আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসায় হোঁচট

  • Update Time : ০১:১০:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / 154

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ফারাক্কায় আদানি পাওয়ারের কাজ বন্ধের দাবিসহ অন্য দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ রপ্তানি প্রকল্পের বিরোধিতা করে জনস্বার্থে এই মামলাটি করা হয়। আর এতে বাংলাদেশে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ রপ্তানিতে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) কলকাতা হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি দায়ের করেন পশ্চিমবঙ্গের ৩০ জন ফল চাষী ও অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটস (এপিডিআর) নামে একটি সংস্থা।

কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ঝুমা সেন একাত্তরকে বলেন, মঙ্গলবার আদালত মামলা গ্রহণ করেছেন। আগামী সাত ফেব্রুয়ারি এই মামলার প্রথম শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

তিনি জানান, ওই দিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই আদানি গ্রুপের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিলো।

জানা যায়, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় আদানি গ্রুপের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ওপর দিয়ে খুঁটি দিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের তার (হাইটেনশন) যাচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু জেলার যে অংশের ওপর দিয়ে আদানির এই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাচ্ছে, সেই ফারাক্কা নামক জায়গায় প্রচুর পরিমাণ আম ও লিচুর বাগান থাকায় তাতে প্রবল আপত্তি জানায় সেখানকার ফল চাষীরা।

 

গত বছরের জুলাই মাসে এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষও হয়। তাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোর করে আম-লিচু বাগানের ওপর গিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের লাইন বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছে আদানি।

তাদের দাবি, এলাকাটি জনবসতিপূর্ণ। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণ আম, লিচুগাছ রয়েছে। ওই আম-লিচুর ফলনের ওপরই তারা নির্ভরশীল। কিন্তু ওই ফসলী জমির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গেলে ফলনের ওপর প্রভাব পড়বে।

এমন অবস্থায় গত জুলাই মাসেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় লুৎফর রহমান নামে এক ফল চাষী। সেই সময় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চ মামলা শোনার পর আদানি গ্রুপের জমি কেনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় আদানি গ্রুপ যেহেতু বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতছে, তাই আদালত আদানির প্রকল্পের নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে।

একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে ফারাক্কা এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেও নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতের নির্দেশ, কৃষকদের জমির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে। তিনিই ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

এদিকে দীর্ঘ ছয় মাসে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তায় আদনির সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হলেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি চাষীদের। চাষবাস হারিয়ে কার্যত বিপাকে পড়েছে তারা। এমন অবস্থায় আবারও আদানি গ্রুপ ও রাজ্য সরকারকে অভিযুক্ত করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ফারাক্কার ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ ফল চাষী ও এপিডিআর। যদিও জমি জটের অভিযোগ তুলে এর আগেও সরব হয়েছিল এপিডিআর।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসায় হোঁচট

Update Time : ০১:১০:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ফারাক্কায় আদানি পাওয়ারের কাজ বন্ধের দাবিসহ অন্য দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ রপ্তানি প্রকল্পের বিরোধিতা করে জনস্বার্থে এই মামলাটি করা হয়। আর এতে বাংলাদেশে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ রপ্তানিতে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) কলকাতা হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি দায়ের করেন পশ্চিমবঙ্গের ৩০ জন ফল চাষী ও অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটস (এপিডিআর) নামে একটি সংস্থা।

কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ঝুমা সেন একাত্তরকে বলেন, মঙ্গলবার আদালত মামলা গ্রহণ করেছেন। আগামী সাত ফেব্রুয়ারি এই মামলার প্রথম শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

তিনি জানান, ওই দিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই আদানি গ্রুপের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিলো।

জানা যায়, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় আদানি গ্রুপের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ওপর দিয়ে খুঁটি দিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের তার (হাইটেনশন) যাচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু জেলার যে অংশের ওপর দিয়ে আদানির এই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাচ্ছে, সেই ফারাক্কা নামক জায়গায় প্রচুর পরিমাণ আম ও লিচুর বাগান থাকায় তাতে প্রবল আপত্তি জানায় সেখানকার ফল চাষীরা।

 

গত বছরের জুলাই মাসে এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষও হয়। তাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোর করে আম-লিচু বাগানের ওপর গিয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের লাইন বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছে আদানি।

তাদের দাবি, এলাকাটি জনবসতিপূর্ণ। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণ আম, লিচুগাছ রয়েছে। ওই আম-লিচুর ফলনের ওপরই তারা নির্ভরশীল। কিন্তু ওই ফসলী জমির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গেলে ফলনের ওপর প্রভাব পড়বে।

এমন অবস্থায় গত জুলাই মাসেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় লুৎফর রহমান নামে এক ফল চাষী। সেই সময় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চ মামলা শোনার পর আদানি গ্রুপের জমি কেনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় আদানি গ্রুপ যেহেতু বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতছে, তাই আদালত আদানির প্রকল্পের নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে।

একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে ফারাক্কা এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেও নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতের নির্দেশ, কৃষকদের জমির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসকের কাছে আবেদন করতে হবে। তিনিই ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

এদিকে দীর্ঘ ছয় মাসে রাজ্য সরকারের নিরাপত্তায় আদনির সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হলেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি চাষীদের। চাষবাস হারিয়ে কার্যত বিপাকে পড়েছে তারা। এমন অবস্থায় আবারও আদানি গ্রুপ ও রাজ্য সরকারকে অভিযুক্ত করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ফারাক্কার ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ ফল চাষী ও এপিডিআর। যদিও জমি জটের অভিযোগ তুলে এর আগেও সরব হয়েছিল এপিডিআর।