যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, ভীত সন্ত্রস্ত শিক্ষকরা, অভিযোগ অস্বীকার ছাত্রলীগের
- Update Time : ১১:২৮:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩
- / 541
যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পরিবহন পুলের সকল বাস ও লিফট বন্ধের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাখা ছাত্রলীগ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (১৬ জুলাই) যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালের নেতৃত্বে কতিপয় ছাত্রলীগকর্মী কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ বেলা আড়াই টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল রুটের পরিবহন বন্ধসহ প্রশাসনিক, একাডেমিক ভবনের লিফটসমূহ বন্ধ করে দেয়। এমনকি মিনিবাস, মাইক্রোবাসসহ অন্য পরিবহনসমূহের ড্রাইভারদের কাছ থেকে তারা জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে নেয়। বাধ্য হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকেই লাইনবাস, ভ্যান বা অটোতে করে বাড়ি ফিরে যায়। আজকেও বিশ্ববিদ্যালয় হতে কোনো প্রকার পরিবহন চলাচল করতে দেওয়া হয়নি।
শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী, ও শিক্ষার্থীদের বাস বন্ধের বিষয়ে যবিপ্রবির পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. জাফিরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সার্বিক পরিস্থিতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আনিছুর রহমান কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সৈয়দ মো: গালিব ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো: আশরাফুজ্জামান জাহিদের কাছে এ বিষয়ে জানতে গেলে কোনো ধরনের বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এমনকি পরিবহন বন্ধে শিক্ষকদের সমস্যা নিয়েও কথা বলতে রাজি হননি তাঁরা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল ও সম্পাদক তানভীর সহ ১০/১২ জন নেতাকর্মী গতকাল শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস ও লিফট বন্ধ করে দেয় এবং আমি জানতে পেরেছি আজকেও সকল বাস ও সকল ভবনের লিফট বন্ধ করে দিয়েছে তাঁরা। এমনকি কোষাধ্যক্ষ বিভিন্ন অনুষদের ডীনদের সাথে নিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সাথে কথা বলে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেন কিন্তু তাঁরা কোনো সমাধান না করেই তাঁরা বলে আমরা আরো বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে দিচ্ছি। ছাত্রলীগের এমন কর্মকান্ড অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত কাজ। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করছে।
চলমান পরিস্থিতি সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, আমি এখন ঢাকাতে অবস্থান করছি। ক্যাম্পাসে গিয়ে তাঁদের সাথে কথা বলবো। তাঁরা(ছাত্রলীগ) তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে জরুরি রিজেন্ট বোর্ড সভা ডেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁরা অনেক সময় অনেক কিছু চায় যেগুলো বলা যায় না, অন্যায় আবদার তো আর রাখা যায় না।সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর প্রধান শিক্ষকগণ এ সকল বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলার অপারগতা প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকরা অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের প্রতি জোরপূর্বক শিক্ষকদের বাসের চাবি নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগের কেউ বাস ও লিফট বন্ধ করেনি। নেতাকর্মীরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন দপ্তর ও অফিসে গিয়ে এসি না চালানোর জন্য, জরুরি লিফট ব্যতীত বাকি লিফট বন্ধ রাখার জন্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালিয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীসহ সকলের জন্য যবিপ্রবি ছাত্রলীগ জয় বাংলা বাইক সার্ভিস চালু করেছে। উপাচার্য স্যারের সাথে কোনো ধরনের চাওয়া-পাওয়ার সম্পর্ক নেই ছাত্রলীগের।
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন,পরিবহন ও লিফট গুলো চালানো প্রশাসনের আওতাধীন, সেগুলো আমরা বন্ধ করিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জায়গায় আমরা ক্যাম্পেইন চালিয়েছি। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যেসকল স্থানে তুলনামূলকভাবে বেশি বিদ্যুৎ ব্যয় হয় অর্থাৎ এসি বাস, অপ্রয়োজনীয় লিফট, এসি বন্ধ রাখার ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে ক্যাম্পেইন চালিয়েছি। তবে যে অভিযোগ এসেছে আমাদের চাওয়া পাওয়ার ব্যাপারে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ইতিপূর্বে আমরা হলগুলোতেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছি।