‘মস্তিষ্ক হ্যাক’: যুবকের মাথা থেকে ‘ক্ষুদ্র ডিভাইস’ উদ্ধার!

  • Update Time : ০৭:৩১:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪
  • / 58

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের হারুনুর রশিদ (৩৪) নামে এক যুবক মাথা থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।
সে কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার বাসিন্দা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক এমইউপি সদস্য বলে জানা যায়।

হারুনুর রশিদ নামের এই যুবকের অভিযোগ, তার মস্তিষ্ক হ্যাক করে হ্যাকাররা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা লুট করেছে।

হারুন দাবি করেন, ২০১৯ সালে তার শ্যালিকা আসমা উল হোসনা ও কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আতিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীর সহায়তায় হ্যাকাররা তার মাথায় নিউরো চিপ স্থাপন করে।

এর ফলে তিনি গায়েবি আওয়াজ শুনতে পান, তার মোবাইল ফোন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং তার ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উধাও হতে থাকে।

হারুন এর আগে ‘মস্তিষ্ক হ্যাক’র অভিযোগে দু’জনকে আসামি করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাও করেন।

এরপর কক্সবাজারে এক ডাক্তার এর চেম্বারে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে ক্ষুদ্র ডিভাইস সফলভাবে উদ্ধার করা হয়।

উক্ত ডাক্তার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, হারুনুর রশিদের মাথা থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ক্ষুদ্র ‘ফরেন বডি’। মাথার চামড়া ও অক্সিপেটাল বোনের মাঝখানে এই ‘ফরেন বডি’টি খুঁজে পাওয়া গেছে।

‘ফরেন বডি’টির নীচের অংশে দুটি সুচালো অংশ ছিল যা দ্বারা এটি অক্সিপেটাল হাড়ের পেশির পৃষ্ঠে সংযুক্ত ছিল। দুটি স্পষ্ট গর্তও দেখা গেছে যা দীর্ঘস্থায়ী সংযুক্তির ইঙ্গিত বহন করে।

উদ্ধার হওয়া ‘ফরেন বডি’টি স্টেইনলেস স্টিলের মতো চকচকে, কয়েকটি চালের দানার আকৃতির এবং শক্তিশালী ম্যাগনেটিক শক্তিসম্পন্ন। এটি কাঁচির সাথে খুব শক্তভাবে আটকে থাকে।
হারুন দাবি করেন, হ্যাকাররা তার মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা নিউরো চিপ ব্যবহার করছে।

তিনি আরও বলেন, আতিকুর রহমানও একই চিপ ব্যবহার করে তার মস্তিষ্ক হ্যাক করেছে।
আতিকুর রহমান হারুন-এর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হারুন একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং তার ইয়াবা ব্যবসা আড়াল করতে এসব নাটক করছে।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. শামীম বলেন, বাদীর ফোনটি ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য পাঠানোর আগ মুহূর্তে লস মুডে চলে যায়। বিবাদীর একটি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছিল, ফোনে তেমন কিছুই না পাওয়ায় মামলা নিয়ে অগ্রসর হওয়া যায়নি।

তবে ভিকটিমের মাথায় যেহেতু এখন নিউরো চিপ পাওয়া গেছে। তিনি চাইলে মামলাটি আবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন।

মস্তিষ্ক হ্যাকিংয়ের অভিযোগে কক্সবাজারের যুবক হারুনুর রশিদের দাবি তদন্তে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তারা দেশে এ ধরনের অভিযোগ আগে কখনো না আসায় ঘটনার তদন্তের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, হারুনকে নিয়ে কক্সবাজারের তৎকালীন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সিআইডির ক্রাইম বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি, এ ধরনের অভিযোগ আগে কখনো পাইনি। তাই হারুন-এর অভিযোগ অত্যন্ত জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং। তারা বিষয়টি তদন্তের চেষ্টা করছেন। এই ঘটনা দেশব্যাপী হইচই ফেলে দিয়েছে।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, সিআইডি ক্রাইম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বিষয়টি উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের পর থেকেই মস্তিষ্ক হ্যাকিংয়ের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলার নথিপত্র পাওয়া গেলেও সর্বশেষ ফলাফল কী হয়েছে তা জানা যায়নি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


‘মস্তিষ্ক হ্যাক’: যুবকের মাথা থেকে ‘ক্ষুদ্র ডিভাইস’ উদ্ধার!

