পরে করণীয় কি?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ রক্তদানের আগে রক্তদাতা পরীক্ষা করে নিবেন তার বড় কোন সমস্যা আছে কিনা? যেমন- হার্ট, উচ্চরক্তচাপ, কিডনিতে সমস্যা ইত্যাদি। রক্তদানের আগে স্যালাইন পানি খেয়ে নিবেন। জ্বর মেপে নিবেন ও পালস ঠিক আছে কিনা। রক্তদাতা রক্ত দেওয়ার পর ৫-৬ মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নিবেন। তারপর ওঠে স্যালাইন বা ডাবের পানি খাবেন। রক্ত দেওয়ার ফলে শরীরের সূচের দাগ কিছুদিনের মধ্যেই চলে যায়।

বিডি সমাচারঃ নিজের ভাই-বোন, বাবা-মা এবং আত্মীয়ের রক্ত নেওয়া ভালো?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ যত নিকট আত্মীয় তাদের থেকে রক্ত নেওয়া এক প্রকার অপরাধ। ভালোর তো কোন প্রশ্নই আসে না। আপন ভাই- বোন, বাবা-মা সন্তান, এসব সম্পের্কর কেউ একে অপরকে রক্ত দিবে না। যদি নিতেই হয় তবে দূরের কোন আত্মীয় থেকে । সবচেয়ে ভালো বন্ধুবান্ধব ও দূরের কারো কাছ থেকে নেওয়া।

বিডি সমাচারঃ রক্তশূন্যতা হলেই কি রক্ত নেওয়া উচিত?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ রক্তশূন্যতার কারন নির্ণয় না করে রক্ত দেওয়া একটা অপরাধ। এতে করে পরবর্তীতে রোগীর রক্তশূন্যতার কারন খুজে বের করতে খুবই অসুবিধা হয়। তাছাড়া রক্তদানের কারনে মূলত যেরোগের ফলে রক্তশূন্যতা হয় সে রোগ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে সেই রেগের চিকিৎসা করানো খুব কঠিন ও অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক সময় ক্যান্সারের মতো রোগ ছড়ায় যায়। তাছাড়া রক্তশূন্যতার কারন নির্ণয় করে ঠিকভাবে ঔষধ খেলে রক্তশূন্যতা ভালো হয়ে যায়। তাই অবশ্যই রক্তশূন্যতার ক্ষেত্রে কারন নির্ণয় করা জরুরি।

বিডি সমাচারঃ উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে রক্ত দেওয়া যাবে?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ যদি উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে তবে দেওয়া যাবে। এই রোগের কারনে শরীরে অন্য কোন অঙ্গের সমস্যা (যেমন- উচ্চরক্তচাপ থেকে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস থেকে কিডনির সমস্যা) হলে রক্ত দেওয়া যাবে না।

বিডি সমাচারঃ রক্তদানের ফলে শরীরে রক্তের কোন ঘাটতি হবে কি?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ একজন ব্যক্তি একব্যাগ রক্ত দিতে পারে। সেই রক্তের ঘাটতি শরীরে খুব দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে এবং এতে ক্ষতি নেই। প্রত্যেক ব্যক্তির রক্ত চারমাস পর আর কাজে লাগেনা। তাই সুস্থ ব্যক্তি একব্যাগ রক্ত দিলে ঘাটতি হবার সূযোগ নেই।

বিডি সমাচারঃ গ্রুপিং এবং ক্রস ম্যচিং করার পর রক্ত নেওয়ার কারনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ রক্ত নেওয়ার আগে সাধারণত রক্তের গ্রুপ(A,B,O) ও আরএইচ(RH) টাইপিং দেখা হয়। কিন্তু এর বাইরেও রক্তে গ্রুপের মধ্যে আরো অনেক গ্রুপ ও সাব-গ্রুপ থাকে। যার ফলে গ্রুপিং ও ক্রস ম্যচিং করার পরও সমস্যা হয়। তাছাড়া কিছু রোগের কারনেও অনেক সময় রক্ত নিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

বিডি সমাচারঃ রক্ত পুরোটায় দেওয়া ভালো, নাকি বিশেষ বিশেষ অংশ?

জালাল উদ্দিন তানিনঃ অনেক সময় রক্ত নেওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরকম হয়ে থাকে শরীরে পুরো রক্ত নেওয়ার ফলে। রক্তশূন্যতার কারন খুজে বের করলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে লাল, সাদা কোন রক্তই লাগে না। তারপরও রক্ত লাগলে যতটুকু প্রয়োজন তা দিতে হবে। পুরোটা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

Please Share This Post in Your Social Media


রক্তদান নিয়ে যত ভুল ধারণা

Update Time : ০৪:০৭:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অগাস্ট ২০২১

আমাদের দেশে একটা সময় ছিল রক্ত না পাওয়ার কারনে মানুষের মৃত্যু হতো। কিন্তু বর্তমানে এ ধারণা থেকে মানুষ অনেকটা বের হতে পেরেছে। তারপরও রক্তদান নিয়ে মানুষের মাঝে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়ে গেছ।

এসব বিষয় নিয়ে বিডি সমাচারের সাথে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালের রক্তরোগ ও রক্ত ক্যান্সার বিভাগের কনসাল্ট ডা.জামাল উদ্দিন তানিন।  বিস্তারিত জানাচ্ছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম:

