শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে ‘তুমি দেশের, তুমি দশের’ শীর্ষক শোভাযাত্রা
- Update Time : ০৯:৩৩:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
- / 61
জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ পর্যন্ত ‘তুমি দেশের, তুমি দশের’ শীর্ষক এ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্রলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
এসময় নেতাকর্মীরা ‘শেখ হাসিনার জন্য, বাংলাদেশ ধন্য; শেখ হাসিনা এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে; যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বুলেট-বোমা উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর পথচলা যেকোনো সিনেমাটিক বাস্তবতার চেয়েও আরও বেশি ঝঞ্ঝামুখর, অনেক বেশি সংগ্রামময়, অনেক বেশি আত্মত্যাগপূর্ণ এবং সাফল্যমণ্ডিত। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের কাছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের গণনায়ক, দিন বদলের সত্যিকারের সারথি।
সাদ্দাম বলেন, শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করেছেন। একসময় শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেত না। এলাকার সিনিয়র ভাই-বোনদের কাছ থেকে ছেড়া বই নিয়ে লেখাপড়া করতে হতো। কিন্তু আজকে সব শিক্ষার্থী স্কুলের প্রথম দিনেই নতুন বই পাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ লণ্ঠনের আলোয় পড়াশোনা করেছে। কিন্তু বর্তমানে সবাই বিদ্যুতের আলোয় পড়াশোনা করছে। ২০০৪-০৫ সালের দিকে একজন প্রাইমারি শিক্ষকের বেতন ছিল আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার আগে এমনই বেদনাদায়ক বাস্তবতার শিকার ছিল দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর সেদিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কারণেই এই ভূখণ্ডের পরিবর্তন হয়েছে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
যারা বলেছিল টেক ব্যাক বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ তাদেরকে ‘রেডকার্ড’ দেখিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বলেছিল ত্রুটিপূর্ণ, তারাই গতকাল বলছে ‘আস্থার পুনর্নির্মাণ’। মৌসুমি জলবায়ুর বাংলাদেশে যারা বলেছিল ‘লু’ হাওয়া বইবে, তারা দেখেছে দেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। যার মাধ্যমেই ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে।
সমাবেশে এর আগে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তিনি বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত কর্মীর লাশ কাঁধে নিয়ে শেখ হাসিনা কালো পতাকা মিছিল করেছিলেন বলেই আজকে তার কর্মীরা তার জন্য জীবন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। সেদিন মানিক মিয়া এভিনিউতে প্রধানমন্ত্রীর চোখের জল গড়িয়ে পড়েছিল বলেই আজকে সাধারণ মানুষ সেই চোখের জলকে হৃদয়ের উপযোগ্য করে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শেখ হাসিনা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন বলেই আজকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে গণতান্ত্রিক মনোভাব, মৌলবাদবিরোধী ধারণা বহমান রয়েছে।
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, সেদিন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা পায়ে হেঁটে মিছিলে অংশ নিয়েছেন বলে সেই অনুপ্রেরণা থেকেই আমরা আজ জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করতে পেরেছি, রাজাকারদের শাস্তি দিতে পেরেছি।
শোষিতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করায় আজকে বাংলাদেশের মানুষ শোষণ নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আপনি ফিরেছেন বলেই আমাদের সমুদ্র জয় হয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে উড়েছে, আমাদের মাথার ওপর দিয়ে মেট্রোরেল চলছে, পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে, কর্ণফুলী টানেল হয়েছে, শত শত রাস্তা হয়েছে, দেশের মানুষ দিন বদলের কাণ্ডারি ফিরে পেয়েছে, আজকের উন্নত দেশ পেয়েছে।
ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছিলাম। তবে সেদিনের একটি সৌভাগ্য হলো আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অক্ষত পেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশের শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে। এসব উপেক্ষা করে আজকের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে দুই কোটি ভূমিহীনকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসেন। এরপর ভয়াবহ বন্যায় অনেক মানুষ উদ্বাস্তু হলে তাদেরকেও আশ্রয় দেন প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন কারাগারে জীবন পার করেন।
তিনি আরও বলেন, আজ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই। দেশের ১৭ কোটি মানুষের আনন্দই প্রধানমন্ত্রীর আনন্দ। আর এই আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমৃত্যু প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকবে। ছাত্রলীগের একজন নেতাকর্মী বেঁচে থাকতে কেউ প্রধানমন্ত্রীর চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারবে না।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। চেনা স্বজন, নিজ দেশের মানুষকে দেখতে তিনি দেশে ফিরেছেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২১ বছর পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বর্তমানে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলে দেশ অনেক বেশি উন্নত হবে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক বাবু সজল কুন্ডু, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম প্রমুখ।