সাকা-পুত্র হুম্মামের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ
- Update Time : ০৮:৪৪:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
- / 190
ঢাবি প্রতিনিধিঃ
মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠন গৌরব ’৭১। সমাবেশ থেকে আইন মোতাবেক হুম্মাম কাদেরের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।
আজ শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকাল ৪ টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আফলাজুর রহমান বাবু বলেন, জিয়া ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে এনেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়েছে। পরবর্তীতে খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছে। কিন্তু ১৯৮১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে এসে রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে আবার এ পথ বন্ধ করার নানা ফন্দি করেছে। তবুও বঙ্গবন্ধুকন্যা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আপনাকে বলতে চাই, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার সাকা চৌধুরীর পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে আমি অবাক হইনি। কারণ,রাজাকারের সন্তান রাজাকারের সন্তানের মতো কথা বলবে। তবে এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এসব স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম বলেন,আমি একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ১৯৭২ সালে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী সাকা চৌধুরীর বিচার হলে তাহলে হুম্মাম চৌধুরীর জন্ম হতো না। আজকেই তার অঙ্গভঙ্গি রাষ্টদ্রোহীতার শামিল। কাজেই তার বিরুদ্ধে রাষ্টদ্রোহীতার মামলা করা উচিত।
আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন,আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, এদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসি। অথচ স্বাধীনতার এতো বছর বছর পরেও আমাদের যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর সন্তানদের হুংকার শুনতে হয়। এটা কী ভাবা যায়? আমি সরকারকে বলবো, তাকে সংবিধান ও আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি মানিক লাল ঘোষ বলেন, গত দুইদিন আগে যুদ্ধ অপরাধীর পুত্র হুম্মাম চৌধুরী বলেছেন এই সরকার যে সমস্ত যুদ্ধ অপরাধের দায়ে যাদেরকে ফাঁসি দিয়েছেন তারা নাকি শহীদ। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছি। আমাদের সন্তানরাও বেঁচে আছি। কাজেই কোন যুদ্ধাপরাধী সন্তান বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। আমি দাবি জানাচ্ছি, আগামী ১০০ বছর কোন রাজাকারের সন্তান কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবে না এবং একইসাথে তাদের সন্তানদের কোন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়া যাবে না।
গৌরব ’৭১ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন বলেন, বিএনপির নামে স্বাধীনতা বিরোধীদের যে ফ্রন্ট, তারা মহাসমাবেশে এদেশের স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করেছে। তাদের এই সমাবেশে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার সাকা চৌধুরীর পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী নারায়ে তাকবীর স্লোগান দিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছে। কত বড় স্পর্ধা!
সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,দ্রুততম সময়ে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একইসাথে হুম্মামের বিরুদ্ধে আইনি মোতাবেক সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায়, আমরা গৌরব’ ৭১ সংগঠন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করবো।
সভাপতির বক্তব্যে গৌরব ৭১ সংগঠনের সহ সভাপতি হাবিবুর রহমান রোমেল বলেন, সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ছেলের আরবী নাম হুম্মাম কাদের। যার অর্থ বাথরুম ব্যবস্থাপক। একজন বাথরুম ব্যবস্থাপকের মুখ থেকে সর্বোচ্চ কী ধরণের বক্তব্য আমরা আশা করতে পারি। একজন পিতা তার সন্তানের এমন নাম রাখতে পারেন, সেহেতু তার মুখ থেকে বাথরুমের গন্ধই বের হবে। এসময় তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, এই সংগ্রাম শাহবাগ থেকে শুরু হয়েছে এবং এখানেই শেষ হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি, আফসানা ফেরদৌস কেকা,গৌরব গৌরব ৭১ সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রূপমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ,বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ,বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ,শিক্ষক, বুদ্ধিজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বুধবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রামে বিএনপির মহাসমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর স্লোগানসহ ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে ।