“প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মিনি-কক্সবাজার”

  • Update Time : ১১:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
  • / 232
আবু তালহা আকাশ:

যতদূর চোখ যায় চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। তারই মাঝে দ্বীপের মত গড়ে উঠা ৩/৪ টি গ্রাম। হঠাৎ দেখে মনে হতেই পারে সমুদ্রের মাঝে জেগে উঠা দ্বীপ। এরই মাঝে গড়ে উঠেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে নেই সেখানকার মানুষ। সেখানেও পৌঁছে গেছে উচ্চ গতির ইন্টারনেট। সেখানের জীবনযাত্রা দেখে যেন বিষ্ময় জেগে ওঠে।

সকালের সূর্য উদয় ও সন্ধার সূর্যাস্ত যেন  কুয়াকাটা এবং বাকি সময়টায় স্পিডবোর্ড ও নৌকার চলাচল ও মানুষের গোসল,  লাফালাফি করা; এসব দেখে যেনে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছি বলে মনে হয়। এসবের সার্থক ব্যবহার যেন হয়েছে তার নাম করনে। বলছি নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার পাটুলের “মিনি-কক্সবাজার” খ্যাত হালতি বিলের কথা।

যেখানে প্রতিদিন কয়েকশত দর্শনার্থী আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। করোনার এই সময়টাতেও থেমে নেই লোকসমাগম। থামবেই বা কেন? প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও তার প্রতি এক অদৃশ্য টান হৃদয় শান্ত করা বাতাস; যা যে কোন বিষাদগ্রস্ত মানুষের মনকে করে তোলে প্রফুল্ল। আর তাই তো করোনার এই মহামারিতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। যাতে করে তারা গৃহবন্দী একঘেয়েমি দূর করে, মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারে।

উত্তরা গণভবন , রানী ভবানী রাজবাড়ি, শহীদ সাগর সহ সবকিছু মিলিয়ে নাটোর যেমন দেশের ইতিহাস বিখ্যাত জেলা; তেমনি দেশের সর্ব বৃহৎ বিল “চলনবিল” “মিনি-কক্সবাজার” খ্যাত “হালতি বিল”  মিলিয়ে তেমনি ভাবে নাটোর দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবর্ধন জেলা। এসব বিলে বছরের অর্ধেক সময় থাকে পানির নিচে এবং বাকি অর্ধেক বাকি সময় বোরো মৌসুমে সবুজ ধানে ভরে যায় মাঠ। এছাড়াও চাষ হয় ভূট্টা, পেয়াজ সহ নানা রকমের ফসল। যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেশের খাদ্যাভাব পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে পাটুল টু খাজুরা দীর্ঘ প্রায় ১৩ কি.মি আরসিসি রোড। পানি অল্প থাকলে যখন নৌকার তৈরি ঢেউ ও প্রচন্ড বাতাসের কারনে দুই ধারের পানি রাস্তায়  আছড়ে পড়ে তখন ভারী  চমৎকার দৃশ্যের তৈরি হয়। যা যেকোন দর্শনার্থীর মনেই অসম্ভব ভালো লাগা তৈরি করে।

মূলত পানির মধ্য নিমজ্জিত এই দীর্ঘ রোডই দর্শনার্থীদের বিপুল আনন্দ দেয়। সকলের মনে এমনটাই প্রশ্ন উদয় হয়,”পানির ভেতরে রোড, নাকি রোডের ভেতরেই পানি”? যেখানে অনেকদূর পর্যন্ত হেটে যাওয়া যায় পানির মধ্যে। এ যেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঘ্রাণ প্রদান করে। নৌকায় করে যাওয়া যায় পানির মধ্যে ভাসমান এসব গ্রাম দেখতে। যেখানে গ্রামের মানুষ পশু খাদ্য হিসেবে গ্রামের চারদিক সবজায়গায় খড়ের গাদা করে রেখেছেন এবং এই দ্বীপেই তাদের গ্রামীণ বসবাস। এসব যেন আবার আমাদের যান্ত্রিকতাপূর্ন জীবন কে সীমিত পরিসরে হলেও গ্রামীণ পরিবেশ দেখার সুযোগ করে দেয়।

করোনা মহামারির এই সময়টায় দর্শনার্থী কিছুটা কমে গেলেও দ্রুত এই দূর্যোগময় সময়ের শেষে আবারও প্রতি বছরের ন্যায় হাজার হাজার দর্শনার্থীতে কানায় কানায় পূর্ণ হবে মিনি-কক্সবাজার এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। আসুন আমরা সবাই নিজ দেশ ভ্রমণ করি,  নিজ দেশের ইতিহাস ও নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানি; মানসিকভাবে সুস্থ থাকি।

লেখক: শিক্ষার্থী,দ্বিতীয় বর্ষ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


