টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল

বন্যায় চরম বিপর্যয়ে খাগড়াছড়ি, ডুবেছে আশ্রয়কেন্দ্রও

  • Update Time : ০১:০০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • / 27

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চরম বির্পযয়ের মুখে খাগড়াছড়ি। রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম থেকে শহর।

সম্প্রতিকালে খাগড়াছড়ি শহর না ডুবলেও বৃহস্পতিবার সকালে থেকে তাও প্লাবিত শুরু করেছে। পানি প্রবেশ করছে মেরুং ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রেও। প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালার তিন ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম।

কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মাইনী নদীর পানি বাড়তে থাকায় এর মধ্যেই ডুবে গেছে জেলার বিভিন্ন সড়ক, কৃষি জমি ও পুকুর। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

বুধবার খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পানি কমতে শুরু করায় আশ্রয়কেন্দ্র থাকা অনেক পরিবার বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিল। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। সকালেই শহরের ভেতরে প্রবেশ করে বন্যার পানি।

আদালত সড়ক, মাস্টারপাড়া, মিলনপুর, বায়তুশরফসহ খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়ক এখন পানির নিচে। জেলা সদরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি।

পৌর শহরের বাসিন্দা আরাফুলত ইসলাম বলেন, “এতো পানি গত ১০ বছরেও দেখি নাই। শহরের মধ্যে সাধারণত পানি উঠে না। এবার শহরের প্রধান সড়কগুলোও ডুবে গেছে।”

আরেক বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন বলেন, টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টি আর নদীর পানি বেড়ে পৌরসভার গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমণি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল, শান্তিনগর, মুসলিম পাড়া পুরোপুরি পানির নিচে।

স্থানীয় মো. বেলাল হোসেন বলেন, কেবল খাগড়াছড়ি সদরের তিন হাজারের মতো পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে অনেকেই ফের আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।

এদিকে ফেনী নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে রামগড় পৌরসভাসহ নিচু এলাকা। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ।

মঙ্গলবার বিকাল থেকে সাজেক সড়কের কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ একাধিক অংশ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সাজেকে আটকা পড়েছেন অন্তত আড়াইশ পর্যটক।

পাহাড়ি ঢলে হেডকোয়াটার এলাকায় দীঘিনালা-লংগদু সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম। ডুবে গেছে মেরুং বাজার।

মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, “বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মাইনী নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

“এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রও ডোবা শুরু হয়েছে। মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের নীচতলা ডুবে গেছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ২৯টি পরিবারকে বিদ্যালয় ভবনে দ্বিতীয় তলায় তুলে দেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ির প্রথম শ্রেণি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে।

এদিকে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে তিনদিন ধরে রান্না করা খাবার বিতরণ করছে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।

জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ১৮টিসহ পুরো জেলায় ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media


টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল

বন্যায় চরম বিপর্যয়ে খাগড়াছড়ি, ডুবেছে আশ্রয়কেন্দ্রও

Update Time : ০১:০০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চরম বির্পযয়ের মুখে খাগড়াছড়ি। রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম থেকে শহর।

সম্প্রতিকালে খাগড়াছড়ি শহর না ডুবলেও বৃহস্পতিবার সকালে থেকে তাও প্লাবিত শুরু করেছে। পানি প্রবেশ করছে মেরুং ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রেও। প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালার তিন ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম।

কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মাইনী নদীর পানি বাড়তে থাকায় এর মধ্যেই ডুবে গেছে জেলার বিভিন্ন সড়ক, কৃষি জমি ও পুকুর। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

বুধবার খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পানি কমতে শুরু করায় আশ্রয়কেন্দ্র থাকা অনেক পরিবার বাড়ি ফিরতে শুরু করেছিল। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। সকালেই শহরের ভেতরে প্রবেশ করে বন্যার পানি।

আদালত সড়ক, মাস্টারপাড়া, মিলনপুর, বায়তুশরফসহ খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়ক এখন পানির নিচে। জেলা সদরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি।

পৌর শহরের বাসিন্দা আরাফুলত ইসলাম বলেন, “এতো পানি গত ১০ বছরেও দেখি নাই। শহরের মধ্যে সাধারণত পানি উঠে না। এবার শহরের প্রধান সড়কগুলোও ডুবে গেছে।”

আরেক বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন বলেন, টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টি আর নদীর পানি বেড়ে পৌরসভার গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমণি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল, শান্তিনগর, মুসলিম পাড়া পুরোপুরি পানির নিচে।

স্থানীয় মো. বেলাল হোসেন বলেন, কেবল খাগড়াছড়ি সদরের তিন হাজারের মতো পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে অনেকেই ফের আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।

এদিকে ফেনী নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে রামগড় পৌরসভাসহ নিচু এলাকা। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ।

মঙ্গলবার বিকাল থেকে সাজেক সড়কের কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ একাধিক অংশ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সাজেকে আটকা পড়েছেন অন্তত আড়াইশ পর্যটক।

পাহাড়ি ঢলে হেডকোয়াটার এলাকায় দীঘিনালা-লংগদু সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম। ডুবে গেছে মেরুং বাজার।

মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, “বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মাইনী নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

“এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রও ডোবা শুরু হয়েছে। মেরুং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের নীচতলা ডুবে গেছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ২৯টি পরিবারকে বিদ্যালয় ভবনে দ্বিতীয় তলায় তুলে দেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ির প্রথম শ্রেণি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে।

এদিকে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে তিনদিন ধরে রান্না করা খাবার বিতরণ করছে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।

জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ১৮টিসহ পুরো জেলায় ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।