ঢাবি অধ্যাপক শামসুল হকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া

  • Update Time : ০২:১১:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 170

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক অধ্যাপক
শামসুল হক মোল্লার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিক্ষাঙ্গনে। অধ্যাপক শামসুল হক মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বাংলাদেশ গণিত সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি তৎকাল জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং লিবিয়ায় একটি ইউনিভার্সিটিতে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। তিনি ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।

জানা যায়, অধ্যাপক শামসুল হক মোল্লা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে ঢাকার শ্যামলী সেন্ট্রাল হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বুধবার ফজরের পর ধানমন্ডি নিজ বাসার নিকটস্থ মসজিদে, সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ও কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এবং বিকাল ৩টায় নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার মুরাদনগরে অবস্থিত চাঁদ মিয়া মোল্লা ডিগ্রি কলেজ মাঠে তাঁর জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুনীগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

এদিকে তাঁর মৃত্যুতে পরিবারসহ দেশের শিক্ষাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ব্যক্তি জীবনে শিক্ষা উন্নয়ন ও মানবসেবায় তিনি ছিলেন নিরলস নিঃস্বার্থ ব্যক্তি। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেন, ক্লিনিকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এই গুণী শিক্ষাবিদ।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ থেকেই নিজের অবহেলিত গ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। তিনি নিজের গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এই। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- চাঁদ মিয়া মোল্লা ডিগ্রী কলেজ, তায়মোস বেগম উচ্চ বিদ্যালয়, আফরোজা হক কিন্ডারগার্টেন, তায়মোস-অফুলা ইবতেদায়ে মাদ্রাসা, হক কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি মুরাদনগর, হোমনা ও তিতাস উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামে সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়েছেন।

চারিদিকে শিক্ষার ব্রত ছড়িয়ে দিতে প্রথমেই ১৯৯৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন চাঁদ মিয়া মোল্লা ডিগ্রি কলেজ। পরবর্তীতে শিক্ষার মান উন্নয়নে গ্রামের অবহেলিত গরীব জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে গড়ে তোলেন প্রফেসর শামসুল হক মোল্লা ট্রাস্ট। ট্রাস্টের মাধ্যমে গড়েছেন অসংখ্য ক্লিনিক, গণ গ্রন্থাগার, ছাত্রাবাস, ইদগাহ, মসজিদসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। গ্রামের অসহায় মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য হাতে নিয়েছেন আদর্শ গ্রাম প্রকল্প।

উল্লেখ্য, সামাজিক কাজে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আন্তজার্তিক “ডিস্টিংগুইশড লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড”, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর টোটাল সোসাল এডভান্সমেন্ট কর্তৃক “সেরা-সেবক” পুরষ্কার, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ গণিত সমিতি কর্তৃক “বর্ষীয়ান গণিতবিদ সম্মাননা”, ২০১৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ গণিত বিভাগ কর্তৃক “আজীবন সম্মাননা” সহ অসংখ্য সম্মাননা ও পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন এই গুণী শিক্ষাবিদ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঢাবি অধ্যাপক শামসুল হকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া

Update Time : ০২:১১:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক অধ্যাপক
শামসুল হক মোল্লার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিক্ষাঙ্গনে। অধ্যাপক শামসুল হক মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বাংলাদেশ গণিত সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি তৎকাল জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং লিবিয়ায় একটি ইউনিভার্সিটিতে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। তিনি ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।

জানা যায়, অধ্যাপক শামসুল হক মোল্লা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে ঢাকার শ্যামলী সেন্ট্রাল হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বুধবার ফজরের পর ধানমন্ডি নিজ বাসার নিকটস্থ মসজিদে, সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ও কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এবং বিকাল ৩টায় নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার মুরাদনগরে অবস্থিত চাঁদ মিয়া মোল্লা ডিগ্রি কলেজ মাঠে তাঁর জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুনীগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

এদিকে তাঁর মৃত্যুতে পরিবারসহ দেশের শিক্ষাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ব্যক্তি জীবনে শিক্ষা উন্নয়ন ও মানবসেবায় তিনি ছিলেন নিরলস নিঃস্বার্থ ব্যক্তি। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেন, ক্লিনিকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এই গুণী শিক্ষাবিদ।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ থেকেই নিজের অবহেলিত গ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। তিনি নিজের গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এই। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- চাঁদ মিয়া মোল্লা ডিগ্রী কলেজ, তায়মোস বেগম উচ্চ বিদ্যালয়, আফরোজা হক কিন্ডারগার্টেন, তায়মোস-অফুলা ইবতেদায়ে মাদ্রাসা, হক কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি মুরাদনগর, হোমনা ও তিতাস উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামে সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়েছেন।

চারিদিকে শিক্ষার ব্রত ছড়িয়ে দিতে প্রথমেই ১৯৯৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন চাঁদ মিয়া মোল্লা ডিগ্রি কলেজ। পরবর্তীতে শিক্ষার মান উন্নয়নে গ্রামের অবহেলিত গরীব জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে গড়ে তোলেন প্রফেসর শামসুল হক মোল্লা ট্রাস্ট। ট্রাস্টের মাধ্যমে গড়েছেন অসংখ্য ক্লিনিক, গণ গ্রন্থাগার, ছাত্রাবাস, ইদগাহ, মসজিদসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। গ্রামের অসহায় মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য হাতে নিয়েছেন আদর্শ গ্রাম প্রকল্প।

উল্লেখ্য, সামাজিক কাজে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আন্তজার্তিক “ডিস্টিংগুইশড লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড”, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর টোটাল সোসাল এডভান্সমেন্ট কর্তৃক “সেরা-সেবক” পুরষ্কার, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ গণিত সমিতি কর্তৃক “বর্ষীয়ান গণিতবিদ সম্মাননা”, ২০১৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ গণিত বিভাগ কর্তৃক “আজীবন সম্মাননা” সহ অসংখ্য সম্মাননা ও পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন এই গুণী শিক্ষাবিদ।