রাত হলে ভিক্টোরিয়া কলেজে বসে মাদক সেবনের আড্ডা

  • Update Time : ০১:৫৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩
  • / 165

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় রাত হলে স্থানীয়দের পাশাপাশি বহিরাগতদের নিয়মিত মাদক সেবনের আড্ডা বসে।

অভিযোগ রয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ শাখার অবসরপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বর্তমানে ঠিকাদারের অধিনে কলেজে কর্মরত অরুনের কক্ষে সন্ধ্যার পর মাদক সেবনের আড্ডা জমায় মাদকসেবীরা। এ চক্রটির মাদক সেবনে বাধা দিলে হামলার শিকার হয় কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কলেজের নৈশপ্রহরী। শুধু মাদকসেবন নয়, ক্যাম্পাসের কাঠাল বাগান তলার পাশে চলে অসমাজিক কর্মকাণ্ড।

অভিযুক্ত ভিক্টোরিয়া কলেজে কর্মচারী নৈশপ্রহরী অরুন বলেন, রুমটি আমার ব্যক্তিগত কোনো রুম নয়। এটি সমিতির রুম। এখানে কেউ আড্ডা দেয়না। মাঝেমধ্যে পুলাপাইনে রং ছং রাখে।
শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, কলেজের কান্দিরপাড় উচ্চমাধ্যমিক শাখার ২টি ফটকের গ্রিল টপকিয়ে ও মসজিদের সামনের ফটক দিয়ে বহিরাগতরা ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে রাতে অবস্থান করে ও মাদকসেবন করেন। এছাড়া অপকর্ম ঢাকতে অদৃশ্য শক্তির দ্বারা ২/৩ টি লাইট ছাড়া বাকি সকল লাইট বন্ধ করে দেন মাদকসেবীরা।

তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে জিম্মি করে মাদকের আড্ডার আসর বসায়।
সাম্প্রতিক একটি হামলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ( ৩ আগস্ট) বিকালে প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, পাশের মসজিদে চলছে নামাজ। আর মসজিদের পাশে আছে ডাকঘর। আর এই ডাকঘরের জায়গাটি অন্ধকার হওয়াতে এখানে কয়েকজন সিগারেট টানছে আর হাতে ফেন্সিডিলের বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটু সামনে মাঠের দিকে গেলে কলেজের মূল ফটকের পাশে দাড়িয়ে আছেন কলেজের প্রহরী শামসু। তিনি একটি টেবিলে চুপ করে বসে আছেন, দেখে মনে হবে তিনি মাদকসেবীদের পাহারাদার। কাঠাল বাগান তলার দিকে যেতেই দেখা মেলে কয়েকজনে। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। জানতে চাইলে তারা শিক্ষার্থী বললেও মনে হবেনা তারা শিক্ষার্থী। পাশের ৭ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনটি পুরোই অন্ধকার। এই ভবনের নিচে ২০/৩০ জন ছেলে হৈহল্লা আর মাদক সেবন করছে। এসব দেখে মনে হবেনা এটি কোনো শত বছরে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ।

এছাড়া সম্প্রতিকালে কলেজে সামনে থেকে ৮৬ বোতল বিদেশি মদ, ফেনসিডিল সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেন কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। পুলিশের অভিযানের পরপরই আবার শুরু হয় অপরাধীদের মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম। কলেজে মাদক সেবন করতে নিষেধ করায় গত ৩০ জুলাই ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে মদ্যপান অবস্থায় মহানগর ছাত্রলীগ নেতার উপর হামলা করেন ভিক্টোরিয়া কলেজের (উচ্চ মাধ্যমিক) শাখার সাবেক শিক্ষার্থী সীমান্তসহ তার দলবল। এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগ নেতা আবু হেনা।

এ ঘটনার পূর্বেও মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে বাধা দিলে হামলার শিকার হন মহানগর ছাত্রলীগের আরেক নেতা সুলতান আহমেদ সাকিব। এ ঘটনায় কয়েকজন আটক হওয়ার পর কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেন। পুলিশ জানায়, এসকল আটককারীদের বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাইয়ের অভিযোগ ও রয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদক সেবনের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর বলেন, মাদক আড্ডার বিষয়ে অবগত হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসনকে জানালে তারা সাথে সাথে একশন নেয়। ছাত্রলীগ বা যে কোনো ছাত্র হোক, কারো জন্য কোনো রুম বরাদ্দ নেই। আমার জানামতে মাদকের বিষয়ে আটকের পর একজনতো এখনো জেলে আছে। প্রয়োজনে এখন আবার ব্যবস্থা নেব।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বিপিএম বলেন, ভিক্টোরিয়ার প্রিন্সিপালের সাথে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


