বাফুফে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে যা বললেন রুহুল আমিন

  • Update Time : ০১:৫৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 22

বাফুফে নির্বাচন ক্রীড়াঙ্গনের বহুল আলোচিত বিষয়ের একটি। ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন পুনরায় নির্বাচন করবেন না। এদিন বিকেলে তরফদার রুহুল আমিন সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়েছেন ‘ঐক্যমতের ভিত্তিতে’ ব্যানারে কয়েকজন সংগঠক ও সাবেক ফুটবলার। তরফদার তাদের সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে সভাপতি পদে নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচন। এখনো নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হয়নি, গঠন হয়নি নির্বাচন কমিশনও। এর আগেই সভাপতি প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছে।

সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘অনিয়ম ও নানা কারণে ফুটবলে কাঙ্খিত পর্যায়ে যেতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করব ফুটবলকে সঠিক পন্থায় উন্নয়ন করতে। আমাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’ আজ বিকেলে রাজধানীর এক হোটেলে সভাপতি হিসেবে তরফদারের নাম ঘোষণা হয়েছে শুধু। পরবর্তীতে সকলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তরফদার প্যানেল পূর্ণাঙ্গ করবেন।

২০২০ সালে বাফুফে সভাপতি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি। আজ পুনরায় সভাপতির ঘোষণায় চার বছর আগের ঘটনা রোমান্থন করেছেন তরফদার, ‘আপনারা সবাই জানেন গত বার আমি সভাপতি নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। এমনকি আমাকে দেশের বাইরে চলে যেতে হয়েছে। আমার উপর এবং আমার প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক ২০২০ সাল থেকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত।’

তরফদার রুহুল আমিনের ফুটবলাঙ্গনে আর্বিভাব চট্টগ্রাম ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে। সেই চট্টগ্রাম আবাহনী এবার দলবদল করেছে একেবারে শেষ ঘন্টায়। সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা দেয়া তরফদার রুহুল আমিন এবার চট্টগ্রাম আবাহনীর পাশে ছিলেন না। এই বিষয়ে প্রশ্ন হলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এই সংগঠক, ‘২০১৫ সাল থেকে আমি চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে যুক্ত। কথা ছিল, আরো কয়েকজন এখানে সহায়তা করবে কিন্তু আমাকেই করতে হয়েছে। কয়েক বছর আমি একাই টানছি। আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছি এবং চট্টগ্রাম আবাহনী লিগে অংশগ্রহণ করবে না এটা দুই মাস আগেই সিদ্ধান্ত। এরপর শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত বদল করে দলবদলে এসেছে। এটা আসা ক্লাবের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।’

চট্টগ্রাম আবাহনী ছাড়ার আগে তরফদার রুহুল আমিন নিজের ফুটবল ক্লাবও গুটিয়ে নিয়েছেন। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব প্রিমিয়ার লিগ থেকে প্রত্যাহার হয় এরপর দ্বিতীয় বিভাগে সাইফ জুনিয়র দলও প্রত্যাহার হয়েছে।

তরফদার রুহুল আমিন কাজী সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এক সময়। ২০১৬ নির্বাচনে সালাউদ্দিনের প্যানেলে প্রধান সমন্বয়কই ছিলেন। এরপর থেকে সালাউদ্দিনের বিরোধী পক্ষ যাওয়ার প্রশ্নে তরফদার উত্তর দিয়েছেন এভাবে, ‘ঐ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রæতি ছিল ইশতেহারে। সেটা দেখলাম পরবর্তীতে আর অনুসরণ করা হয়নি এবং ফুটবল উন্নয়নে কাজ করছে না। তখন থেকেই মূলত সমালোচনা শুরু।’

কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হবেন প্রার্থীরা। আসন্ন নির্বাচনে কারা কাউন্সিলর সেটিই এখনো ঠিক হয়নি। আজ থেকে কাউন্সিলর ফরম প্রদান শুরু করেছে বাফুফে। অভিযোগ রয়েছে, ভবন থেকে হাতে হাতে কয়েকটি জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি নিয়েছেন। কাউন্সিলর ঠিক হওয়ার আগেই সভাপতির প্রার্থীতা ঘোষণা দেয়া এবং জয় লাভের আশাবাদ ব্যক্ত নিয়ে তরফদার বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলরদের প্রতি আস্থাশীল। তারা সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। কাউন্সিলর চিঠি ডাকযোগে পাঠানোই নিয়ম। শুনেছি কয়েকজন হাতে হাতে পেয়েছেন। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে ফিফা-এএফসিকে অবহিত করব।’