“প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মিনি-কক্সবাজার”

Update Time : ১১:৩২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
আবু তালহা আকাশ:

যতদূর চোখ যায় চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। তারই মাঝে দ্বীপের মত গড়ে উঠা ৩/৪ টি গ্রাম। হঠাৎ দেখে মনে হতেই পারে সমুদ্রের মাঝে জেগে উঠা দ্বীপ। এরই মাঝে গড়ে উঠেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে নেই সেখানকার মানুষ। সেখানেও পৌঁছে গেছে উচ্চ গতির ইন্টারনেট। সেখানের জীবনযাত্রা দেখে যেন বিষ্ময় জেগে ওঠে।

সকালের সূর্য উদয় ও সন্ধার সূর্যাস্ত যেন  কুয়াকাটা এবং বাকি সময়টায় স্পিডবোর্ড ও নৌকার চলাচল ও মানুষের গোসল,  লাফালাফি করা; এসব দেখে যেনে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছি বলে মনে হয়। এসবের সার্থক ব্যবহার যেন হয়েছে তার নাম করনে। বলছি নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার পাটুলের “মিনি-কক্সবাজার” খ্যাত হালতি বিলের কথা।

যেখানে প্রতিদিন কয়েকশত দর্শনার্থী আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। করোনার এই সময়টাতেও থেমে নেই লোকসমাগম। থামবেই বা কেন? প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও তার প্রতি এক অদৃশ্য টান হৃদয় শান্ত করা বাতাস; যা যে কোন বিষাদগ্রস্ত মানুষের মনকে করে তোলে প্রফুল্ল। আর তাই তো করোনার এই মহামারিতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। যাতে করে তারা গৃহবন্দী একঘেয়েমি দূর করে, মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারে।

উত্তরা গণভবন , রানী ভবানী রাজবাড়ি, শহীদ সাগর সহ সবকিছু মিলিয়ে নাটোর যেমন দেশের ইতিহাস বিখ্যাত জেলা; তেমনি দেশের সর্ব বৃহৎ বিল “চলনবিল” “মিনি-কক্সবাজার” খ্যাত “হালতি বিল”  মিলিয়ে তেমনি ভাবে নাটোর দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবর্ধন জেলা। এসব বিলে বছরের অর্ধেক সময় থাকে পানির নিচে এবং বাকি অর্ধেক বাকি সময় বোরো মৌসুমে সবুজ ধানে ভরে যায় মাঠ। এছাড়াও চাষ হয় ভূট্টা, পেয়াজ সহ নানা রকমের ফসল। যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেশের খাদ্যাভাব পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে পাটুল টু খাজুরা দীর্ঘ প্রায় ১৩ কি.মি আরসিসি রোড। পানি অল্প থাকলে যখন নৌকার তৈরি ঢেউ ও প্রচন্ড বাতাসের কারনে দুই ধারের পানি রাস্তায়  আছড়ে পড়ে তখন ভারী  চমৎকার দৃশ্যের তৈরি হয়। যা যেকোন দর্শনার্থীর মনেই অসম্ভব ভালো লাগা তৈরি করে।

মূলত পানির মধ্য নিমজ্জিত এই দীর্ঘ রোডই দর্শনার্থীদের বিপুল আনন্দ দেয়। সকলের মনে এমনটাই প্রশ্ন উদয় হয়,”পানির ভেতরে রোড, নাকি রোডের ভেতরেই পানি”? যেখানে অনেকদূর পর্যন্ত হেটে যাওয়া যায় পানির মধ্যে। এ যেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঘ্রাণ প্রদান করে। নৌকায় করে যাওয়া যায় পানির মধ্যে ভাসমান এসব গ্রাম দেখতে। যেখানে গ্রামের মানুষ পশু খাদ্য হিসেবে গ্রামের চারদিক সবজায়গায় খড়ের গাদা করে রেখেছেন এবং এই দ্বীপেই তাদের গ্রামীণ বসবাস। এসব যেন আবার আমাদের যান্ত্রিকতাপূর্ন জীবন কে সীমিত পরিসরে হলেও গ্রামীণ পরিবেশ দেখার সুযোগ করে দেয়।

করোনা মহামারির এই সময়টায় দর্শনার্থী কিছুটা কমে গেলেও দ্রুত এই দূর্যোগময় সময়ের শেষে আবারও প্রতি বছরের ন্যায় হাজার হাজার দর্শনার্থীতে কানায় কানায় পূর্ণ হবে মিনি-কক্সবাজার এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। আসুন আমরা সবাই নিজ দেশ ভ্রমণ করি,  নিজ দেশের ইতিহাস ও নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানি; মানসিকভাবে সুস্থ থাকি।

লেখক: শিক্ষার্থী,দ্বিতীয় বর্ষ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।