আলোচিত কলেজ ছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ড- আড়াই বছর পর পিবিআইয়ের তৎপরতা, মামলার সাক্ষীকে তলব

  • Update Time : ১১:৪৩:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩
  • / 167

কুমিল্লা প্রতিনিধি।।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান ওরফে তনু হত্যা মামলাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য সাক্ষী লাইজু জাহানকে তলব করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকার দক্ষিণ কল্যাণপুরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান এক চিঠির মাধ্যমে স্বাক্ষীকে তলব করেছেন। আগামী ৩ আগস্ট সকাল ১০টায় কুমিল্লা নগরীর হাউজিং এস্টেট পিবিআই কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে তাঁকে ডাকা হয়েছে।
লাইজু জাহান নিহত তনুর চাচাতো বোন। ঘটনার দিন লাইজু কুমিল্লা সেনানিবাসে সোহাগীদের বাসায় ছিলেন। এর আগেও তাঁকে একাধিকবার নানা সংস্থা ডেকে নানা বিষয় জানতে চেয়েছিলো। মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সোমবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তনুর পরিবার বলছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘ আড়াই বছরের ব্যবধানে পিবিআই ফের এ মামলায় তৎপর হলো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকার দক্ষিণ কল্যাণপুরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মামলাটি নিয়ে তৎপর রয়েছি। মামলার তদন্তের স্বার্থেই লাইজু জাহানকে ডাকা হয়েছে। এজন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অন্য সাক্ষীদেরও পর্যায়ক্রমে ডাকা হবে। তদন্তকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা ডেকেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে পারবো।
মামলার বাদী ইয়ার হোসেন বলেন, তনুর চাচাতো বোন লাইজু এখন সুনামগঞ্জের ছাতকে থাকেন। তাঁকে এর আগেও অনেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদেই ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার তদন্ত। মেয়ের খুনিরা এখনো অধরা। ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, লাইজুকে আর কতবার জিজ্ঞেস করা হবে। তারপরও এত দিন পর পিবিআই সজাগ হলো। দেখি, কী হয়। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মরার আগে মেয়ের খুনিদের চেহারা দেখা হবে না। বিচারতো দূরের কথা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের ঝোপজঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনায় ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোহাগী হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পার হয়েছে। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। এরই মধ্যে পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। কোনো কিনারা করতে পারেনি বর্তমান তদন্ত সংস্থা পিবিআইও।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলামকে। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম মনজুর আলমকে। তৃতীয়বার ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডির কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বিষয়টি তদন্ত করেন। এরপর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জালাল উদ্দিন আহম্মদ চার বছরের অধিক সময় এই মামলার কিনারা করতে পারেননি। সবশেষ ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পিবিআই ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মজিবুর রহমান তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তাঁদের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আলোচিত কলেজ ছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ড- আড়াই বছর পর পিবিআইয়ের তৎপরতা, মামলার সাক্ষীকে তলব

Update Time : ১১:৪৩:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩

কুমিল্লা প্রতিনিধি।।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান ওরফে তনু হত্যা মামলাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য সাক্ষী লাইজু জাহানকে তলব করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকার দক্ষিণ কল্যাণপুরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান এক চিঠির মাধ্যমে স্বাক্ষীকে তলব করেছেন। আগামী ৩ আগস্ট সকাল ১০টায় কুমিল্লা নগরীর হাউজিং এস্টেট পিবিআই কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে তাঁকে ডাকা হয়েছে।
লাইজু জাহান নিহত তনুর চাচাতো বোন। ঘটনার দিন লাইজু কুমিল্লা সেনানিবাসে সোহাগীদের বাসায় ছিলেন। এর আগেও তাঁকে একাধিকবার নানা সংস্থা ডেকে নানা বিষয় জানতে চেয়েছিলো। মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সোমবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তনুর পরিবার বলছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘ আড়াই বছরের ব্যবধানে পিবিআই ফের এ মামলায় তৎপর হলো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকার দক্ষিণ কল্যাণপুরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মামলাটি নিয়ে তৎপর রয়েছি। মামলার তদন্তের স্বার্থেই লাইজু জাহানকে ডাকা হয়েছে। এজন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অন্য সাক্ষীদেরও পর্যায়ক্রমে ডাকা হবে। তদন্তকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা ডেকেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে পারবো।
মামলার বাদী ইয়ার হোসেন বলেন, তনুর চাচাতো বোন লাইজু এখন সুনামগঞ্জের ছাতকে থাকেন। তাঁকে এর আগেও অনেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদেই ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার তদন্ত। মেয়ের খুনিরা এখনো অধরা। ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, লাইজুকে আর কতবার জিজ্ঞেস করা হবে। তারপরও এত দিন পর পিবিআই সজাগ হলো। দেখি, কী হয়। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মরার আগে মেয়ের খুনিদের চেহারা দেখা হবে না। বিচারতো দূরের কথা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের ঝোপজঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনায় ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোহাগী হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পার হয়েছে। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। এরই মধ্যে পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। কোনো কিনারা করতে পারেনি বর্তমান তদন্ত সংস্থা পিবিআইও।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলামকে। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম মনজুর আলমকে। তৃতীয়বার ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডির কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বিষয়টি তদন্ত করেন। এরপর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জালাল উদ্দিন আহম্মদ চার বছরের অধিক সময় এই মামলার কিনারা করতে পারেননি। সবশেষ ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পিবিআই ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মজিবুর রহমান তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তাঁদের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।