তরফদারের ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী আবহ শুরু। সভাপতি নির্বাচিত হলে তৃণমূলে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন এই সংগঠক, ‘ফুটবল উন্নয়নে তৃণমূলে যাওয়ার বিকল্প নেই। জেলায় জেলায় যেতে হবে ফুটবলের জন্য। আমি নিজেও যাব। ফুটবল শুধু বাফুফের ভেতর থাকবে না।’ কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সুসম্পর্কের সময় ভারতের আইএসএলের আদলে ফ্রাঞ্চাইজ লিগ বাংলাদেশেও আয়োজনের চুক্তি হয়েছিল। সেটা অবশ্য আলোর মুখ দেখেনি। সভাপতি নির্বাচিত হলে সেটা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘ফুটবলকে কর্পোরেটভাবে পরিচালিত করতে হবে। আমরা বিএসএল করতে চেয়েছিলাম, ফেডারেশন পারিনি। সভাপতি নির্বাচিত হলে অবশ্যই বিএসএল করব।’

ফুটবলের উন্নয়নের অন্যতম নির্দেশক র‌্যাংকিং। কাজী সালাউদ্দিনের আমলে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং ১৮০’র বেশি ছিল সব সময়। কয়েক বারই প্রশ্ন হয়েছে র‌্যাংকিংয়ের উন্নতি নিয়ে। এ নিয়ে তরফদারের মন্তব্য ছিল, ‘ফুটবল কাঠামো বলতে কিছু নেই। এই পরিস্থিতি থেকে রাতারাতি উন্নতি সম্ভব নয়। চার বছরে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব উন্নয়নের জন্য।’

ঐক্যমতের ভিত্তিতে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণায় মঞ্চে ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন ও অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপন, ভিক্টোরিয়া ক্লাবের নুরুজ্জামান, সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান, সাবেক জাতীয় ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী ফয়সাল।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


বাফুফে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে যা বললেন রুহুল আমিন

Update Time : ০১:৫৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাফুফে নির্বাচন ক্রীড়াঙ্গনের বহুল আলোচিত বিষয়ের একটি। ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন পুনরায় নির্বাচন করবেন না। এদিন বিকেলে তরফদার রুহুল আমিন সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়েছেন ‘ঐক্যমতের ভিত্তিতে’ ব্যানারে কয়েকজন সংগঠক ও সাবেক ফুটবলার। তরফদার তাদের সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে সভাপতি পদে নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচন। এখনো নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হয়নি, গঠন হয়নি নির্বাচন কমিশনও। এর আগেই সভাপতি প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছে।

সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘অনিয়ম ও নানা কারণে ফুটবলে কাঙ্খিত পর্যায়ে যেতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করব ফুটবলকে সঠিক পন্থায় উন্নয়ন করতে। আমাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’ আজ বিকেলে রাজধানীর এক হোটেলে সভাপতি হিসেবে তরফদারের নাম ঘোষণা হয়েছে শুধু। পরবর্তীতে সকলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তরফদার প্যানেল পূর্ণাঙ্গ করবেন।

২০২০ সালে বাফুফে সভাপতি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি। আজ পুনরায় সভাপতির ঘোষণায় চার বছর আগের ঘটনা রোমান্থন করেছেন তরফদার, ‘আপনারা সবাই জানেন গত বার আমি সভাপতি নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। এমনকি আমাকে দেশের বাইরে চলে যেতে হয়েছে। আমার উপর এবং আমার প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক ২০২০ সাল থেকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত।’

তরফদার রুহুল আমিনের ফুটবলাঙ্গনে আর্বিভাব চট্টগ্রাম ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে। সেই চট্টগ্রাম আবাহনী এবার দলবদল করেছে একেবারে শেষ ঘন্টায়। সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা দেয়া তরফদার রুহুল আমিন এবার চট্টগ্রাম আবাহনীর পাশে ছিলেন না। এই বিষয়ে প্রশ্ন হলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এই সংগঠক, ‘২০১৫ সাল থেকে আমি চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে যুক্ত। কথা ছিল, আরো কয়েকজন এখানে সহায়তা করবে কিন্তু আমাকেই করতে হয়েছে। কয়েক বছর আমি একাই টানছি। আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছি এবং চট্টগ্রাম আবাহনী লিগে অংশগ্রহণ করবে না এটা দুই মাস আগেই সিদ্ধান্ত। এরপর শেষ মুহুর্তে সিদ্ধান্ত বদল করে দলবদলে এসেছে। এটা আসা ক্লাবের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।’

