টেন্ডারবিহীন অবস্থায় ৯ বছর ধরে চলছে যবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়া

  • Update Time : ০৯:১৯:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / 174

যবিপ্রবি প্রতিনিধি

নিয়ম না থাকলেও টেন্ডার ছাড়াই ৯ বছর ধরে মৌখিকভাবে চলছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একমাত্র ক্যাফেটেরিয়া। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মানহীন খাবার ও তীব্র অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে এখনো এটির টেন্ডার আহ্বান করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কথিত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের ছত্রছায়ায় কামাল উদ্দীন নামের একজন বহাল তবিয়তে ক্যাফেটেরিয়া চালাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, যবিপ্রবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার ২০১৪ সালে মৌখিকভাবে সাময়িক সময়ের জন্য মোঃ কামাল উদ্দীনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেন। কিন্তু কামাল ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ না করায় এর তিন বছর পর ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ ক্যাফেটেরিয়ার বকেয়া ভাড়া আদায় ও পরিচালনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে একই কারণে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর পুনরায় বকেয়া ভাড়া আদায় ও লিখিত চুক্তির মাধ্যমে ক্যাফেটেরিয়া বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে আবারও ৫ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।

সর্বশেষ ২০২২ সালের ৪ জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া লিজ/টেন্ডার করার জন্য যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ জারি করা হয়। সেখানে যবিপ্রবির নিউট্রিশন এন্ড ফুড টেকনোলজি (এনএফটি) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শহীদ মসিয়ূর রহমান হল এর প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ’কে আহ্বায়ক করে ক্যাফেটেরিয়া পূর্ণাঙ্গভাবে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে লিজ/টেন্ডার করার জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এক বছরের ও বেশি সময় পার হলেও এই কমিটিও কোনো ধরনের লিজ/টেন্ডার আহ্বান করেনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে টেন্ডার আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ২০২২ সালে আমাকে আহবায়ক করে টেন্ডার আহ্বানের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং প্রথম মিটিংয়ে ১০ দিনের মধ্যে টেন্ডারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ঐসময়ে ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে থাকা কামাল উদ্দিন রেজিস্টার বরাবর আবেদন করে বকেয়া ভাড়া ও ইলেকট্রিসিটি বিল পরিশোধের জন্য সময় চেয়ে নেন। তারপর রেজিস্টার মহোদয় টেন্ডার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিবের কাছে মৌখিকভাবে টেন্ডার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলেন। সে কারণে টেন্ডার আহ্বান করতে পারিনি। তবে আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আহবায়ক কমিটির একটি মিটিং করবো এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাফেটেরিয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করবো।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক মো. কামাল উদ্দীনকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া মৌখিক চুক্তিতে কাউকে দিতে পারে কি না জানতে চাইলে যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির সহকারী রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর বলেন, সাময়িকভাবে উপাচার্য লিজ দিতে পারলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য দিতে পারেন না। তবে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে লিজ/টেন্ডার দেওয়ার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

এবিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য জানান, আমি বিভিন্ন সময়ে নিজে ক্যাফেটেরিয়া পরিদর্শন করে দেখেছি সেখানের অবস্থা খুবই খারাপ। এ বিষয়ে আমি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছি। খুব শীঘ্রই ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে যিনি রয়েছে তাকে সরানো হবে। ক্যাফেটেরিয়াকে খুব দ্রুত আধুনিকায়ন করা হবে এবং সেখানে যেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর পরিবেশ পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


টেন্ডারবিহীন অবস্থায় ৯ বছর ধরে চলছে যবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়া

Update Time : ০৯:১৯:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

যবিপ্রবি প্রতিনিধি

নিয়ম না থাকলেও টেন্ডার ছাড়াই ৯ বছর ধরে মৌখিকভাবে চলছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একমাত্র ক্যাফেটেরিয়া। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মানহীন খাবার ও তীব্র অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে এখনো এটির টেন্ডার আহ্বান করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কথিত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের ছত্রছায়ায় কামাল উদ্দীন নামের একজন বহাল তবিয়তে ক্যাফেটেরিয়া চালাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, যবিপ্রবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার ২০১৪ সালে মৌখিকভাবে সাময়িক সময়ের জন্য মোঃ কামাল উদ্দীনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেন। কিন্তু কামাল ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ না করায় এর তিন বছর পর ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ ক্যাফেটেরিয়ার বকেয়া ভাড়া আদায় ও পরিচালনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে একই কারণে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর পুনরায় বকেয়া ভাড়া আদায় ও লিখিত চুক্তির মাধ্যমে ক্যাফেটেরিয়া বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে আবারও ৫ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।

সর্বশেষ ২০২২ সালের ৪ জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া লিজ/টেন্ডার করার জন্য যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ জারি করা হয়। সেখানে যবিপ্রবির নিউট্রিশন এন্ড ফুড টেকনোলজি (এনএফটি) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শহীদ মসিয়ূর রহমান হল এর প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ’কে আহ্বায়ক করে ক্যাফেটেরিয়া পূর্ণাঙ্গভাবে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে লিজ/টেন্ডার করার জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এক বছরের ও বেশি সময় পার হলেও এই কমিটিও কোনো ধরনের লিজ/টেন্ডার আহ্বান করেনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে টেন্ডার আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ২০২২ সালে আমাকে আহবায়ক করে টেন্ডার আহ্বানের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং প্রথম মিটিংয়ে ১০ দিনের মধ্যে টেন্ডারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ঐসময়ে ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে থাকা কামাল উদ্দিন রেজিস্টার বরাবর আবেদন করে বকেয়া ভাড়া ও ইলেকট্রিসিটি বিল পরিশোধের জন্য সময় চেয়ে নেন। তারপর রেজিস্টার মহোদয় টেন্ডার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিবের কাছে মৌখিকভাবে টেন্ডার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলেন। সে কারণে টেন্ডার আহ্বান করতে পারিনি। তবে আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আহবায়ক কমিটির একটি মিটিং করবো এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাফেটেরিয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করবো।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক মো. কামাল উদ্দীনকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া মৌখিক চুক্তিতে কাউকে দিতে পারে কি না জানতে চাইলে যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির সহকারী রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর বলেন, সাময়িকভাবে উপাচার্য লিজ দিতে পারলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য দিতে পারেন না। তবে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে লিজ/টেন্ডার দেওয়ার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

এবিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য জানান, আমি বিভিন্ন সময়ে নিজে ক্যাফেটেরিয়া পরিদর্শন করে দেখেছি সেখানের অবস্থা খুবই খারাপ। এ বিষয়ে আমি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছি। খুব শীঘ্রই ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে যিনি রয়েছে তাকে সরানো হবে। ক্যাফেটেরিয়াকে খুব দ্রুত আধুনিকায়ন করা হবে এবং সেখানে যেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর পরিবেশ পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।