অন্ধকার আছন্ন খুরুশকুল সেতু, ছিনতাই আতঙ্কে পথচারীরা

  • Update Time : ০৮:৫৩:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪
  • / 68

কক্সবাজার প্রতিনিধি :-

সন্ধ্যা নামলেই ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় কক্সবাজার শহরের তীর ঘেষা বাকঁখালী নদীর উপর নব-নির্মিত খুরুশকুল সেতুটি।
সূর্য ডোবার সাথে সাথেই আতংক বিরাজ করে এই সেতু ও তার আশপাশ এলাকা দিয়ে চলাচল করা পথচারীদের মাঝে। দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকলেও রাতে সেতুতে লাইট না থাকার কারণেই হর হামেশাই ঘটছে ছিনতাই সহ নানান অপ্রীতিকর ঘটনা।

শুধু ছিনতাই নই, রাত বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। সেতুর ফুতপাতে সংঘবদ্ধভাবে চলে মাদক গ্রহন ও জুয়া খেলা।
সেতুর পার্শ্বে কয়েকশ একরের খেজুর বাগান থাকায়, যেকোন অপরাধ করেই সেখানে ঢুকে গা ঢাকা দেন দুষ্কৃতকারীরা।

সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ০১ সেপ্টেম্বর শুরু হয় খুরুশকুল বাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন কক্সবাজার খুরুশকুল সেতুর নির্মাণ কাজ। যা পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরে। এরপর ১১ই নভেম্বর উদ্বোধন সেতুটি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের কিছুদিন পরই চুরি হয়ে যায় সেতুর লাইট ও বৈদ্যুতিক তার। ফলে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই অন্ধকার এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন বেশকিছু গাড়িচালক ও যাত্রী। তাই সেতুটিতে দ্রুত লাইটিংয়ের দাবী চালক ও পথচারীদের।

ইজিবাইক চালক রহমতুল্লাহ বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে খুরুশকুল থেকে গাড়ি নিয়ে কক্সবাজার শহরে আসি। আমি গাড়ি চালিয়ে যাই রাত ১০ -১১টার দিকে আমি দুইতিন বার ছিনতাই শিকার হয়েছি। প্রথম দিন আমার টাকা পয়সা মোবাইলসহ সব নিয়েই ফেলে ছিনতাইকারীরা হলে নিয়ে যেতে পারি না। আমাকে বেশ মারধর করে, পরে আমি সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে যাই। আমি চাই সেতুতে যদিও লাইটিং ব্যবস্থা থাকে আর ছিনতাইকারী থাকবে না সেতু। তবে প্রশাসন থেকে একটু নজর রাখতে হবে।

খুরুশকুল বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন,আমি শহর থেকে বাড়ি ফিরতে প্রতিদিন ১১ টা বারোটা বাজে, কোন গাড়ি পেতে কষ্ট হয়ে যায়,কোন গাড়িটা রাতে খুরুশকুল দিকে যেতে চায় না। কারণ রাত হলে সেতু উপরে ছিনতাইকারীরা থাকে। একজন আমিও ছিনতাই শিকার হতাম,কিন্তু আমাদের গাড়িকে সিঙ্গেল দিলে ড্রাইভার না দাঁড়িয়ে দ্রুত চলে যায়, ছিনতাইকারীরা আমাদের গাড়ির পিছনে দৌড়াতে আমরা পাড়ায় ঢুকে গেলে তারা চলে আসে।

স্হানীয়’রা জানান , প্রতিদিন কক্সবাজার শহর থেকে বাড়িতে ফিরতে রাত অনেক রাত হয়ে যায়। পুরা সেতু ও সড়ক জুড়ে কোন লাইট নাই থাকায় পুরাটা অন্ধকার আছন্ন থাকে।
তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।
কারণ পুরাতন সড়ক দিয়ে যাওয়া আসা ঘন্টা লাগে গেলে এখন তা এখন ১০ মিনিটে পারা যাচ্ছে।

আমরা খুরুশকুল বাসীরা মনে করে, এতদিন পর একটা স্বপ্নের মতো সেতু পেয়েও কোন লাইটিং নাই। জীবনের নিরাপত্তাহীন নাই, তাহলে আগের টা অনেক ভালো ছিলো। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত লাইটিং এর ব্যবস্থা করবে।

এদিকে সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা এল জি ই ডি আব্দুর রহমান মুহিম,সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী বলেন, একের পর এক চুরি করা হচ্ছে সেতুর মুল্যবান লাইট ও বৈদ্যুতিক তার। তাই সেতু এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা প্রহরী দেওয়া প্রয়োজন।

তবে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন রাতের বেলায় সেতু এলাকায় পুলিশ টহল চলমান রয়েছে।

২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি যদি আলোকিত করা না হয়, তাহলে তা জনসাধারণের কোন উপকারেই আসবে না।
৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি লাইটিংয়ের মধ্য দিয়ে ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত কমে আসবে বলে প্রত্যাশা সচেতন মহলের।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