চট্টগ্রাম আবাহনী ছাড়ার আগে তরফদার রুহুল আমিন নিজের ফুটবল ক্লাবও গুটিয়ে নিয়েছেন। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব প্রিমিয়ার লিগ থেকে প্রত্যাহার হয় এরপর দ্বিতীয় বিভাগে সাইফ জুনিয়র দলও প্রত্যাহার হয়েছে।

তরফদার রুহুল আমিন কাজী সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এক সময়। ২০১৬ নির্বাচনে সালাউদ্দিনের প্যানেলে প্রধান সমন্বয়কই ছিলেন। এরপর থেকে সালাউদ্দিনের বিরোধী পক্ষ যাওয়ার প্রশ্নে তরফদার উত্তর দিয়েছেন এভাবে, ‘ঐ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রæতি ছিল ইশতেহারে। সেটা দেখলাম পরবর্তীতে আর অনুসরণ করা হয়নি এবং ফুটবল উন্নয়নে কাজ করছে না। তখন থেকেই মূলত সমালোচনা শুরু।’

কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হবেন প্রার্থীরা। আসন্ন নির্বাচনে কারা কাউন্সিলর সেটিই এখনো ঠিক হয়নি। আজ থেকে কাউন্সিলর ফরম প্রদান শুরু করেছে বাফুফে। অভিযোগ রয়েছে, ভবন থেকে হাতে হাতে কয়েকটি জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি নিয়েছেন। কাউন্সিলর ঠিক হওয়ার আগেই সভাপতির প্রার্থীতা ঘোষণা দেয়া এবং জয় লাভের আশাবাদ ব্যক্ত নিয়ে তরফদার বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলরদের প্রতি আস্থাশীল। তারা সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। কাউন্সিলর চিঠি ডাকযোগে পাঠানোই নিয়ম। শুনেছি কয়েকজন হাতে হাতে পেয়েছেন। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে ফিফা-এএফসিকে অবহিত করব।’

তরফদারের ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী আবহ শুরু। সভাপতি নির্বাচিত হলে তৃণমূলে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন এই সংগঠক, ‘ফুটবল উন্নয়নে তৃণমূলে যাওয়ার বিকল্প নেই। জেলায় জেলায় যেতে হবে ফুটবলের জন্য। আমি নিজেও যাব। ফুটবল শুধু বাফুফের ভেতর থাকবে না।’ কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সুসম্পর্কের সময় ভারতের আইএসএলের আদলে ফ্রাঞ্চাইজ লিগ বাংলাদেশেও আয়োজনের চুক্তি হয়েছিল। সেটা অবশ্য আলোর মুখ দেখেনি। সভাপতি নির্বাচিত হলে সেটা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘ফুটবলকে কর্পোরেটভাবে পরিচালিত করতে হবে। আমরা বিএসএল করতে চেয়েছিলাম, ফেডারেশন পারিনি। সভাপতি নির্বাচিত হলে অবশ্যই বিএসএল করব।’

ফুটবলের উন্নয়নের অন্যতম নির্দেশক র‌্যাংকিং। কাজী সালাউদ্দিনের আমলে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং ১৮০’র বেশি ছিল সব সময়। কয়েক বারই প্রশ্ন হয়েছে র‌্যাংকিংয়ের উন্নতি নিয়ে। এ নিয়ে তরফদারের মন্তব্য ছিল, ‘ফুটবল কাঠামো বলতে কিছু নেই। এই পরিস্থিতি থেকে রাতারাতি উন্নতি সম্ভব নয়। চার বছরে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব উন্নয়নের জন্য।’

ঐক্যমতের ভিত্তিতে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণায় মঞ্চে ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন ও অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপন, ভিক্টোরিয়া ক্লাবের নুরুজ্জামান, সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান, সাবেক জাতীয় ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী ফয়সাল।