ইবির সেই হল প্রভোস্টকে অপসারণ, নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের স্থায়ী বহিষ্কার চায় শিক্ষার্থীরা
- Update Time : ০১:৩৩:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩
- / 145
ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকায় ছাত্রলীগের ৫ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগ সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমরা উৎসগুলো থেকে তথ্যের ভিত্তিতে বহিষ্কার করেছি। সকলের সংশ্লিষ্টতা আছে এটা নিশ্চিত। এখন অপরাধ কতটুকু এটাতো বিবেচ্য বিষয়। এখানে তাদের ভুল বা অন্যায় যেটাই হোক, তার ভিত্তিতে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে। এটা স্থায়ীও হতে পারে, অস্থায়ীও হতে পারে।’
ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা যে তদন্ত কমিটি করেছিলাম সেই তদন্তের রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। এ সংগঠনের কোন দুষ্কৃতকারী বা কেউ অন্যায় কাজের সাথে জড়িত থাকলে তাকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তারই ফলস্বরূপ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেই নির্দেশনাকে স্বাগত জানায়।’
এদিকে আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে নির্যাতনে জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কার ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে ‘দায়িত্বে অবহেলার’ অভিযোগে হল থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে হলগুলোতে সিসিটিভি মনিটরিং বাড়ানো এবং ভুক্তভোগী ছাত্রীকে তার পছন্দমতো হলে থাকার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশনার পর দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে দায়িত্ব্ থেকে প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১লা মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করেছি এবং হলের সিনিয়র হাউজ টিউটরকে সাময়িকভাবে হল চালানোর জন্য বলা হয়েছে। ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। তিনি ক্যাম্পাসে এলে প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে।’
এদিকে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আগামী শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান ।
জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে শাখা ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অপরাধের বিরুদ্ধে নজির স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় আমরা অপরাধীদের যে ধরণের শাস্তির আশা করেছিলাম তা চোখে পড়েনি। দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কারের মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক, এটাই আমাদের চাওয়া।’
প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা ও তার সহযোগীরা। পরে ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল কর্তৃপক্ষ, শাখা ছাত্রলীগ ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।