অন্ধকার আছন্ন খুরুশকুল সেতু, ছিনতাই আতঙ্কে পথচারীরা

Update Time : ০৮:৫৩:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার প্রতিনিধি :-

সন্ধ্যা নামলেই ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় কক্সবাজার শহরের তীর ঘেষা বাকঁখালী নদীর উপর নব-নির্মিত খুরুশকুল সেতুটি।
সূর্য ডোবার সাথে সাথেই আতংক বিরাজ করে এই সেতু ও তার আশপাশ এলাকা দিয়ে চলাচল করা পথচারীদের মাঝে। দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকলেও রাতে সেতুতে লাইট না থাকার কারণেই হর হামেশাই ঘটছে ছিনতাই সহ নানান অপ্রীতিকর ঘটনা।

শুধু ছিনতাই নই, রাত বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। সেতুর ফুতপাতে সংঘবদ্ধভাবে চলে মাদক গ্রহন ও জুয়া খেলা।
সেতুর পার্শ্বে কয়েকশ একরের খেজুর বাগান থাকায়, যেকোন অপরাধ করেই সেখানে ঢুকে গা ঢাকা দেন দুষ্কৃতকারীরা।

সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ০১ সেপ্টেম্বর শুরু হয় খুরুশকুল বাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন কক্সবাজার খুরুশকুল সেতুর নির্মাণ কাজ। যা পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরে। এরপর ১১ই নভেম্বর উদ্বোধন সেতুটি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের কিছুদিন পরই চুরি হয়ে যায় সেতুর লাইট ও বৈদ্যুতিক তার। ফলে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই অন্ধকার এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন বেশকিছু গাড়িচালক ও যাত্রী। তাই সেতুটিতে দ্রুত লাইটিংয়ের দাবী চালক ও পথচারীদের।

ইজিবাইক চালক রহমতুল্লাহ বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে খুরুশকুল থেকে গাড়ি নিয়ে কক্সবাজার শহরে আসি। আমি গাড়ি চালিয়ে যাই রাত ১০ -১১টার দিকে আমি দুইতিন বার ছিনতাই শিকার হয়েছি। প্রথম দিন আমার টাকা পয়সা মোবাইলসহ সব নিয়েই ফেলে ছিনতাইকারীরা হলে নিয়ে যেতে পারি না। আমাকে বেশ মারধর করে, পরে আমি সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে যাই। আমি চাই সেতুতে যদিও লাইটিং ব্যবস্থা থাকে আর ছিনতাইকারী থাকবে না সেতু। তবে প্রশাসন থেকে একটু নজর রাখতে হবে।

খুরুশকুল বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন,আমি শহর থেকে বাড়ি ফিরতে প্রতিদিন ১১ টা বারোটা বাজে, কোন গাড়ি পেতে কষ্ট হয়ে যায়,কোন গাড়িটা রাতে খুরুশকুল দিকে যেতে চায় না। কারণ রাত হলে সেতু উপরে ছিনতাইকারীরা থাকে। একজন আমিও ছিনতাই শিকার হতাম,কিন্তু আমাদের গাড়িকে সিঙ্গেল দিলে ড্রাইভার না দাঁড়িয়ে দ্রুত চলে যায়, ছিনতাইকারীরা আমাদের গাড়ির পিছনে দৌড়াতে আমরা পাড়ায় ঢুকে গেলে তারা চলে আসে।

স্হানীয়’রা জানান , প্রতিদিন কক্সবাজার শহর থেকে বাড়িতে ফিরতে রাত অনেক রাত হয়ে যায়। পুরা সেতু ও সড়ক জুড়ে কোন লাইট নাই থাকায় পুরাটা অন্ধকার আছন্ন থাকে।
তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।
কারণ পুরাতন সড়ক দিয়ে যাওয়া আসা ঘন্টা লাগে গেলে এখন তা এখন ১০ মিনিটে পারা যাচ্ছে।

আমরা খুরুশকুল বাসীরা মনে করে, এতদিন পর একটা স্বপ্নের মতো সেতু পেয়েও কোন লাইটিং নাই। জীবনের নিরাপত্তাহীন নাই, তাহলে আগের টা অনেক ভালো ছিলো। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত লাইটিং এর ব্যবস্থা করবে।

এদিকে সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা এল জি ই ডি আব্দুর রহমান মুহিম,সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী বলেন, একের পর এক চুরি করা হচ্ছে সেতুর মুল্যবান লাইট ও বৈদ্যুতিক তার। তাই সেতু এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা প্রহরী দেওয়া প্রয়োজন।

তবে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন রাতের বেলায় সেতু এলাকায় পুলিশ টহল চলমান রয়েছে।

২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি যদি আলোকিত করা না হয়, তাহলে তা জনসাধারণের কোন উপকারেই আসবে না।
৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি লাইটিংয়ের মধ্য দিয়ে ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত কমে আসবে বলে প্রত্যাশা সচেতন মহলের।