তীব্র গরমে কুমেক হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর ভিড়, শয্যা সংকটে শিশু ওয়ার্ড 

  • Update Time : ০৭:১৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
  • / 64

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ, কুমিল্লা

সারাদেশে তীব্র গরমে অস্থির জনজীবন। জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হিট স্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হলেও এই গরম সবচেয়ে বেশি কাবু করেছে শিশুদের। হাসপাতালে  ভর্তি রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু। তাই গরমে সুস্থ্য থাকতে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া, সুতি কাপড় পরা এবং বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গেলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের পর হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে প্রায় তিনগুন । তাদের সিংহভাগ শিশু রোগী। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা ৪০টি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত  ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাই ছিল ১২৮টি। এদের সবাই জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। বহির্বিভাগে আরও শতাধিক শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন  জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৃষ্টি, গরম আবার ঠান্ডা এবং মায়েদের অসচেতনতার কারণেই এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, শিশুর পোশাক, বিছানা ও ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘাম দিলে শিশুর শরীর দ্রুত মুছে ফেলতে হবে। শিশুর যাতে ঠান্ডা না লাগে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি জানান, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে  অনেকটা ছুটির আমেজে আছে। স্কুল খুলে দিলে শিশুরা পানি থেকে শুরু করে বাইরের খাবারে ঝুঁকে পড়বে। এতে করে পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি ডায়রিয়ার, জন্ডিস, হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাবে । বিশেষ করে মাঠে-ময়দানে কাজ করা রিকশাওয়ালা, শ্রমিক শ্রেণির লোকজন হিট স্ট্রোকেরও সম্ভাবনায় থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন রোগী বেশি। টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। টিকিট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন জরুরি বিভাগের সামনে। শিশু ওয়ার্ডের শয্যা, মেঝে, বারান্দা সবখানেই রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ  ডা. তাসলিমা জানান, প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।

হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত অন্যান্য চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড রোগীর চাপ বাড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে এ হাসপাতালে নিয়মিত ২শ থেকে ৩শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন । বর্তমানে নিয়মিত ৪শ থেকে ৫শতে দাঁড়াচ্ছে এ সংখ্যা। হাসপাতালে  ভর্তি রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু।

কুমিল্লা নগরীর আশরাফপুর এলাকার বাসিন্দা তানজিমা আক্তার একমাত্র মেয়ে ফাতিহাকে নিয়ে এসেছেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঈদের একদিন আগে তীব্র জ্বরের পাশাপাশি বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। শুরুতে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হলে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নেওয়া হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে জ্বর কমলেও অবনতি হয়েছে বমি আর ডায়রিয়া পরিস্থিতির। উপায় না দেখে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  ভর্তি করা হয় ৩ বছরের শিশুটিকে। গতকাল কিছুটা সুস্থ হলেও গরম বাড়ায় আবারও আগের মতো অবস্থা। মেয়ে মুখে এখনো কিছুই খাচ্ছেনা।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গরমের এ সময়ে শিশুদের রোদ বা ঘরের বাইরে না নেওয়াই ভালো। শিশুরা বড়দের মতো আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। গরমের সময় সাধারণত জ্বর, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা, ড্রিহাইড্রেশন অর্থাৎ, শরীরে পানিশূন্যতা বা স্বল্পতা রোগী বেশি দেখা যায় । গরমের এ পরিস্থিতিতে ফলের শরবত, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, গ্লুকোজ ও পুষ্টিকর রসালো ফল বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীর থেকে ঘাম হয়ে বের হয়ে যাওয়া পানির চাহিদা পূরণ হবে। তবে গরমের কারণে ঠান্ডা পানি,  বরফ কিংবা রাস্তার পাশের বিভিন্ন ধরনের শরবত এবং খোলা খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুদের এই গরমে ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করতে হবে, নিয়মিত গোসল করাতে হবে। এ সময় বাচ্চাদেরকে অবশ্যই ফুটানো পানি ও ফ্রেশ খাবার খাওয়াতে হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