রাত হলে ভিক্টোরিয়া কলেজে বসে মাদক সেবনের আড্ডা

Update Time : ০১:৫৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় রাত হলে স্থানীয়দের পাশাপাশি বহিরাগতদের নিয়মিত মাদক সেবনের আড্ডা বসে।

অভিযোগ রয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ শাখার অবসরপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বর্তমানে ঠিকাদারের অধিনে কলেজে কর্মরত অরুনের কক্ষে সন্ধ্যার পর মাদক সেবনের আড্ডা জমায় মাদকসেবীরা। এ চক্রটির মাদক সেবনে বাধা দিলে হামলার শিকার হয় কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কলেজের নৈশপ্রহরী। শুধু মাদকসেবন নয়, ক্যাম্পাসের কাঠাল বাগান তলার পাশে চলে অসমাজিক কর্মকাণ্ড।

অভিযুক্ত ভিক্টোরিয়া কলেজে কর্মচারী নৈশপ্রহরী অরুন বলেন, রুমটি আমার ব্যক্তিগত কোনো রুম নয়। এটি সমিতির রুম। এখানে কেউ আড্ডা দেয়না। মাঝেমধ্যে পুলাপাইনে রং ছং রাখে।
শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, কলেজের কান্দিরপাড় উচ্চমাধ্যমিক শাখার ২টি ফটকের গ্রিল টপকিয়ে ও মসজিদের সামনের ফটক দিয়ে বহিরাগতরা ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে রাতে অবস্থান করে ও মাদকসেবন করেন। এছাড়া অপকর্ম ঢাকতে অদৃশ্য শক্তির দ্বারা ২/৩ টি লাইট ছাড়া বাকি সকল লাইট বন্ধ করে দেন মাদকসেবীরা।

তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে জিম্মি করে মাদকের আড্ডার আসর বসায়।
সাম্প্রতিক একটি হামলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ( ৩ আগস্ট) বিকালে প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, পাশের মসজিদে চলছে নামাজ। আর মসজিদের পাশে আছে ডাকঘর। আর এই ডাকঘরের জায়গাটি অন্ধকার হওয়াতে এখানে কয়েকজন সিগারেট টানছে আর হাতে ফেন্সিডিলের বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটু সামনে মাঠের দিকে গেলে কলেজের মূল ফটকের পাশে দাড়িয়ে আছেন কলেজের প্রহরী শামসু। তিনি একটি টেবিলে চুপ করে বসে আছেন, দেখে মনে হবে তিনি মাদকসেবীদের পাহারাদার। কাঠাল বাগান তলার দিকে যেতেই দেখা মেলে কয়েকজনে। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। জানতে চাইলে তারা শিক্ষার্থী বললেও মনে হবেনা তারা শিক্ষার্থী। পাশের ৭ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনটি পুরোই অন্ধকার। এই ভবনের নিচে ২০/৩০ জন ছেলে হৈহল্লা আর মাদক সেবন করছে। এসব দেখে মনে হবেনা এটি কোনো শত বছরে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ।

এছাড়া সম্প্রতিকালে কলেজে সামনে থেকে ৮৬ বোতল বিদেশি মদ, ফেনসিডিল সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেন কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। পুলিশের অভিযানের পরপরই আবার শুরু হয় অপরাধীদের মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম। কলেজে মাদক সেবন করতে নিষেধ করায় গত ৩০ জুলাই ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে মদ্যপান অবস্থায় মহানগর ছাত্রলীগ নেতার উপর হামলা করেন ভিক্টোরিয়া কলেজের (উচ্চ মাধ্যমিক) শাখার সাবেক শিক্ষার্থী সীমান্তসহ তার দলবল। এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগ নেতা আবু হেনা।

এ ঘটনার পূর্বেও মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে বাধা দিলে হামলার শিকার হন মহানগর ছাত্রলীগের আরেক নেতা সুলতান আহমেদ সাকিব। এ ঘটনায় কয়েকজন আটক হওয়ার পর কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেন। পুলিশ জানায়, এসকল আটককারীদের বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাইয়ের অভিযোগ ও রয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদক সেবনের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর বলেন, মাদক আড্ডার বিষয়ে অবগত হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসনকে জানালে তারা সাথে সাথে একশন নেয়। ছাত্রলীগ বা যে কোনো ছাত্র হোক, কারো জন্য কোনো রুম বরাদ্দ নেই। আমার জানামতে মাদকের বিষয়ে আটকের পর একজনতো এখনো জেলে আছে। প্রয়োজনে এখন আবার ব্যবস্থা নেব।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বিপিএম বলেন, ভিক্টোরিয়ার প্রিন্সিপালের সাথে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে