ঢাবির সূর্যসেন হলের দুই ছাত্রকে মারধর ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ
- Update Time : ১২:০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর ২০২১
- / 174
জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলের দুই ছাত্রকে মারধর ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে হল ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। গত রোববার রাত পৌনে ৩টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত তাদের হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা ।
অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগকর্মী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ সিফাত এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংলিশ ফর স্পিকার্স অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস বিভাগের মাহমুদুর রহমান অর্পণ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। আরিফুল ইসলাম হল সংসদের সদ্য সাবেক সদস্য।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘটনার সময় ৩৫১ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর সঙ্গে তাদের আরও চার বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাকিল, রেজওয়ান, তাসকিন ও মারুফ। এদের মধ্যে শাকিল উর্দু বিভাগের আর রেজওয়ান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের।
ভুক্তভোগীরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তারা ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম এবং গেস্ট রুমে অনিয়মিত হয়ে যান। এসবের জন্য অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীদের ডাকলেও পরীক্ষা বা ক্লাস থাকার কারণে তারা যেতেন না। এ নিয়ে তারা (অভিযুক্তরা) ক্ষুব্ধ ছিল। তাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও রুমটা প্রশাসনের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়ায় সেটি পারেননি।
ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন, রোববার দিবাগত রাতে আমরা রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। রাত আড়াইটার দিকে সিফাত উল্লাহ এবং মাহমুদ অর্পণ রুমে আসেন। আমাদের তাদের ৩৫১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আরও চারজন উপস্থিত ছিলেন। এরপর তারা শুরুতে তাদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছি বলে আমাদের বকা দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সিফাত এবং মাহমুদ উত্তেজিত হয়ে যান। আমাদের দিকে রড, স্টাম্প নিয়ে তেড়ে আসেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত তাদের বাকি বন্ধুরা এই দুইজনকে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। এরপর তারা রড স্ট্যাম্প ফেলে দিয়ে আমাদের কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।
তারা বলেন, ৪টার সময় আমাদের রুম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যাওয়ার সময় সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল থেকে বের হয়ে না গেলে হত্যা করে হলের পানির ট্যাংকের পেছনে ফেলে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন। পরে ভয়ে আমরা রাতেই হল থেকে বের হয়ে যাই।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ ঘটনার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, রোববার সারারাত আমি আমার রুমে ঘুমে ছিলাম। যাদের কথা বলছেন, তাদের আমি ভালোভাবে চিনিও না। তাদের মারধর করার প্রশ্নই আসে না। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। আমার রাজনীতি নষ্ট করার জন্য হয়তো তারা এসব বলছে।
সিফাত ও মাহমুদুর সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগরের অনুসারী। মারধরের ঘটনার বিষয়ে ইমরান বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে ছাত্রলীগ বা আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মারধরের বিষয়টি প্রমাণিত হলে হল কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নেবে, সেখানে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।’
মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মীমাংসা করার চেষ্টা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছি এবং সার্বিক খোঁজখবর নেওয়ার জন্য হল প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। হল প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সিফাত উল্লাহ ও মাহমুদুর রহমান ওরফে অর্পণ।বহিষ্কারাদেশ পরে প্রত্যাহার করা হয়। তিন বছরের মাথায় আবার তাঁদের বিরুদ্ধে মারধর-নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।