তীব্র গরমে কুমেক হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর ভিড়, শয্যা সংকটে শিশু ওয়ার্ড 

Update Time : ০৭:১৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ, কুমিল্লা

সারাদেশে তীব্র গরমে অস্থির জনজীবন। জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হিট স্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হলেও এই গরম সবচেয়ে বেশি কাবু করেছে শিশুদের। হাসপাতালে  ভর্তি রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু। তাই গরমে সুস্থ্য থাকতে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া, সুতি কাপড় পরা এবং বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গেলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের পর হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে প্রায় তিনগুন । তাদের সিংহভাগ শিশু রোগী। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা ৪০টি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত  ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাই ছিল ১২৮টি। এদের সবাই জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। বহির্বিভাগে আরও শতাধিক শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন  জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তন, বৃষ্টি, গরম আবার ঠান্ডা এবং মায়েদের অসচেতনতার কারণেই এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, শিশুর পোশাক, বিছানা ও ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘাম দিলে শিশুর শরীর দ্রুত মুছে ফেলতে হবে। শিশুর যাতে ঠান্ডা না লাগে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি জানান, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে  অনেকটা ছুটির আমেজে আছে। স্কুল খুলে দিলে শিশুরা পানি থেকে শুরু করে বাইরের খাবারে ঝুঁকে পড়বে। এতে করে পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি ডায়রিয়ার, জন্ডিস, হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাবে । বিশেষ করে মাঠে-ময়দানে কাজ করা রিকশাওয়ালা, শ্রমিক শ্রেণির লোকজন হিট স্ট্রোকেরও সম্ভাবনায় থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন রোগী বেশি। টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। টিকিট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন জরুরি বিভাগের সামনে। শিশু ওয়ার্ডের শয্যা, মেঝে, বারান্দা সবখানেই রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ  ডা. তাসলিমা জানান, প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।

হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত অন্যান্য চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড রোগীর চাপ বাড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে এ হাসপাতালে নিয়মিত ২শ থেকে ৩শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন । বর্তমানে নিয়মিত ৪শ থেকে ৫শতে দাঁড়াচ্ছে এ সংখ্যা। হাসপাতালে  ভর্তি রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু।

কুমিল্লা নগরীর আশরাফপুর এলাকার বাসিন্দা তানজিমা আক্তার একমাত্র মেয়ে ফাতিহাকে নিয়ে এসেছেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঈদের একদিন আগে তীব্র জ্বরের পাশাপাশি বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। শুরুতে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হলে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নেওয়া হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে জ্বর কমলেও অবনতি হয়েছে বমি আর ডায়রিয়া পরিস্থিতির। উপায় না দেখে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  ভর্তি করা হয় ৩ বছরের শিশুটিকে। গতকাল কিছুটা সুস্থ হলেও গরম বাড়ায় আবারও আগের মতো অবস্থা। মেয়ে মুখে এখনো কিছুই খাচ্ছেনা।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গরমের এ সময়ে শিশুদের রোদ বা ঘরের বাইরে না নেওয়াই ভালো। শিশুরা বড়দের মতো আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। গরমের সময় সাধারণত জ্বর, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা, ড্রিহাইড্রেশন অর্থাৎ, শরীরে পানিশূন্যতা বা স্বল্পতা রোগী বেশি দেখা যায় । গরমের এ পরিস্থিতিতে ফলের শরবত, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, গ্লুকোজ ও পুষ্টিকর রসালো ফল বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীর থেকে ঘাম হয়ে বের হয়ে যাওয়া পানির চাহিদা পূরণ হবে। তবে গরমের কারণে ঠান্ডা পানি,  বরফ কিংবা রাস্তার পাশের বিভিন্ন ধরনের শরবত এবং খোলা খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুদের এই গরমে ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করতে হবে, নিয়মিত গোসল করাতে হবে। এ সময় বাচ্চাদেরকে অবশ্যই ফুটানো পানি ও ফ্রেশ খাবার খাওয়াতে হবে।