ঘর পেয়ে কাঁদলেন বীরাঙ্গনা শিলা, অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রীও
- Update Time : ০২:৫৭:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুন ২০২১
- / 199
নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি। আগে রাস্তার ভিখারি ছিলাম,এখন আমি লাখপতি। শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য আমি এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। ভগবান আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) দীর্ঘজীবী করুন।’
জমির মালিকানাসহ আধাপাকা ঘর পেয়ে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন মৌলভীবাজারের কালাপুর ইউনিয়নের মাইজদিহি গ্রামের বীরাঙ্গনা শিলা গুহ। এসময় তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে খুশির অশ্রু।
বীরাঙ্গনা শিলা গুহ-এর কান্নায় আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। কথা বলা শেষে চশমা খুলে চোখ মুছতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে।
রোববার (২০ জুন) সারাদেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি হস্তান্তরের কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় কুড়িগ্রামের সদর, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শ্রীমঙ্গলের বীরাঙ্গনা শিলা গুহ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আত্মা যেন শান্তি পায়, আমি সেই কামনা করি। তারা যেন স্বর্গ থেকে দেখতে পান, আমরা সুখী হয়েছি।’
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩০০ পরিবারের ১ হাজার ৫০০ মানুষ ও ৬০০ শিশু এ আশ্রায়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী। তাদেরই একজন মাইজদিহি গ্রামের শিলা গুহ।
বীরাঙ্গনা শিলা তার নতুন ঘরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো প্রতিদিন আপনার জন্য বাতি জ্বালাই। আমার বোন যেন সুখী থাকে। আমার বোনকে যেন করোনাভাইরাস আক্রান্ত করতে না পারে। আমার বোন যেন হাজার বছর বাচেঁ- সেই কামনা করি।’
বীরাঙ্গনা শিলা গুহ বলেন, ‘আমি যুদ্ধের সময়েও ভাবতে পারিনি- যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ বয়সেও আমাকে দেখে রাখবে। তাই আমি ভীষণ ভীষণ খুশি হয়েছি তার প্রতি। বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার একটা দাবি- আমায় যে ঘর দিয়েছেন, সেই ঘরে একবার আসবেন। আমি আপনাকে সাতকরা দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়াব।’
বীরাঙ্গনা শিলার কথার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন। আমি যদি সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আপনার ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করব। আপনাদের যে অবদান, আত্মত্যাগ- সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। আত্মত্যাগ কিন্তু বৃথা যায় না। আপনারা যারা ঘর পেয়েছেন, সবাই ভালো থাকেন এই কামনা করি।’
এরপর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে উপকারভোগী জাহানারা বেগম আঞ্চলিক ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভাড়া ঘরে থেকে সন্তানদের লালন-পালন করেছি, পড়ালেখা করিয়েছি। অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেছি। অনেক সময় ভাড়া দিতে পারিনি। বাড়িওয়ালা গালিগালাজ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুঃখ বুঝেছেন, একটা ঘর করে দিছেন। আমি অনেক খুশি হইলাম, আমার ছেলে-মেয়ে খুশি।’
জাহানারা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহায্য করছেন, আল্লাহর সাহায্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় পাইবেন। আমাকে তিনি সুখী করলেন। আল্লায় তাকে (প্রধানমন্ত্রী) সুখী করবেন। আল্লার কাছে আমার এটাই প্রার্থনা।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব খুশি হলাম আপনার কথা শুনে। মানুষের মধ্যে যে আনন্দ, এটাই তো সব থেকে বড় পাওয়া। সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকবেন। সবাই দোয়া করবেন, দেশটা যেন করোনার হাত থেকে মুক্তি পায়। দেশটা যেন শান্তির দিকে এগিয়ে যায়। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।’
শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার উপকারভোগী তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘আগে আমার ঘর-বাড়ি ছিল না, বাপের বাড়িতে থাকতাম। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা ঘর উপহার দিয়েছেন। সেই ঘর পেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু ঘর নয়, আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি, পানি পেয়েছি। পাশে স্কুল-কলেজ আছে, ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে; অনেক সুবিধা। আমাদের ফল খাওয়ার জন্য গাছও দিয়েছে, আমরা গাছ লাগিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের শেরপুর এলাকায় আসবেন, দেখে যাবেন। আমার মাথায় যতোগুলো চুল আছে, আল্লাহ আপনাকে ততোদিন হায়াত দান করুন। আপনি ভালো থাকুন, আল্লাহ যেন আপনাকে ভালো রাখে। আমরা এখানে যারা ঘর পেয়েছি, সবাই আপনার জন্য দোয়া করি।’
তাসলিমা আরও বলেন, ‘যে ঘর দিয়েছেন, আমি কখনই ভাবি নাই আমি এ রকম ঘরে থাকতে পারব। এ রকম ঘর আমি কখনো দিতে পারতাম না। সেই ঘর পেয়ে আমি অনেক অনেক খুশি। আপনার পাশে যেন আমরা থাকতে পারি সব সময়, আমাদের খেয়াল খোঁজ-খবর রাখবেন। আমাদের ঘর দিয়েছেন, ঘরের জন্য আমাদের আর দুঃখ নেই। মানুষের জায়গায় আমাদের আর যাইতে হবে না। আমাদের জায়গাও দিয়েছেন, আমরা দলিলও পেয়েছি। আমরা সবাই খুশি হয়েছি।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুব খুশি হলাম, আপনারা ঘর পেয়ে ভালো আছেন। আপনারা ভালো থাকেন। ঘরের যত্ন নিয়েন সবাই। যে ঘরটা দিলাম, সে ঘরটার সবাই যত্ন নিয়েন।’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ইতিমধ্যে এক লক্ষ ২৩ হাজার ২৪৪ পরিবার জমিসহ সেমিপাকা ঘর পেয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ১০ লাখ মানুষ এ আশ্রয়ণের আওতায় আসবে।
দারিদ্র্য বিমোচন ও তৃণমূলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এটি বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এটি অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের ‘শেখ হাসিনা মডেল’। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৬২ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে।
রোববার (২০ জুন) আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে জমির মালিকানাসহ আধাপাকা ঘর দেয়া হয়েছে। এ বছরে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ পরিবারকে জমির মালিকানাসহ আধাপাকা ঘর দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে মোট প্রায় ১০ লাখ পরিবার আশ্রয়ণের আওতায় আসবে।