যবিপ্রবিতে অনাবাসিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী আখ্যা, প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি
- Update Time : ০৯:৪৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩
- / 188
যবিপ্রবি প্রতিনিধি:
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শেখ হাসিনা ছাত্রী হলে ছাত্রীদের মৌলিক অধিকার খর্ব, হল নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক ছাত্রীদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে যবিপ্রবির ছাত্রীরা।
রবিবার (১২ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার কাম একাডেমিক ভবনের সামনে ‘যবিপ্রবির শেখ হাসিনা হলের অনাবাসিক ও আবাসিক ছাত্রীদের দ্বারা অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে’ প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেন। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
জানা যায়, গত ০৭ ই মার্চ ছাত্রী হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,”এতদ্বারা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনাবাসিক ছাত্রীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, হল অফিস ব্যতিত কোন অনাবাসিক ছাত্রী পূর্ব অনুমতি ব্যতিত শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। এরূপ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এবং এরূপ অনুপ্রবেশকারীর সাথে সংশ্লিষ্ট আবাসিক ছাত্রীর আবাসিক সিটটিও বাতিল করা হবে।’ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, নানারকম আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।।শনিবার (১১ মার্চ) প্রতিবাদের অংশ হিসেবে মানববন্ধন করে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার( ১২ মার্চ) উক্ত বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করে ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ দেয় হল প্রভোস্টের কার্যালয়।
বিজ্ঞপ্তে বলা হয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্রীদের জন্য বর্তমানে একটি মাত্র আবাসিক হল চালু থাকায় তাঁদের পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে বর্তমানে চালুকৃত একমাত্র ছাত্রী হল, শেখ হাসিনা ছাত্রী হলে নানা সময়ে অনেক অনাবাসিক ছাত্রীদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রাত্যহিক বিভিন্ন সুবিধার জন্য যেতে হয়। তবে গত ০৪.০৩.২০২৩ খ্রি. তারিখে শেখ হাসিনা ছাত্রী হলে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় হলের আবাসিক কিছু ছাত্রী অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের বিষয়ে আপত্তি তোলেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, হল প্রশাসন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের বিষয়ে নোটিশ জারি করে। নোটিশ জারির পর সকলের সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের ধরণে হল প্রশাসন মনে করে, এটি অধিকাংশ ছাত্রীর ‘ঐক্যবদ্ধ মতামত’ ছিল না। এ প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ছাত্রী হলে যবিপ্রবির অনাবাসিক ছাত্রীদের প্রবেশ সংক্রান্ত নোটিশটি বাতিল করা হলো। আশা করি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পারস্পারিক শ্রদ্ধা, মর্যাদা ও স্নেহের সম্পর্ক পূর্ণরূপে বজায় থাকবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী এক অনাবাসিক ছাত্রী বলেন, একজন অনাবাসিক ছাত্রীকে নানা প্রয়োজনে হলে যাওয়া লাগতেই পারে। এর জন্য যদি হল প্রশাসনের কাছে অনুমতি নিতে হয় তাহলে এরচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আর আমি হল প্রশাসনের কাছে জানতে চাই কেন আমাদেরকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হলো যেখানে আমরা পরিচয়পত্র সংগ্রহ করি ছাত্রী হল থেকে।এই কথাটির উপযুক্ত ব্যাখ্যা তিনি দিবেন এবং এটির জন্য যেন তিনি ক্ষমা চান।
আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন সুচী বলেন , একজন প্রভোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কিভাবে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বলে অ্যাখ্যায়িত করে, এর সঠিক জবাব উনাকে দিতে হবে।অন্যথায় উনাকে পদত্যাগ করতে হবে। কোন ক্ষমতাবলে তিনি এমন বলেছেন। আমাদের প্রথম দিনের মানববন্ধনের পর উনি নোটিশটি বাতিল করেছেন কিন্তু উনি এই ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ কথাটির সঠিক ব্যাখ্যা দেননি৷সঠিক জবাব না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের দাবি অটল থাকবে।
এবিষয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শিরিন নিগার বলেন,বিভিন্ন সময়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়ে থাকি রুম থেকে জিনিস চুরি হচ্ছে,পরীক্ষার সময়ে আবাসিক ছাত্রীদের রুমে এসে অন্য মেয়েরা গল্প করে এতে পরীক্ষার্থীদের ডিস্টার্ব হয়।এছাড়া নতুন শিক্ষার্থী আসায় আমাদের সিট সংখ্যা কম থাকায় টিভি ও রিডিং রুমে তাঁদেরকে রাখতে হচ্ছে সবমিলিয়ে পড়াশোনায় একটা ঝামেলা হয়। গত জেনারেল মিটিংয়ে কিছু ছাত্রীর এসকল অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হল কর্তৃপক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো।
তিনি আরো বলেন, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ শব্দের আগে নোটিশে বলা হয়েছে পূর্ব অনুমতি ব্যতিত কোনো অনাবাসিক শিক্ষার্থী হলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেনা। আগে তো বুঝতে হবে কথাটা কি? তবেই না বোঝা যাবে। তাঁরা তো আমার কাছে এসে বলতে পারতো ম্যাম এইটা শুনতে খারাপ লাগছে, আমি চেঞ্জ করে দিতাম। তাঁরা কোনো মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ দেয়নি। পদত্যাগ দাবীর প্রশ্নে তিনি বলেন, তাঁদের(ছাত্রীদের) দাবি যৌক্তিক হলে আমি পদত্যাগ করবো।