বিডি সমাচারঃ মূলত কারা রক্ত দিতে পারবেন?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ ১৮- ৫০ বছরের মধ্যে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ যেকোন মানুষ রক্তদান করতে পারবেন। তাছাড়া রক্তদাতার এমন কোন রোগ যেন না থাকে যাতে রক্তদান করলে ক্ষতি হয় এবং রক্তগ্রহীতারও রক্ত গ্রহণের ফলে ক্ষতি না হয়। রক্তদানের ক্ষেত্রে পুরুষের ওজন নূন্যতম ৫৫’র অধিক এবং মহিলাদের ৫০’র অধিক ধরা হয়।

বিডি সমাচারঃ রক্তদানের আগে ও পরে করণীয় কি?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ রক্তদানের আগে রক্তদাতা পরীক্ষা করে নিবেন তার বড় কোন সমস্যা আছে কিনা? যেমন- হার্ট, উচ্চরক্তচাপ, কিডনিতে সমস্যা ইত্যাদি। রক্তদানের আগে স্যালাইন পানি খেয়ে নিবেন। জ্বর মেপে নিবেন ও পালস ঠিক আছে কিনা। রক্তদাতা রক্ত দেওয়ার পর ৫-৬ মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নিবেন। তারপর ওঠে স্যালাইন বা ডাবের পানি খাবেন। রক্ত দেওয়ার ফলে শরীরের সূচের দাগ কিছুদিনের মধ্যেই চলে যায়।

বিডি সমাচারঃ নিজের ভাই-বোন, বাবা-মা এবং আত্মীয়ের রক্ত নেওয়া ভালো?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ যত নিকট আত্মীয় তাদের থেকে রক্ত নেওয়া এক প্রকার অপরাধ। ভালোর তো কোন প্রশ্নই আসে না। আপন ভাই- বোন, বাবা-মা সন্তান, এসব সম্পের্কর কেউ একে অপরকে রক্ত দিবে না। যদি নিতেই হয় তবে দূরের কোন আত্মীয় থেকে । সবচেয়ে ভালো বন্ধুবান্ধব ও দূরের কারো কাছ থেকে নেওয়া।

বিডি সমাচারঃ রক্তশূন্যতা হলেই কি রক্ত নেওয়া উচিত?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ রক্তশূন্যতার কারন নির্ণয় না করে রক্ত দেওয়া একটা অপরাধ। এতে করে পরবর্তীতে রোগীর রক্তশূন্যতার কারন খুজে বের করতে খুবই অসুবিধা হয়। তাছাড়া রক্তদানের কারনে মূলত যেরোগের ফলে রক্তশূন্যতা হয় সে রোগ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে সেই রেগের চিকিৎসা করানো খুব কঠিন ও অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক সময় ক্যান্সারের মতো রোগ ছড়ায় যায়। তাছাড়া রক্তশূন্যতার কারন নির্ণয় করে ঠিকভাবে ঔষধ খেলে রক্তশূন্যতা ভালো হয়ে যায়। তাই অবশ্যই রক্তশূন্যতার ক্ষেত্রে কারন নির্ণয় করা জরুরি।

বিডি সমাচারঃ উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে রক্ত দেওয়া যাবে?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ যদি উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে তবে দেওয়া যাবে। এই রোগের কারনে শরীরে অন্য কোন অঙ্গের সমস্যা (যেমন- উচ্চরক্তচাপ থেকে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস থেকে কিডনির সমস্যা) হলে রক্ত দেওয়া যাবে না।

বিডি সমাচারঃ রক্তদানের ফলে শরীরে রক্তের কোন ঘাটতি হবে কি?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ একজন ব্যক্তি একব্যাগ রক্ত দিতে পারে। সেই রক্তের ঘাটতি শরীরে খুব দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে এবং এতে ক্ষতি নেই। প্রত্যেক ব্যক্তির রক্ত চারমাস পর আর কাজে লাগেনা। তাই সুস্থ ব্যক্তি একব্যাগ রক্ত দিলে ঘাটতি হবার সূযোগ নেই।

বিডি সমাচারঃ গ্রুপিং এবং ক্রস ম্যচিং করার পর রক্ত নেওয়ার কারনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?

জামাল উদ্দিন তানিনঃ রক্ত নেওয়ার আগে সাধারণত রক্তের গ্রুপ(A,B,O) ও আরএইচ(RH) টাইপিং দেখা হয়। কিন্তু এর বাইরেও রক্তে গ্রুপের মধ্যে আরো অনেক গ্রুপ ও সাব-গ্রুপ থাকে। যার ফলে গ্রুপিং ও ক্রস ম্যচিং করার পরও সমস্যা হয়। তাছাড়া কিছু রোগের কারনেও অনেক সময় রক্ত নিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

বিডি সমাচারঃ রক্ত পুরোটায় দেওয়া ভালো, নাকি বিশেষ বিশেষ অংশ?

জালাল উদ্দিন তানিনঃ অনেক সময় রক্ত নেওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরকম হয়ে থাকে শরীরে পুরো রক্ত নেওয়ার ফলে। রক্তশূন্যতার কারন খুজে বের করলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে লাল, সাদা কোন রক্তই লাগে না। তারপরও রক্ত লাগলে যতটুকু প্রয়োজন তা দিতে হবে। পুরোটা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।