Update Time : ০৭:৩১:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের হারুনুর রশিদ (৩৪) নামে এক যুবক মাথা থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।
সে কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার বাসিন্দা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক এমইউপি সদস্য বলে জানা যায়।

হারুনুর রশিদ নামের এই যুবকের অভিযোগ, তার মস্তিষ্ক হ্যাক করে হ্যাকাররা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা লুট করেছে।

হারুন দাবি করেন, ২০১৯ সালে তার শ্যালিকা আসমা উল হোসনা ও কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আতিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীর সহায়তায় হ্যাকাররা তার মাথায় নিউরো চিপ স্থাপন করে।

এর ফলে তিনি গায়েবি আওয়াজ শুনতে পান, তার মোবাইল ফোন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং তার ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উধাও হতে থাকে।

হারুন এর আগে ‘মস্তিষ্ক হ্যাক’র অভিযোগে দু’জনকে আসামি করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাও করেন।

এরপর কক্সবাজারে এক ডাক্তার এর চেম্বারে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে ক্ষুদ্র ডিভাইস সফলভাবে উদ্ধার করা হয়।

উক্ত ডাক্তার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, হারুনুর রশিদের মাথা থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ক্ষুদ্র ‘ফরেন বডি’। মাথার চামড়া ও অক্সিপেটাল বোনের মাঝখানে এই ‘ফরেন বডি’টি খুঁজে পাওয়া গেছে।

‘ফরেন বডি’টির নীচের অংশে দুটি সুচালো অংশ ছিল যা দ্বারা এটি অক্সিপেটাল হাড়ের পেশির পৃষ্ঠে সংযুক্ত ছিল। দুটি স্পষ্ট গর্তও দেখা গেছে যা দীর্ঘস্থায়ী সংযুক্তির ইঙ্গিত বহন করে।

উদ্ধার হওয়া ‘ফরেন বডি’টি স্টেইনলেস স্টিলের মতো চকচকে, কয়েকটি চালের দানার আকৃতির এবং শক্তিশালী ম্যাগনেটিক শক্তিসম্পন্ন। এটি কাঁচির সাথে খুব শক্তভাবে আটকে থাকে।
হারুন দাবি করেন, হ্যাকাররা তার মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা নিউরো চিপ ব্যবহার করছে।

তিনি আরও বলেন, আতিকুর রহমানও একই চিপ ব্যবহার করে তার মস্তিষ্ক হ্যাক করেছে।
আতিকুর রহমান হারুন-এর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হারুন একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং তার ইয়াবা ব্যবসা আড়াল করতে এসব নাটক করছে।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. শামীম বলেন, বাদীর ফোনটি ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য পাঠানোর আগ মুহূর্তে লস মুডে চলে যায়। বিবাদীর একটি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছিল, ফোনে তেমন কিছুই না পাওয়ায় মামলা নিয়ে অগ্রসর হওয়া যায়নি।

তবে ভিকটিমের মাথায় যেহেতু এখন নিউরো চিপ পাওয়া গেছে। তিনি চাইলে মামলাটি আবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন।

মস্তিষ্ক হ্যাকিংয়ের অভিযোগে কক্সবাজারের যুবক হারুনুর রশিদের দাবি তদন্তে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তারা দেশে এ ধরনের অভিযোগ আগে কখনো না আসায় ঘটনার তদন্তের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, হারুনকে নিয়ে কক্সবাজারের তৎকালীন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সিআইডির ক্রাইম বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি, এ ধরনের অভিযোগ আগে কখনো পাইনি। তাই হারুন-এর অভিযোগ অত্যন্ত জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং। তারা বিষয়টি তদন্তের চেষ্টা করছেন। এই ঘটনা দেশব্যাপী হইচই ফেলে দিয়েছে।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, সিআইডি ক্রাইম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বিষয়টি উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের পর থেকেই মস্তিষ্ক হ্যাকিংয়ের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলার নথিপত্র পাওয়া গেলেও সর্বশেষ ফলাফল কী হয়েছে তা জানা যায়নি।